চামড়ার টাকা গরিবের হক: এর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
- ১০ জুন ২০২৫, ১৯:৫৯
ঈদুল আজহা কেবল কোরবানির উৎসব নয়, এটি আত্মত্যাগের মহৎ শিক্ষা দেয়। ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে, কোরবানির অংশ হিসেবে চামড়ার যে অর্থমূল্য রয়েছে, তা গরিব-দুঃখীদের হকের আওতায় পড়ে। অথচ আমাদের সমাজে প্রতিবছর ঈদের পর চামড়ার বেহাল দশা দেখে মনে হয়, এ হক রক্ষার প্রতি আমাদের যত্নে বড় ঘাটতি রয়ে গেছে।
চামড়ার সঠিক সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিক্রি যদি সময়মতো না হয়, তাহলে তা অতি সহজেই পচে নষ্ট হয়ে যায়। ঈদের দিন কিংবা পরদিন শহর-গ্রামের রাস্তাঘাটে চামড়ার স্তূপ পড়ে থাকতে দেখা যায়—কখনো মাটি চাপা পড়ে, কখনো কুকুরে টানে, কখনো আবার কেউ দাম না পেয়ে ফেলে দেয়। অনেক সময় অনেকে চামড়া সংগ্রহ করে বিক্রি করতে পারেন না, কারণ তারা জানেন না কোথায় বিক্রি করবেন, অথবা প্রাথমিকভাবে সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় লবণ পর্যন্ত মেলে না।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ঈদুল আজহার সময়ে দেশে প্রায় এক কোটি পশু কোরবানি হয়, যার একটি বড় অংশের চামড়া বিক্রির অর্থের উপর অনেক এতিমখানা, মাদ্রাসা ও দাতব্য সংস্থা নির্ভরশীল। চামড়া নষ্ট হওয়া মানে শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, এটি এক ধরনের হক নষ্টও বটে। তাহলে এখন প্রশ্ন আসে সমাধান কী?
প্রথমত, স্থানীয় সরকার এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহকে আগেভাগেই সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিতে হবে। কোরবানির আগেই মানুষকে জানাতে হবে চামড়া সংরক্ষণের সহজ ও বাস্তবসম্মত উপায়, যেমন—প্রতিটি কোরবানি কেন্দ্রের পাশে লবণ বিতরণ কেন্দ্র চালু করা যায়।
দ্বিতীয়ত, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে চামড়া সংগ্রহে স্বচ্ছতা আনা সম্ভব। যারা চামড়া সংগ্রহ করেন, তারা যেন অনুমোদিত সংস্থার হয়ে কাজ করেন—সেটি নিশ্চিত করা দরকার।
তৃতীয়ত, ওয়াকফ চামড়া ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় প্রশাসনের তত্ত্বাবধান এবং প্রতিবেদনভিত্তিক জবাবদিহি চালু করা যেতে পারে। গরিবের হক যেন দালালচক্রের হাতে পড়ে নষ্ট না হয়, সেটাই সবচেয়ে বড় বিষয়।
আমাদের মনে রাখতে হবে, চামড়ার টাকা কেবল টাকাই নয়—এটা একটি আমানত। এ অর্থের ওপর হয়তো কোনো এতিমের স্কুলের বেতন কিংবা কোনো গরিব শিশুর নতুন জামার আশার ভরসা রয়েছে। সেই অর্থ যদি অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি বা উদাসীনতায় হারিয়ে যায়, তবে কেবল অর্থনৈতিক ক্ষতিই নয়, মানবিকতারও অপচয় ঘটে।
এবারের ঈদে আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব, আমরা যেন সেই হক আদায়ে সচেতন থাকি। চামড়া বিক্রির অর্থ যেন পৌঁছায় সঠিক গন্তব্যে—সেটাই হোক এবারের কোরবানির অন্যতম শিক্ষা।
লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়