ভাঙা নয়, মূল নকশায় ফিরছে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ভাস্কর্যটি 

মূল নকশা বামে ও তৈরি করা অঞ্জলি লহ মোর ভাস্কর্য
মূল নকশা বামে ও তৈরি করা অঞ্জলি লহ মোর ভাস্কর্য © টিডিসি সম্পাদিত

২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপন করা হয় কবি নজরুলের গানের নামে ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্য। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাস্কর্যটি ভাঙার তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। তবে ভাস্কর্যটি ভাঙা নয়, মূল নকশায় ফিরছে বলে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম। 

আজ বুধবার (১৮ জুন) বিকেলে তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের যে কয়েকটি দাবি ছিল সেগুলোর মধ্যে ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলার দাবি ছিল। কিন্তু আমরা অন্যান্য দাবিগুলো পূরণে উদ্যোগ নিলেও সেসময় ভাস্কর্যটি নিয়ে তখন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আমরা এখন এটি সংস্কারে কাজ হাত দিয়েছি। ভাস্কর্যটির মূল যে ডিজাইন ছিল, সেই ডিজাইনে এখন ফিরবে।

তিনি আরও বলেন, ভাস্কর্যটি যেভাবে তৈরি করার কথা ছিল, আগের প্রশাসন তা করেনি। তাই ৫ আগস্টের পর এটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়। বর্তমানে সেটি ভেঙে নতুন করে সংষ্কারের কাজে হাত দেওয়া হলে বিষয়টিকে ভিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা ভাস্কর্যটি সংস্কার করছি যেন জলাধারটির সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পায়। আজকেও ডিনস কমিটির একটি মিটিং ছিল, সেখানে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছর ৪ কোটি টাকার অধিক ব্যয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন পুকুরের সংস্কার কাজ শুরু হয়। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন বিজ্ঞান ও কলা অনুষদ ভবনের মাঝামাঝি অংশে পুকুরটির সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ভাস্কর্যটি স্থাপন করেছিলেন দুর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্যের দায়ে অভিযুক্ত তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। 

ম্যুরালটি একজন নারী দু’হাত সংযুক্ত করে অঞ্জলি দিচ্ছে, সেই ভাবনা বহন করতো। যেটি দেশের প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী, নৃত্যপরিচালক, নৃত্য প্রশিক্ষক ও অভিনেত্রী মুনমুন আহমেদের হাতের ছবি থেকে করেছিলেন ভাস্কর্যবিদ মনিন্দ্র পাল। তবে বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, ভাস্কর্যের যে নকশা ছিল তা তৈরি করার সময় পরিবর্তন করা হয়েছিল। তাই সেটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল, তার প্রেক্ষিতে মূল নকশায় ফিরতে কাজ করা হচ্ছে। 

আরো পড়ুন: টাইমস হায়ার ইমপ্যাক্ট র‍্যাঙ্কিংয়ে দেশের ২০ সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

এদিকে, ম্যুরাল ভাঙার একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করে মুনমুন আহমেদ নিজেই লিখেছেন, ‘খুবই দুঃখজনক, এই মুহূর্তে সেটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যুরাল অঞ্জলি লহ মোর! যেটি আমার হাতের ছবি থেকে করা হয়েছিল। এটি ভাস্কর্যবিদ মনিন্দ্র পাল করেছিলেন।’

বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়েই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র পুকুরের সৌন্দর্যবর্ধনের অংশ হিসেবে নির্মিত ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি ছিল নান্দনিক স্থাপনাগুলোর অন্যতম। প্রশাসন চাইলে নতুনভাবে পরিকল্পনা করে এটি রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নিতে পারতো। 

এ বিষয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী বলেন, এ বিষয়ে অনেক আগেই ডিনবৃন্দ ও সবাইকে নিয়ে একটা সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এটা সম্ভবত সেই সিদ্ধান্তের কারণেই হচ্ছে। তখন তো অনেকগুলো বিতর্কিত কর্মকাণ্ড হয়েছিল, কেউ কেউ ভাস্কর্যটি নিয়ে তীব্রভাবে আপত্তি জানিয়েছিল। ফলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।