শিক্ষক বদরুজ্জামানের এমপিও স্থগিত
- ০৮ জুন ২০২৫, ০৮:৫৩
যশোরের মনিরামপুরে স্বাক্ষর জালিয়াতি করে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়ার অভেযোগে মো. বদরুজ্জামানের সরকারি অংশের বেতন-ভাতা স্থগিতাদেশ সুপারিশ করে মহাপরিচালক বরাবর চিঠি দেয়া হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষককের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা শিক্ষা অফিসারকেও চিঠি পাঠিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। জালিয়াতির নেপথ্যে থাকা সভাপতি, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষককের বিরুদ্ধে ইউএনও বরাবর লিখিত আভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
জানা যায়, ২০০৪ সালে বিজয়রামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) নিয়োগ দেখানো হয় বদরুজ্জামানকে। কিন্তু নিয়োগের পর থেকে ২০ বছরে তিনি একদিনও স্কুলে যাননি। এমনকি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার পাইন ও এডহক কমিটির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ছাড়া বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক-কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীরা তাকে চেনেন না।
ধর্মবিষয়ক সাবেক প্রতিমন্ত্রী মরহুম মুফতি ওয়াক্কাসসহ নিয়োগ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল করে সহকারী শিক্ষক হিসেবে বদরুজ্জামানকে নিয়োগ দেয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি নিয়ে ১ জুন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে টনক নড়ে সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, জালিয়াতি অভিযোগ থাকায় বিধি মোতাবেক শিক্ষক বদরুজ্জামানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ২ জুন জেলা শিক্ষা অফিসার যশোরকে চিঠি পাঠান হয়। সুপারিশপত্রটি পাঠান মনিরামপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
উপ-পরিচালক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিজয়রামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক বদরুজ্জামানের নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্রে স্বাক্ষক জালিয়াতির অভিযোগে গত ৩ জুন দুই সদস্যর কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা শিক্ষা অফিসারকে আহবায়ক ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে সদস্য করে গঠিত কমিটি ১০ কর্মদিবসের তদন্ত পূর্বক সুস্পষ্ট প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। বিষয়টি অবগতির জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতিকে অনুলিপি দেয়া হয়েছে।
একইদিন অপর স্বারকে উল্লেখ করা হয়, মো. বদরুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত চলমান থাকায় বেতন-ভাতাদি উত্তোলন করা যাবে না। এসব পত্রে স্বাক্ষর করেছেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খুলনা অঞ্চলের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. কামরুজ্জামান।
অপরদিক বুধবার (৪ জুন) বিজয়রামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নিয়োগ ও দুর্নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে এলাকাবাসীর পক্ষে ওই গ্রামের ফারুক হোসেন মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কার্যালয়ে অভিযোগ করেছেন। যার অনুলিপি পাঠানো হয়েছে, সংশ্লিষ্ট মহাপরিচালক, জেলা প্রশাসক ও দুদুকসহ একাধিক দপ্তরে।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধান শিক্ষক তাপন কুমার পাইন বিজয়রামপুর স্কুলে যোগদানের পর থেকে অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়া গড়ে তোলেন। ২০০৪ সালের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মরহুম মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস ও তৎকালীন প্রধান শিক্ষক ইনছার আলীর স্বাক্ষর জাল-জালিয়াতির করে ব্যাকডেটে বদরুজ্জামানকে সহকারী শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) হিসেবে যোগদান দেখিয়েছেন বর্তমান প্রধান শিক্ষক তাপস পাইন।
২০২৭ সাল থেকে মাধ্যমিকে নতুন শিক্ষাক্রম: শিক্ষা উপদেষ্টা
শুধু তাই নয়, ২০২৪ সালে সভাপতি ঝন্টু পাটোয়ারীর স্বাক্ষরিত যে রেজুলেশনে বদরুজ্জামানকে মূল প্যাটার্নে পদায়ন দেখানো হয়েছে, সেই রেজুলেশনের সব স্বাক্ষরও জাল। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিদ্যালয়ের বতর্মান এডহক কমিটির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ও সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুল হামিদ এসব কাজে প্রশয় দিয়ে আসছেন।
এমনকি, সরকারি নীতিমালায় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হতে হলে বিএ পাস থাকা অবশ্যক। কিন্তু জাহিদুর ইসলাম এইচএসসি পাশ করে বিদ্যালয়ের সভাপতি হয়েছেন, যা সম্পূর্ণ অবৈধ বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। বিএড পাশ ছাড়ায় আব্দুল হামিদকে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে মর্মে বলা হয়েছে এই অভিযোগ পত্রে। এসব অভিযোগের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ফারুক হোসেন দাবি তুলেছেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এএসএম জিল্লুর রশিদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বদরুজ্জামানের এমপিও স্থগিত হয়েছে। এ ব্যাপারে ২ সদস্যরে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্কুল খুললে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।