ছুরি-বটির ধারেই ঈদের আনন্দ, কর্মচাঞ্চল্যে মুখর কামারপল্লি

কর্মচাঞ্চল্যে মুখর কামারপল্লি
কর্মচাঞ্চল্যে মুখর কামারপল্লি © টিডিসি

পবিত্র ঈদুল আজহা দরজায় কড়া নাড়ছে। আর মাত্র দু’দিন পর কোরবানির উৎসব। শহরের বাজারগুলোতে যেমন চলছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটার ধুম, তেমনি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার কামারপল্লিগুলোয় বইছে এক ভিন্নধর্মী কর্মচাঞ্চল্য। লেলিহান আগুনে গরম হচ্ছে লোহা, আর হাতুড়ির ঠুকঠাক শব্দে প্রকম্পিত হচ্ছে কামার দোকানগুলো। এই শব্দ যেন গ্রামের পর গ্রাম জুড়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে ঈদের আগমনী বার্তা।

উপজেলার ছত্তারহাট, বটতলী রুস্তমহাট, চাতরী চৌমুহনী, মহাল খান বাজার, জুঁইদন্ডী, মালঘর, জয়কালী বাজার, গহিরা দোভাষীহাট ও সরকারহাট এলাকার কামারপল্লিগুলো এখন যেন রূপ নিয়েছে ক্ষুদ্র শিল্পকারখানায়। কোরবানির ঈদকে ঘিরে কামাররা দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কেউ তৈরি করছেন নতুন দা, ছুরি, বটি ও চাপাতি; আবার কেউ পুরোনো যন্ত্রপাতিগুলো শান দিয়ে করছেন ধারালো।

প্রতিটি কামার দোকানে কয়েকজন দক্ষ কারিগর ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ মূল চুলায় লোহা গরম করছেন, কেউ রেত দিয়ে ঘষে তৈরি করছেন ধার, আবার কেউ হাতুড়ির ছন্দময় আঘাতে গড়ে তুলছেন কাঙ্ক্ষিত অস্ত্রের অবয়ব। শ্রম আর শৈল্পিকতার অপূর্ব সম্মিলন ফুটে উঠছে এসব দৃশ্যে।

কামাররা জানান, কোরবানির ঈদের আগের এই সময়টিই বছরের সবচেয়ে ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ মৌসুম। বছরের অন্য সময়ে কাজ কম থাকলেও এই ঈদ ঘিরে বাড়তি আয় হয়, যা পরিবারের মুখে হাসি ফোটায়।

একটি মানসম্পন্ন ছুরি তৈরি করতে সময় লাগে প্রায় দুই ঘণ্টা। উত্তপ্ত লোহাকে পেটানো, ঘষা-মাজা, ধার দেওয়া এবং নোনাজলে ডুবিয়ে প্রস্তুত করা হয় একেকটি নির্ভরযোগ্য ছুরি। স্প্রিং লোহা দিয়ে তৈরি ছুরিগুলো সবচেয়ে টেকসই ও দামী হওয়ায় এদের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।

কেউ আসছেন নতুন দা বা ছুরি তৈরির জন্য, কেউবা পুরোনো অস্ত্র শান করাতে। আনোয়ারা জয়কালী বাজারের এক কামার জানান, এবারে পুরোনো যন্ত্রপাতি শান দেওয়ার কাজ তুলনামূলকভাবে বেশি হচ্ছে। ক্রেতার চাপ বেড়ে যাওয়ায় অনেক দোকানেই কাজ চলছে রাত জেগে। তবুও ক্লান্তির চিহ্ন নেই—সবার মুখেই দেখা যাচ্ছে আত্মতৃপ্তির হাসি।

এই কামারদের কাছে ঈদের আনন্দ আসে অন্যরকমভাবে— আগুনের তাপ, লোহা গলানোর শব্দ আর ঘামের গন্ধে ভেজা নিরলস শ্রমের মধ্য দিয়ে। ছুরির ধার আর কোরবানির রক্তের লালিমায় মিশে থাকে তাদের নীরব সংগ্রাম আর সৃজনশীলতা।