আইনি জটে থেমে আছে শিক্ষার্থীদের স্কুলপথ

আইনি জটে থেমে আছে শিক্ষার্থীদের স্কুলপথ
আইনি জটে থেমে আছে শিক্ষার্থীদের স্কুলপথ © টিডিসি ফটো

যশোরের শার্শা উপজেলার নাভারণ-গোড়পাড়া সড়কে দুটি ব্রিজের নির্মাণ কাজ দুই বছর ধরে বন্ধ পড়ে আছে। এ কারণে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কোমলমতি স্কুল শিক্ষার্থীদের। প্রতিদিন ৪-৫ কিলোমিটার ঘুরে কাঁদা-পানিময়, বিপদসংকুল পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যেতে হচ্ছে তাদের। ভিজে যাচ্ছে বই, পা পিছলে পড়ে যাচ্ছে কেউ কেউ—তবু থেমে নেই তাদের স্কুলে যাওয়ার চেষ্টা। এই পথ যেন তাদের স্বপ্ন পূরণের বদলে রোজকার এক নীরব সংগ্রামের নাম।

২০২২ সালের ৯ জানুয়ারি বেতনা নদীর ওপর ১৪ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে দুটি ব্রিজ নির্মাণকাজ শুরু হয়। কাজের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আইসিএল প্রাইভেট লিমিটেড। নির্ধারিত সময় ছিল ২০২৩ সালের ৩ জুলাই, কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও কাজ শেষ হয়নি। প্রায় ৮০-৯০ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ার পর হঠাৎ থমকে যায় সবকিছু। ‘ভৈরব নদী সংস্কার আন্দোলন কমিটি’ ব্রিজ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ এনে হাইকোর্টে রিট করলে আইনি জটিলতায় বন্ধ হয়ে যায় বাকি কাজ।

নাভারণ বাজার থেকে গোড়পাড়া পর্যন্ত সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ যাতায়াত করেন। তবে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে স্কুলগামী শিশুরা। বিশেষ করে বর্ষাকালে সমস্যার মাত্রা আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। অনেক শিক্ষার্থী শুধু পা ভিজে যাওয়ার ভয়েই স্কুলে যেতে চায় না। নিয়মিত অনুপস্থিত থাকছে শত শত শিক্ষার্থী, ব্যাহত হচ্ছে তাদের পড়াশোনা।

শার্শা উপজেলা প্রকৌশলী মো. সানাউল হক বলেন, জনস্বার্থে ব্রিজ দুটি দ্রুত নির্মাণ কাজ শেষ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। হাইকোর্টের মামলা নিষ্পত্তি হলে অবিলম্বে কাজ শুরু করা হবে।

অভিভাবকরাও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শিক্ষার যে মৌলিক অধিকার তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আমাদের সন্তানরা। প্রতিদিন তাদের কষ্টের চিত্র দেখতে হয়, কিন্তু সমাধান নেই।

এই দুটি ব্রিজ যেন শুধুই সিমেন্ট আর রডের নির্মাণ নয়—এ যেন হাজারো শিশুর স্কুলে যাওয়ার স্বপ্নের সেতু। কিন্তু সেই সেতু আজ থেমে আছে আইনের জটিলতা আর প্রশাসনিক উদাসীনতার জালে। ফলে শিশুদের স্বপ্নের পথ আজ কাঁদা-পানির গ্লানিতে ভরা।