শরীরে পটাশিয়ামের ঘাটতির ছয়টি লক্ষণ ও সমাধান

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি © টেলিগ্রাফ

আপনি কি কখনও ভেবেছেন, প্রতিদিন আপনি কতটা পটাশিয়াম গ্রহণ করছেন? বেশিরভাগ সময় আমরা কলা খাওয়ার সময়ই এই খনিজটির কথা মনে করি, কারণ এটি পটাশিয়ামে ভরপুর। যদিও তুলনামূলকভাবে কম আলোচিত, পটাশিয়াম আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি খনিজ।

যুক্তরাজ্যের এনএইচএস-এর চিকিৎসক ডা. হেলেন ওয়াল বলেন, ‘পটাশিয়াম আমাদের পেশির কার্যকারিতা, বিশেষ করে হৃদযন্ত্রের সঠিক কার্যক্রম, স্নায়ুতন্ত্রের সংকেত আদান-প্রদান এবং শরীরের তরলের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।’

একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ওয়াটারলু দেখিয়েছে, পটাশিয়াম গ্রহণ বাড়িয়ে এবং সোডিয়াম কমিয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আরও কার্যকর ফল পাওয়া যায়। কারণ, কিডনি এই দুই ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা করে।

প্রতিদিন কত পটাশিয়াম প্রয়োজন?

এনএইচএস অনুযায়ী, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন প্রায় ৩,৫০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম গ্রহণ করা উচিত। এটি প্রায় ১০টি মাঝারি আকারের কলার সমান। তবে শুধুই কলার উপর নির্ভর করার প্রয়োজন নেই।

ব্রিটিশ নিউট্রিশন ফাউন্ডেশনের পুষ্টিবিদ ব্রিজেট বেনেলান বলেন, ‘যাঁরা স্বাস্থ্যকর ও বৈচিত্র্যময় খাদ্য গ্রহণ করেন, তাঁরা সাধারণত পর্যাপ্ত পটাশিয়াম পেয়ে থাকেন।’ শস্যজাত খাবার, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, মুরগি, বিভিন্ন ফল ও সবজি – এ সবই পটাশিয়ামের ভালো উৎস।

পটাশিয়ামের ঘাটতির লক্ষণ কী কী?

ডা. ওয়াল জানান, পটাশিয়ামের ঘাটতি ও অপর্যাপ্ত গ্রহণ – এই দুটি বিষয় আলাদা। প্রকৃত ঘাটতি (Hypokalemia) বিরল, তবে অনেকেই দৈনিক প্রয়োজনের তুলনায় কম গ্রহণ করেন, যা দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

পটাশিয়ামের ঘাটতির লক্ষণগুলো হলো- পেশিতে টান বা খিঁচুনি, অতিরিক্ত ক্লান্তি, কোষ্ঠকাঠিন্য, হৃদস্পন্দনের অনিয়ম বা ধড়ফড়, হাত-পা অবশ বা ঝিনঝিনে ভাব, মাথা ঘোরা। 

ব্রিটিশ ডায়েটেটিক অ্যাসোসিয়েশনের মতে, ৮০ বছরের বেশি বয়সী প্রবীণরা এই ঘাটতির ঝুঁকিতে থাকেন। পাশাপাশি কিছু ওষুধ (যেমন ডায়ুরেটিক, হার্টের ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক), দীর্ঘমেয়াদী ডায়রিয়া বা বমিও শরীর থেকে পটাশিয়াম বের করে দেয়।

বেনেলান বলেন, "পটাশিয়াম যা করে, তার বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখা যায় ঘাটতির সময়।" তাই ঘাটতির ফলে স্নায়ু ও পেশির কাজ ব্যাহত হয় এবং গুরুতর ক্ষেত্রে হৃদযন্ত্রের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

পটাশিয়ামের ঘাটতি পূরণ করবেন কীভাবে?

ঘাটতি ধরা পড়লে প্রথমে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট নিতে হতে পারে, অথবা ঘাটতির জন্য দায়ী ওষুধ পরিবর্তন করা যেতে পারে।

পটাশিয়ামসমৃদ্ধ কিছু খাবার (প্রতি ১০০ গ্রামে):

ছোলা – ৮৭৫ মিগ্রা

অ্যাভোকাডো – ৬৯০ মিগ্রা

পালং শাক – ৫৫৮ মিগ্রা

ডাল – ৩৬৯ মিগ্রা

স্যালমন মাছ – ৩৬৩ মিগ্রা

কলা – ৩৫৮ মিগ্রা

বাটারনাট স্কোয়াশ – ৩৫২ মিগ্রা

মিষ্টি আলু – ৩৩৭ মিগ্রা

টমেটো – ২৮৭ মিগ্রা

তরমুজ – ১১২ মিগ্রা

পটাশিয়াম সাপ্লিমেন্ট কি দরকার?
শক্তিশালী পটাশিয়াম সাপ্লিমেন্ট (যেমন Sando-K) শুধুমাত্র ডাক্তারের পরামর্শে গ্রহণযোগ্য। ওষুধের দোকানে পাওয়া সাধারণ সাপ্লিমেন্ট (৪০০ মি.গ্রা. বা কম) খাদ্যতালিকার বিকল্প হতে পারে, তবে অতিরিক্ত পটাশিয়াম হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

ডা. ওয়াল বলেন, "আমি গত ২০ বছরে মাত্র দুবার খাদ্য থেকে অতিরিক্ত পটাশিয়ামের সমস্যা দেখেছি।" তাই সাধারণত খাদ্য থেকেই পটাশিয়াম গ্রহণ করাই সবচেয়ে নিরাপদ এবং দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যকর উপায়।