বিদেশের মাটিতে ঈদের খুশি: কুবিয়ানরা কীভাবে কাটাচ্ছে ঈদুল আজহা ?

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় © টিডিসি

সকালটা অনেক শান্ত। নেই বাসার উঠোনে গরুর ডাক, নেই ঈদের আগের রাতে বাবার সঙ্গে হাটে যাওয়ার উত্তেজনা। ঈদের নামাজ শেষে বাড়ি ফিরে মায়ের হাতের শিরনি, সেমাই, আর মাংসের গন্ধও নেই। তবুও হাজার হাজার মাইল দূরে বসে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরা তাদের মতো করে খুঁজে নিচ্ছেন আনন্দ, খুঁজে নিচ্ছেন নিজেদের ‘মায়ের।

ডেনমার্কে চাকরিরত কুবির বাংলা বিভাগের অ্যালামনাই শিক্ষার্থী সিফাত ফাইয়েজ বলেন, ছোটবেলায় বা বড়ো হয়ে দেশে থাকা অবস্থায় বাবা-চাচা, ভাইদের সাথে গরুর হাটে যাওয়া, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ঘুরা, পরিবার-পরিজনের বাসায় যাওয়া এখন সবই অতীত। বিদেশে ভিন্ন কালচার, ভিন্ন পরিবেশ দেশের ঈদের আমেজটুকু একদম নেই। একটু তো খারাপ লাগে তবু আলহামদুলিল্লাহ। দেশের অকেশনাল সবকিছুই মিস করি।

বর্তমানে জার্মানির ডার্মস্টাট অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত এবং কুবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অ্যালামনাই এম. ডি. আকতার হোসেন স্মৃতির পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে বিদেশে একাকী ঈদ উদ্‌যাপন নিয়ে বলেন, জার্মানির আকাশ আজ পরিষ্কার, কিন্তু মনটা ভার। ঈদের এই দিনে যখন চারপাশে সবাই প্রিয়জনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করছে, আমি দাঁড়িয়ে থাকি একা, ব্যালকনিতে—এক কাপ চা হাতে।

ফোন স্ক্রিনে ভেসে ওঠে ভাইয়ের কান্না ভেজা চোখ, বাড়ির উঠোন, সেই পুরোনো জানালা। মনে পড়ে মায়ের মুখ—যিনি আজ আর নেই। একসময় ঈদের আগের রাত মানেই ছিল ভাইদের সঙ্গে জামা গুছানো, সেমাইয়ের ঘ্রাণ, আর নামাজ শেষে পাড়ার কোলাকুলি। আজ প্রবাসে সবটাই নীরব। মসজিদে নামাজ শেষে কারও সঙ্গে চোখে চোখ পড়ে না, কোলাকুলি তো আরও দূরের বিষয়।

তিনি আরও বলেন, এখানকার ঈদ মানে স্মৃতির খাঁচায় বন্দি এক বুক কান্না, কিছু ডিজিটাল “ঈদ মোবারক” আর একাকী দুপুরে নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা। তবুও আমি ভেঙে পড়ি না। এই কষ্ট, এই ত্যাগ- একদিন সার্থক হবে। ফিরে যাব সেই চেনা উঠোনে, নতুন জামার ঘ্রাণে আবার ভরে উঠবে মন- এই আশাতেই টিকে থাকি।

লিথুনিয়ার ভিলনিয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত এবং কুবির আইন বিভাগের অ্যালামনাই কামরুল হাসান ঈদ-উল-আযহা উদ্‌যাপন নিয়ে অনুভূতি ব্যক্ত করেন, বিদেশে ঈদের কোনো অনুভূতি নেই বললেই চলে। দেশে যেমন পরিবার, প্রতিবেশীদের সাথে উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদের নামাজ পড়া,কবর জিয়ারত করা,গরু কোরবানি ও মাংস বিতরণ করা ও বন্ধুদের সাথে ঈদ আড্ডা জমে উঠতো ; এখানে তার কিছুই নেই। আর ৫টা সাধারণ দিনের মতোই এখানে ঈদের দিন অতিবাহিত হচ্ছে।তাই ঈদ উল আজহার এই দিনে পরিবার, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও দেশের উৎসবমুখর আবহ ভীষণ মিস করছি।