ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে নিতে সাবেক ছাত্রদল নেতার গুলি, আহত যুবদল কর্মীর মৃত্যু

নিহত যুবদল কর্মী মামুন ভূঁইয়া
নিহত যুবদল কর্মী মামুন ভূঁইয়া © সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতে আটক নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের এক নেতাকে ছাড়িয়ে নেওয়া সময় বিএনপির দুই পক্ষের গোলাগুলির ঘটনায় আহত এক যুবদল কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (১০ জুন) রাত সোয়া ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এর আগে বিকেলে মাঝিপাড়া এলাকায় এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের একপর্যায়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক প্রচার সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম বাবু অন্তত পাঁচটি গুলি ছোড়েন। এ ঘটনায় বাবুকে প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধও জানানো হয়েছে।

নিহত ব্যক্তির নাম মামুন ভূঁইয়া (৩৫)। তিনি রূপগঞ্জের ভুলতা মাঝিপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী ছিলেন। তার ভাই বাদল ভূঁইয়া ভুলতা ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক। মামুনও যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক ফারুক।

জানা গেছে, গতকাল বিকেলে রূপগঞ্জ উপজেলার মাঝিপাড়া এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতে আটক হন ভুলতা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাব্বির হোসেন। সেখানে বাদল ভূঁইয়ার অনুসারীরাও ছিলেন। তারা ছাত্রলীগের ওই নেতাকে বাদলের বাড়ির দিকে নিয়ে যেতে চান। ওই সময় সেখানে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে উপস্থিত হন নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক প্রচার সম্পাদক বাবু। এ সময় সাব্বিরকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে বাবু ও তার লোকজনের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান বাদলের পক্ষের লোকজন।

সংঘর্ষের একপর্যায়ে বাবু অন্তত পাঁচটি গুলি ছোড়েন। এতে মামুন গুলিবিদ্ধ হন। পরে লোকজনের ধাওয়া খেয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান বাবু। পরে মামুনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ছাড়া আগে সাব্বিরকে উদ্ধার করে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি করা হয়েছে। তিনি আগেই গণপিটুনির শিকার হয়েছিলেন।

স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, রূপগঞ্জে বিএনপির কর্মী–সমর্থকদের মধ্যে বিভক্তি আছে। একটি অংশের নেতৃত্ব দেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু ও অন্যটির নেতৃত্বে আছেন দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান। বাদল হোসেন মোস্তাফিজুর পক্ষের অনুসারী ও বাবু মাহবুবুর পক্ষের অনুসারী। স্থানীয়ভাবে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বাবুর সঙ্গে বাদলের সমর্থকদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ আছে।

এ বিষয়ে বাদল ভূঁইয়া বলেন, বাবুর চাচা মাহবুবুর রহমান জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক। বাবু নিজেও ছাত্রদল নেতা। চাচার প্রভাবে ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। এলাকার ছাত্রলীগ-যুবলীগের ক্যাডারদের আশ্রয় দিয়ে তাদের সব অস্ত্র নিজের হাতে নিয়েছেন বাবু। এলাকায় তিনি ‘বাবু বাহিনী’ গড়ে তোলে মাদক ও চাঁদাবাজির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গতকাল এলাকাবাসীর হাতে আটক ওই ছাত্রলীগ নেতা (সাব্বির) বাবু বাহিনীর ক্যাডার।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত বাবু বলেন, আমি শুনেছি ছাত্রলীগের সাব্বিরকে লোকজন ধরছিল। সেখানে গোলাগুলি হইছে। কিন্তু আমি সেখানে ছিলাম না৷ আমি বাসায় ছিলাম।

রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন,এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ ব্যক্তি মারা গেছেন বলে জেনেছি। এই ঘটনায় রাতেই একটি মামলা হয়েছে। হাসপাতাল থেকে মৃত্যুর কাগজপত্র পেলে আদালতে আবেদনের মাধ্যমে মামলাটিতে হত্যার ধারাও যুক্ত হবে।

এদিকে গতকালের ঘটনায় আটক ছাত্রলীগ নেতা সাব্বিরকে পুলিশের হেফাজতে রয়েছে বলেও জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, স্থানীয় লোকজন তাকে মারধর করে পা ভেঙে দিয়েছে। সে এখন পঙ্গু হাসপাতাল চিকিৎসাধীন। চিকিৎসা শেষ হলে আদালতে পাঠানো হবে।

সাবেক নেতাকে ছাত্রদল থেকে বহিষ্কার, আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ
নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সাবেক প্রচার সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম বাবুকে প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয়  ছাত্রদল। ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন। আজবুধবার (১১ জুন) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক (সহসভাপতি পদমর্যাদা) মো. জাহাঙ্গীর আলমের সই করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, কেন্দ্রীয় সংসদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সাবেক প্রচার সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম বাবুকে প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হলো।

নেতাকর্মীদের সতর্ক করে সংগঠনটি বলছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির আজ এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন এবং জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের তার সঙ্গে কোনোরূপ সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, একই সঙ্গে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জাহিদুল ইসলাম বাবুর বিষয়ে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ এবং অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার অনুরোধ জানান।