হাসপাতালে চাঁদ ও প্লাস চিহ্ন ব্যবহার করা হয় কেন? জেনে নিন

রেড ক্রস এবং রেড ক্রিসেন্ট প্রতীক
রেড ক্রস এবং রেড ক্রিসেন্ট প্রতীক © সংগৃহীত

লাল অর্ধচন্দ্র অথবা প্লাস চিহ্ন দেখলেই আমাদের মনে হয় হাসপাতালের কথা। হাসপাতালের বিভিন্ন স্থানে অথবা অ্যাম্বুলেন্সে দেখা যায় এই চিহ্নগুলোর ব্যবহার। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না এ চিহ্নগুলো ব্যবহারের কারণ। আসুন জেনে নেয়া যাক এর ইতিহাস।

বিশ্বজুড়ে হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসা সেবার প্রতীক হিসেবে লাল ক্রস (রেড ক্রস) ও লাল অর্ধচন্দ্র (রেড ক্রিসেন্ট) চিহ্নের ব্যবহার সুপরিচিত। এই প্রতীকগুলোর পেছনে রয়েছে একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের ভিত্তি।

১৮৬৪ সালে প্রথম জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী, যুদ্ধক্ষেত্রে আহত ও অসুস্থদের সেবা প্রদানকারী নিরপেক্ষ চিকিৎসাকর্মী ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিহ্নিত করতে লাল ক্রস প্রতীকের ব্যবহার গ্রহণ করা হয়। এই প্রতীকটি সুইস পতাকার রঙের বিপরীত রূপ, যা নিরপেক্ষতা ও মানবিক সহায়তার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

তবে মুসলিম দেশগুলোতে খ্রিষ্টীয় প্রতীকের (ক্রস) অনুরূপ হওয়ায় লাল ক্রসের ব্যবহার নিয়ে আপত্তি ওঠে। ফলে ১৮৭৬ সালে অটোমান সাম্রাজ্য লাল অর্ধচন্দ্র প্রতীকটি প্রবর্তন করে। এটি ১৯২৯ সালে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পায় ।

পরবর্তীতে, ধর্মীয় বা রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ২০০৫ সালে ‘রেড ক্রিস্টাল’ নামক একটি নতুন প্রতীক গৃহীত হয়, যা কোনো ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক প্রতীক নয় ।

Flag_of_the_Red_Crystal-svg

রেড ক্রিস্টাল

জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী, এই প্রতীকগুলো দুটি প্রধান উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়

সুরক্ষামূলক ব্যবহার: যুদ্ধকালীন সময়ে চিকিৎসাকর্মী, হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসা সরঞ্জামগুলোকে চিহ্নিত করতে এই প্রতীকগুলো ব্যবহার করা হয়, যাতে তারা আক্রমণের শিকার না হয়।

পরিচয়মূলক ব্যবহার: শান্তিকালীন সময়ে, জাতীয় রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিগুলো নিজেদের কার্যক্রম চিহ্নিত করতে এই প্রতীকগুলো ব্যবহার করে ।

তবে এই প্রতীকগুলোর অপব্যবহার আন্তর্জাতিক আইনে নিষিদ্ধ এবং তা যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।

বাংলাদেশে প্রতীকের ব্যবহার

বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি লাল অর্ধচন্দ্র প্রতীক ব্যবহার করে। এই সংস্থা দেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং রক্তদানসহ বিভিন্ন মানবিক সেবা প্রদান করে ।

হাসপাতাল ও চিকিৎসা সেবার প্রতীক হিসেবে লাল ক্রস, লাল অর্ধচন্দ্র ও লাল ক্রিস্টাল শুধু চিহ্ন নয়; তারা নিরপেক্ষতা, মানবিকতা ও সুরক্ষার প্রতীক। এই প্রতীকগুলোর সঠিক ব্যবহার ও সম্মান নিশ্চিত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব, যাতে চিকিৎসা সেবা প্রদানকারীরা নিরাপদে ও নিরপেক্ষভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন।