নীতিমালা লঙ্ঘন করে মাদ্রাসা সুপার ইউনুছ, নীরব দর্শকের ভূমিকায় অধিদপ্তর
- ১০ জুন ২০২৫, ০৯:৫৩
বিধি লঙ্ঘন করে মাদ্রাসা সুপার পদে নিয়োগ পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে লালমনিরহাটের বুড়িমারী দাখিল মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট কাজী মাওলানা মো. ইউনুছ আলীর বিরুদ্ধে। নিয়োগের পর থেকেই বিধি-বিধানের তোয়াক্কা না করে নিয়োগ বাণিজ্য, ভুয়া সনদ দিয়ে এমপিওভুক্তির সুপারিশসহ নানা অনৈতিক কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এমপিও নীতিমালায় সুপারিনটেনডেন্ট নিয়োগের যোগ্যতায় বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড হতে কামিল ডিগ্রি বা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়/ ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত মাদ্রাসা সমূহ হতে কামিল ডিগ্রি অথবা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় হতে আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ, আল হাদীস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ, দা'ওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ, আল ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিষয়ে অনার্সসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি; অথবা কোন স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হতে আরবি বিষয়ে অনার্সসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে। তবে এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কামিল পাস না করার সত্ত্বেও বুড়িমারী দাখিল মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট কাজী মাওলানা মো. ইউনুছ আলীকে সুপার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বিষয়গুলো নিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও মেলেনি কোনো প্রতিকার। অভিযুক্ত মাদ্রাসা সুপারের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডও। তবে বোর্ডের সেই চিঠিও আমলে নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। মাদ্রাসা সুপার ইউনুছের বিষয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে মাদ্রাসা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট শাখাকে নির্দেশনা দেওয়া হবে—মুহাম্মদ মুনীরুজ্জামান ভূঁঞা, যুগ্মসচিব, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ
এ বিষয়ে জানতে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আব্দুল মান্নানকে কল করা হলে তিনি হজ্জে রয়েছেন বলে জানান। পরে অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (অর্থ) মো. শরিফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বুড়িমারী দাখিল মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট মো. ইউনুছ আলীর অভিযোগের বিষয়টি মাদ্রাসা অধিদপ্তরে জমা হয়েছে। বিষয়টি রংপুর বিভাগের পরিদর্শকের দপ্তরে রয়েছে।
জানতে চাইলে অধিদপ্তরের পরিদর্শক (রংপুর বিভাগ) মুর্শিদা করিম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘অভিযুক্ত মাদ্রাসা সুপারের ফাইলটি আমার শাখায় রয়েছে। এ বিষয়ে আগে কেন কোনো তদন্ত হয়নি, সেটি বলতে পারব না। আমি ফেব্রুয়ারিতে এ শাখায় এসেছি। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হজ্জ পালন শেষে দেশে ফেরার পর বিষয়টি আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে জমা দেওয়া চারটি অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ‘বুড়িমারী দাখিল মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট মো. ইউনুছ আলী (ইনডেক্স নং M0016555) ২০০৫ সালে কামিল পাস করেন। যার ফলাফল প্রকাশ হয় একই বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর। অথচ বুড়িমারী দাখিল মাদ্রাসার সুপারি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় ২০০৪ সালের ২৪ নভেম্বর। নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় একই বছরের ৭ ডিসেম্বর। তিনি যোগদান করেন ১০ ডিসেম্বর।
নিয়োগকালীন সময়ে কাঙ্ক্ষিত শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় তার এমপিও আবেদন একাধিকবার বাতিল করা হয়। পরবর্তীতে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে এমপিও আবেদন নিষ্পত্তি শুরু হলে নিয়োগের সময় কাঙ্খিত যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও এমপিওভুক্ত হন। তবে কীভাবে এমপিওভুক্ত হয়েছেন সেটি তদন্তের দাবি রাখে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।
সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে শূন্য পদের চাহিদা দেওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট পদে বৈধ সুপারিশপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নিয়োগ না দিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে জাল নিবন্ধন সনদধারী এবং এনটিআরসিএর ভুয়া সুপারিশপত্র বানিয়ে সহকারি মৌলভী পদে এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেন তিনি। পরবর্তীতে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তাকে এমপিওভুক্ত করেন। বিষয়টি জানতে পেরে ওই পদে সুপারিশপ্রাপ্ত ব্যক্তি মাদ্রাসা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিলে সেটি আমলে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে তদন্তে জালিয়াতির বিষয়টি প্রমাণিত হলে এমপিও আবেদন বাতিল করা হয়। তবে যিনি এ কাগজপত্র তৈরি করেছিলেন, তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে বুড়িমারীর একটি প্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষক দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বুড়িমারী মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষককে (বাংলা) জাল বিএড সনদ সরবরাহ ও এমপিওভুক্ত করেছেন তিনি। তার আপন বোন আকলিমা খাতুনের আলিম এবং ফাজিলের সনদ জাল করে সহকারী মৌলভী পদে এমপিভুক্ত করেছেন। এ ছাড়া আরেক ব্যক্তির জাল মুজাব্বিদ সনদ সরবরাহ করে এমপিওভুক্ত করেছেন। বিষয়গুরেলা সঠিকভাবে তদন্ত হলে সব বেরিয়ে আসবে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বুড়িমারী দাখিল মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট মো. ইউনুছ আলী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এসব অভিযোগের উত্তর আপনাকে ফোনে দেব না। আপনি আমার অফিসে আসেন। এখানে উত্তর দেব।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব (মাদ্রাসা) মুহাম্মদ মুনীরুজ্জামান ভূঁঞা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে মাদ্রাসা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট শাখাকে নির্দেশনা দেওয়া হবে।’