সেশনজট নিরসনে সাড়ে ৫ মাসেই সেমিস্টার শেষ করে ফল প্রকাশ ববি শিক্ষকের

ইনসেটে মো. মেহেদি হাসান সোহাগ
ইনসেটে মো. মেহেদি হাসান সোহাগ © টিডিসি সম্পাদিত

বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় ‘সেশনজট’ যেন এক নিত্যদিনের দুর্বিষহ সমস্যা। অনেক সময় বছর বছর পিছিয়ে পড়ে শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা সেশনজটের কবলে পিষ্ট। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ ও হাতাশা। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষক দেখিয়ে দিলেন—ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়।

ববি'র রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মেহেদি হাসান সোহাগ মাত্র সাড়ে চার মাসে পাঠদান শেষ করে এবং মাত্র এক মাসের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করে নজির স্থাপন করেছেন। তার এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আলোচনার শীর্ষে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা সেশনজটে প্রায় এক বছর পিছিয়ে ছিলেন। এই সংকট থেকে উত্তরণেই গৃহীত হয় বিশেষ উদ্যোগ। বিভাগের ৮ম সেমিস্টারের ক্লাস প্রতিনিধি তৌসিফ আলম খান বলেন, ‘আমরা বারবার স্যারের কাছে গিয়েছি। স্যার আমাদের কথা শুনেছেন, বুঝেছেন এবং শেষ পর্যন্ত চমকে দিয়েছেন। সাড়ে ৪ মাসে সেমিস্টার শেষ করে দিয়েছেন। সবচেয়ে বড় চমক ছিল—মাত্র এক মাসেই ফলাফল প্রকাশ!’

তৌসিফ আরও বলেন, ‘স্যার অত্যন্ত আন্তরিক ও শিক্ষার্থীবান্ধব। এমন শিক্ষক থাকলে সেশনজট কিছুই না—অত্যন্ত দ্রুত নিরসন সম্ভব।’

এই অসাধারণ প্রয়াসের পেছনের চিন্তা ও দর্শন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অধ্যাপক মেহেদি হাসান সোহাগ বলেন, ‘বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ দক্ষ জনশক্তি তৈরির চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মাঝে বিরাট ফারাক রয়ে গেছে। সম্পদের স্বল্পতা, অতীতে অদক্ষ জনবল নিয়োগ এবং বিভিন্ন দপ্তরের সমন্বয়হীনতা আমাদের এই জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে।’

তিনি মনে করেন, সেশনজট নিরসনে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের মধ্যে অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্ক গড়ে তোলা জরুরি। পাশাপাশি শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দায়িত্বশীলতা এবং সদিচ্ছাই পারে এই স্থবিরতা কাটিয়ে গতি ফিরিয়ে আনতে।

অধ্যাপক সোহাগের এই দৃষ্টান্তে শুধু একটি বিভাগই নয়, নতুন করে আশাবাদী হতে পারে গোটা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাও। যেখানে অনেক ক্ষেত্রেই কাজ হয় নিয়মের ফাঁকে, সেখানে একজন সৎ, সদিচ্ছাসম্পন্ন শিক্ষক দেখিয়ে দিলেন কীভাবে বদলে দেওয়া যায় একটি প্রজন্মের ভবিষ্যৎ।