যশোরের ১৯ হাটে চাহিদার তুলনায় পশু বেশি, বিক্রিতে ভাটা 

কোরবানির পশুর হাট
কোরবানির পশুর হাট © টিডিসি

কোরবানির ঈদ সামনে রেখে যশোরে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। জেলার ১৯টি পশু হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। তবে হাটে ক্রেতার ভিড় থাকলেও বাড়েনি বিক্রি। হাটে ছোট, মাঝারি ও বড় আকারের গরু ছাগল মিলছে। ২০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে কোরবানির পশু। হাটে আসা পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় মেডিকেল টিম কাজ করছে। হাটে নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনায় নেয়া হয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ। ইজারাদারদের পক্ষ থেকে পুরো হাট সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি রয়েছে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। জাল টাকা শনাক্তে রয়েছে বিশেষ মেশিন।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস তথ্য মতে, যশোর জেলায় ৮ উপজেলায় মোট ১৯ টি পশুহাট বসছে। এসব হাটের মধ্যে সদর উপজেলায় ৫টি। ঝিকরগাছায় ১টি, শার্শায় ১টি, মণিরামপুরে ৩টি, কেশবপুরে ২টি, অভয়নগরে ২ টি, বাঘারপাড়ায় ৪ টি ও চৌগাছায় একটি হাট বসছে। এছাড়াও এ বছর জেলায় কোরবানি উপযোগী পশু রয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৭৪ টি। পশু চাহিদা রয়েছে ৯৫ হাজার ৮১২টি। চাহিদার তুলনায় ১৮ হাজার ৭৬২টি পশু বেশি। গবাদি পশুর মধ্যে ২৯ হাজার ৫’শ ৫৬টি ষাঁড়, ৭’শ ৫৪টি বলদ, ৪ হাজার ৯২৮টি গাভী, ৯৫টি মহিষ, ৭৮ হাজার ৫শ’ ৫৮টি ছাগল এবং ৫শ’ ৮৩টি ভেড়া।

সরেজমিনে যশোরের কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা যায়, হাটে রয়েছে ছোট-বড় নানা আকারের গরু-ছাগল। গরুর তুলনায় ক্রেতা কিছুটা কম এমনটাই দাবি বিক্রেতাদের। ক্রেতারা দামাদামি করলেও দামে হচ্ছে না। আবার বিক্রেতাদেরও আশা অনুরুপ দাম না হওয়ায় পশু বিক্রি করতে পারছে না। গরুর হাটে  আইনশৃংখলা বাহিনী এবং চিকিৎসকেরাও তৎপর রয়েছে।

ব্যবসায়ী নুরুজ্জামান বলেন, হাটে ৫টি গরু আনছি। আজ তেমন কোন বিক্রি নেই। গত হাটে ভালো বিক্রি হয়েছিল। দর কষাকষি হলেও কাঙ্খিত দাম মিলছে না। এখন পর্যন্ত একটা গরু বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকায়। এ বছর গরু বেশি, কিন্তু ক্রেতা কম।

ব্যবসায়ী আব্দুর জব্বার বলেন, কোন বেচা-কেনা নেই। এ বছর গরুর বাজারে খুব চাপ। যা দিয়ে কিনছি তাও বলছে না। ৪টি গরু আনছি। কিন্তু হাট শেষ পর্যায় একটাও বিক্রি করতে পারিনি। একটা গরু এক লাখ ৬০ হাজার বলছে কিন্তু কিনা দাম পেলে ছেড়ে দিব।

গৌতম মন্ডল নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, গরু কেনা এক লাখ ৯৫ হাজার টাকায়। অথচ ক্রেতা দাম বলছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। তাহলে আমরা কিভাবে ব্যবসা করব। তবে আশা করি ঈদের আগে দু’হাট ভালো বিক্রি হবে।

রবিউল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও আমরা কয়েকজন মিলে কোরবানি দিব। আজকের হাটে ভালোই গরু উঠছে। এ বছর দামও তুলনামূলক কম মনে হচ্ছে। তারপরেও দেখছি পছন্দ হলেই গরু কেনার ইচ্ছা আছে।

আরেক ক্রেতা মিজানুর রহমান বলেন, আমি যশোর শহর থেকে আসছি। হাটে দেখছি গরুর পরিমাণ অনেক বেশি। মনে হচ্ছে দামও কম। তাই ঘুরে ঘুরে দেখছি। আরও কয়েকটি হাট পাওয়া যাবে তো তাই তেমন কোন চিন্তা নেই। 

খাজুরা পশুহাট ইজারাদার রবিউল ইসলাম বলেন, হাটে জমজমাট পরিবেশ তৈরি হলেও বেচাকেনা কম। ক্রেতা থাকলেও  নেই তেমন বেচা-কেনা। আশা করি সামনে বিক্রি আরও বাড়বে। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের নিরাপত্তায় আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি।

এ বিষয়ে  জেলা প্রণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রাশেদুল হক বলেন, যশোরে কোরবানিতে চাহিদার তুলনায় ১৮ হাজার পশুর উৎপাদন বেশি। ফলে এ বছর পশুর সংকট হবে না। জেলার চাহিদা পূরণ করে অন্য জেলায় সরবরাহ করা হবে। আমাদের সমস্য হচ্ছে দাম কম হলে ক্রেতা খুশি, আবার দাম বেশি হলে বিক্রেতারা খুশি। তবে আমাদের লক্ষ্য যাতে খামারিরা কোনভাবে না ঠকে। ইতিমধ্যে ১৯ টি হাটে ২০ টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।