ঈদ মানে শুধু ধর্ম নয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক উপলব্ধিরও দিন

ববি শিক্ষার্থীদের ঈদ ভাবনা
ববি শিক্ষার্থীদের ঈদ ভাবনা © টিডিসি

ঈদুল আজহা—মুসলিম উম্মাহর কাছে ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর এক পবিত্র দিন। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণে এটি কেবল কোরবানির সময় নয়, বরং আত্মত্যাগ, ভালোবাসা আর ঈমানের পরীক্ষার এক অনন্য উপলক্ষ। তবে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণ-তরুণীদের কাছে এই দিনটির তাৎপর্য আরও বহুমাত্রিক। তারা এ সময় শুধু পশু নয়, ত্যাগ করেন তাদের প্রিয় ক্যাম্পাস, প্রিয় বন্ধু ও স্বাভাবিক জীবনের ধারাবাহিকতা—সব কিছু পেছনে ফেলে ছুটে যান নাড়ির টানে, নিজের আপন ঠিকানায়।

এই নীরব ত্যাগের বিনিময়ে আসে এক অফুরন্ত আনন্দের সূচনা। দেখা হয় শৈশবের বন্ধুদের সঙ্গে, জড়িয়ে ধরা হয় বাবা-মায়ের হাতে, মিলিত হওয়া যায় আপনজনের সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের জটিলতা আর ক্লান্তির মাঝে ঈদ আসে এক কোমল ছায়া হয়ে—যেখানে সম্পর্ক, স্মৃতি ও স্বপ্নের এক সুন্দর সমবেত উৎসব।

ববিসাসের শুভেচ্ছা ও প্রত্যাশা

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (ববিসাস) সভাপতি জাহিদ আনাফ বলেন, “সকল শিক্ষার্থীর প্রতি ববিসাসের পক্ষ থেকে অগ্রিম ঈদের শুভেচ্ছা। গত এক মাস শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির আন্দোলনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছিল। তবে নতুন উপাচার্যের আগমনে আমরা আশাবাদী—সেশনজট নিরসন, প্রশাসনিক জটিলতা দূরীকরণ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুস্থ সম্পর্ক গঠনে তিনি কার্যকর ভূমিকা রাখবেন। ববিসাস সবসময় বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রেখেই শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবে।”

এক ঈদে চার উপাচার্য! শিক্ষার্থীর উদ্বেগ ও দুঃখ

গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ফয়সাল বলেন, “সবাইকে অগ্রিম ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা। ঈদ মানেই প্রিয় জিনিস আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ত্যাগ করা। এবার ঈদের আগেই বরিশালের ভোলাবাসীরা ভেড়িবাঁধ ভেঙে অনেক কিছু হারিয়েছেন—জীবন, বসতভিটা, স্বপ্ন। এমনকি আমরা একটি শিশু হারিয়েছি বালুর চাপায়, যা অত্যন্ত মর্মান্তিক।
অন্যদিকে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি সেমিস্টারে চারজন উপাচার্য দেখেছি, যার মধ্যে তিনজনকে ‘ত্যাগ’ করতে হয়েছে। এটা খুবই উদ্বেগজনক ও শিক্ষার পরিবেশের জন্য অশনি সংকেত।”

ঈদের আনন্দ বনাম অ্যাসাইনমেন্টের চাপ

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আরিফুল রহমান অনিক বলেন, “ঈদ মানেই বড় মাপের খুশির দিন, আর ঈদুল আজহা মানেই নামাজ শেষে বাবা-মায়ের সঙ্গে পশু কোরবানির অনন্য অনুভব। সেই মুহূর্তগুলো ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। তবে ঈদের সময়টা আমাদের জন্য শুধু আনন্দ নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশনসহ নানান চাপ থেকে সাময়িক মুক্তিরও সুযোগ।”

ঈদ মানে শুধু ধর্ম নয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক উপলব্ধিরও দিন

গণিত বিভাগের আরও একজন শিক্ষার্থী সিয়াম আহমেদ বলেন, “সবার প্রতি রইল ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ কেবল ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং এটি একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐক্যের মাধ্যম। আজকের বাংলাদেশে ঈদ উদযাপন নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় ভিন্ন অর্থ বহন করে। স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর এটাই দ্বিতীয় ঈদ, তাই স্বাভাবিকভাবেই জনগণের আশাবাদ বাড়ছে।

তবে দুঃখজনকভাবে বলতে হয়, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আন্দোলন এখন আমাদের নিত্যদিনের অংশ হয়ে গেছে। মুক্ত ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে দরকার একটি দক্ষ সরকার ও নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ। নতুন চিন্তাধারায় গড়ে উঠুক নতুন বাংলাদেশ—যেখানে থাকবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, অধিকারবোধ, নিরাপত্তা, এবং একটি সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি। এমন স্বপ্নেই হোক আমাদের ঈদ উদযাপন।”

সম্পর্কের টানে ফেরা, স্বপ্ন নিয়ে ফেরা

বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের নানান চড়াই-উতরাইয়ের মাঝে ঈদের এই ছুটির দিনগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য হয়ে ওঠে স্নেহ, মমতা ও সম্পর্কের বন্ধন পুনর্গঠনের এক পরম উপলক্ষ। দূরদূরান্ত থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা ঈদের এই বিরতিতে ফিরে যান আপন ঠিকানায়। আর যখন তারা ফিরেন ক্যাম্পাসে, সঙ্গে নিয়ে আসেন নতুন স্বপ্ন, নব উদ্যম আর সম্পর্কের পরিপূর্ণতা।