৩০ লাখ টাকার স্কলারশিপে বিদেশে পড়তে যাচ্ছেন দারুননাজাতের আদনান

জোবায়ের আহমেদ আদনান
জোবায়ের আহমেদ আদনান © সংগৃহীত

মালয়েশিয়ার আল বুখারি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে স্কলারশিপ পেয়েছেন দারুননাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদ্রাসার মেধাবী ছাত্র জোবায়ের আহমেদ আদনান। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ‘ব্যাচেলর অব ইকোনমিকস’ বিষয়ে ৩০ লক্ষাধিক টাকা সমমানের ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ পেয়েছেন তিনি। কিশোর বয়সেই বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তিনি। নবম শ্রেণিতে থাকতে তথ্য সংগ্রহ করেন আদনান। একই সঙ্গে বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি নেন তিনি।

সম্প্রতি স্কলারশিপ নিয়ে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে কথা বলেন জোবায়ের আহমেদ আদনান। আলাপকালে তিনি জানান, কীভাবে শুরু হয়েছিল তার স্কলারশিপ জার্নি আর কীভাবে তিনি সাফল্য পান।

জোবায়ের আহমেদ আদনান জানান, দুই কাজিনকে দেখেই মূলত বিদেশে উচ্চশিক্ষার আকাঙ্ক্ষা জন্মে তার মধ্যে। তার দুই কাজিন বিদেশে উচ্চশিক্ষা শেষ করে সেখানেই ভালোভাবে স্থায়ী হয়েছেন। তাদের একজন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (BUET) থেকে স্নাতক সম্পন্ন করার পর যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে (Florida State University) মাস্টার্স ও পিএইচডি শেষ করেন। তিনি বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব নর্থ আলাবামায় (University of North Alabama) কর্মরত। অপরজন জাপানে হিরোসাকি ইউনিভার্সিটি (Hirosaki University) ও ইওয়াতে ইউনিভার্সিটিতে (Iwate University) পিএইচডিতে শেষ করে সেখানে কাজ করছেন।

পাবনা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে আদনান জিপিএ-৫ পান। তার সব বিষয়ে মোট নম্বর ছিল ৯৫ শতাংশের বেশি। আলিম পরীক্ষায়ও আদনান জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। আর সব বিষয়ে মোট নম্বর পেয়েছিলেন প্রায় ৯১ শতাংশ। অর্থনীতি বিষয়ে তার নম্বর ছিল ৯৫ শতাংশের বেশি। সেই সঙ্গে মাদ্রাসা বোার্ডে উল্লেখযোগ্য মেধাতালিকায় ছিলেন ও বৃত্তি পান তিনি।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে আল বুখারি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করেন আদনান। এরপর ২৯ জানুয়ারি সাক্ষাৎকারের সুযোগ পান। সাক্ষাৎকারটি সন্তোষজনক হলে ২৫ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় তাকে অফার লেটার ও স্কলারশিপ লেটার পাঠায়।

ধর্মীয় দিক বিবেচনা করে অমুসলিম দেশে যাওয়ার ইচ্ছা না করে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়াকেই বেছে নিয়েছেন আদনান। এ ছাড়া মালয়েশিয়ার শিক্ষার মানও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেক গ্রহণযোগ্য। তাই অন্য কোনো দেশে আবেদন করেননি তিনি।

আল বুখারি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

বিশ্ববিদ্যালটিতে স্কলারশিপে পাওয়া সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে আদনান জানান, আল বুখারি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করার ক্ষেত্রে আইইএলটিএস (IELTS) আবশ্যক না হলেও ভর্তির সময় তা আবশ্যক। তবে কেউ যদি আইইএলটিএস না করেন, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় তাদের পক্ষে এক বছর ভাষা কোর্স করার সুযোগ ও খরচ বহন করে। সেই সঙ্গে আইইএলটিএসের ফি-ও দিয়ে থাকে। আদনান বিনা আইইএলটিএসে আবেদন করেছিলেন বলেই তাকে শর্তসাপেক্ষে অফার লেটার দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ দেশে বসে যদি তিনি আইইএলটিএস দিতে সক্ষম হন, তাহলে সরাসরি ব্যাচেলর অব ইকোনমিকসে এনরোল হবেন। না হলে এক বছর ভাষা কোর্স সম্পন্ন করে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচে আইইএলটিএস দেওয়ার সুযোগ পাবেন। উল্লেখ্য, এই এক বছর ভাষা ও আবাসন খরচ এবং মাসিক উপবৃত্তিও বিশ্ববিদ্যালয় বহন করবে।

এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টি আবেদনকারীর অ্যাকাডেমিক যোগ্যতা, সহশিক্ষা কার্যক্রম, সামাজিক সচেতনতা ইত্যাদি দেখে স্কলারশিপ প্রদান করে। যাদের আইইএলটিএস রয়েছে, তাদের তিন বছর এবং যাদের নেই তাদের চার বছর পর্যন্ত স্কলারশিপ দেওয়া হয়। মালয়েশিয়ায় ব্যাচেলর সম্পূর্ণ করতে সাধারণত তিন বছর সময় লাগে, যা বাংলাদেশের মান থেকে আলাদা।

আদনান জানান, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে একজন শিক্ষার্থীর টিউশন ফি দিতে হয় প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ হাজার মালয়েশিয়ান রিংগিত (MYR), যা আদনানের জন্য সম্পূর্ণ মওকুফ করা হয়েছে। এর বাইরে আবাসন খরচ হিসেবে মাসে ৩০০ রিংগিত (মোট ১৪ হাজার ৪০০ রিংগিত এবং খাওয়া ও অন্যান্য খরচ হিসেবে মাসে ৪৫০ রিংগিত (মোট ২১ হাজার ৬০০ রিংগিত) দেওয়া হবে তাকে। অর্থাৎ আদনানের পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়টির টিউশন ফি ও মাসিক উপবৃত্তিসহ মোট ৩০ লাখ টাকার বেশি অর্থায়ন রয়েছে।

দেশে বসে যদি তিনি আইইএলটিএস দিতে সক্ষম হন, তাহলে সরাসরি ব্যাচেলর অব ইকোনমিকসে এনরোল হবেন। না হলে এক বছর ভাষা কোর্স সম্পন্ন করে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচে আইইএলটিএস দেওয়ার সুযোগ পাবেন। উল্লেখ্য, এই এক বছর ভাষা ও আবাসন খরচ এবং মাসিক উপবৃত্তিও বিশ্ববিদ্যালয় বহন করবে।

পাবনা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে আদনান জিপিএ-৫ পান। তার সব বিষয়ে মোট নম্বর ছিল ৯৫ শতাংশের বেশি। আলিম পরীক্ষায়ও আদনান জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। আর সব বিষয়ে মোট নম্বর পেয়েছিলেন প্রায় ৯১ শতাংশ। অর্থনীতি বিষয়ে তার নম্বর ছিল ৯৫ শতাংশের বেশি। সেই সঙ্গে মাদ্রাসা বোার্ডে উল্লেখযোগ্য মেধাতালিকায় ছিলেন ও বৃত্তি পান তিনি।

আদনানের গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার হাবাসপুর গ্রামে। তার বাবা-মা দুজনই শিক্ষক। তাদের কর্মজীবনের সূত্রে শুরু থেকেই পাবনায় বসবাস করতেন তিনি। ফলে আদনানের জন্মও পাবনায় হয়েছে। জীবনের বেশির ভাগ সময় পাবনা সদরেই কেটেছে তার।

আদনান বলেন, ‘আমার আব্বু-আম্মু দুজনই বেশ দ্বীনদার। তাদের কল্যাণেই আমার বাল্যকাল মুখর ছিল দ্বীনের ইলমচর্চায়। আলিম পর্যন্ত আমি দ্বীনি ইলমচর্চায় নিজেকে উৎসর্গ করি। পরে বুঝতে পারি, নির্যাতিত মুসলিম উম্মাহ ও আমাদের সমাজের বৈষষ্যের মূলোৎপাটনে প্রয়োজন দ্বীনি ও দুনিয়াবি জ্ঞানের ভারসাম্য। যেহেতু একটি জাতি ও সমাজের চালিকাশক্তি অর্থনীতি, তাই এ বিষয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জনে মনোনিবেশ করি।’

ভবিষ্যৎ ভাবনা নিয়ে আদনান বলেন, ‘আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা একটি গবেষণানির্ভর ক্যারিয়ার গঠন করা। যাতে আমি আমার গবেষণার মাধ্যমে দেশ ও বিশ্বব্যাপী আর্থসামাজিক উন্নয়নে অগ্রগামী ভূমিকা রাখতে পারি।’

যারা স্কলারশিপে দেশের বাইরে যেতে আগ্রহী তাদের উদ্দেশে আদনান বলেন, ‘যারা মাদ্রাসার অনুজ শিক্ষার্থী আছে, দ্বীনের ইলম অর্জনে নিয়োজিত আছে, তাদের জানাতে চাই, মাদ্রাসায় পড়েও সমাজের যেকোনো স্তরে কঠোর পরিশ্রম ও ত্যাগের মাধ্যমে অবস্থান করে নেওয়া যায়। শুধু আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া এবং সব সময় নিজের সেরাটা দেওয়ার অভ্যাস তাদের দুনিয়া-আখিরাতে সবখানেই জিতিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।’

তিনি আরও বলেন, কেউ যদি আমল ঠিক রেখে দ্বীনকে দুনিয়ার ওপরে প্রাধান্য দেন, মা-বাবা, ওস্তাদদের আনুগত্য করেন, সব ধরনের ফিতনা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখেন; ফলস্বরূপ দুনিয়াবি সফলতা তাদের কদমতলে আপনা-আপনি আসবে। ইনশাআল্লাহ।