‘আম্মু, এখন আমার জন্য আর টাকা পাঠাতে হবে না’—চিরকুট লিখে ‘আত্মহত্যা’ বিএএফ শাহীনের ইউশার
- ১২ জুন ২০২৫, ১৬:৪২
রাজধানীর হাজারীবাগের মনেশ্বর রোডের একটি ছাত্র হোস্টেল থেকে মো. সাফায়েত হোসেন ইউশা (১৭) নামে এক কলেজ শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি কুর্মিটোলার বাংলাদেশ বিমান বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত বিএএফ শাহীন কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। ফেনীর স্থানীয় দৈনিক ফেনীর সময় সম্পাদক শাহাদাত হোসেনের বড় ছেলে সে।
আজ সোমবার (২৬ মে) দুপুরের দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায় হাজারীবাগ থানা পুলিশ। এ সময় তার মরদেহের পাশে পাওয়া গেছে এক পাতার একটি চিরকুট। যেখানে ইউশা লিখে গেছে, ‘আম্মু, এখন আর আমার জন্য টাকা পাঠাতে হবে না।’
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গতকাল রবিবার (২৫ মে) সন্ধ্যার পর থেকে ইউশার সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তাকে না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা হোস্টেল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। পরে দরজা ভেঙে আজ দুপুরে তার ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পান হোস্টেল শিক্ষকরা।
এদিকে উদ্ধার করা চিরকুটে ইউশা লিখে গেছে, ‘সরি, পারলে আমারে কে মাফ করে দিও। এত চাপ আর নিতে পারছি না। কলেজ সিলেকশনের সময় হয়তো মনেই ছিল না, আমার বাবার জন্য এটা কত বড় চাপ হয়ে দাঁড়াবে।’
চিঠিতে বাবার অসুস্থতার সময়ের স্মৃতিও উল্লেখ করে সে লেখে, ‘গত বছর এই দিনেই বাবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। জ্ঞান ফেরার পর বাবার প্রথম খোঁজ ছিল আমার। তখন বাবার কাছে গিয়ে উনি বলেছিলেন, ‘কিছুই হবে না আব্বু, আমি ঠিক আছি।’
চিঠির শেষ অংশে ইউশা মাকে উদ্দেশ করে লেখে, ‘আম্মু, এখন আর আমার জন্য টাকা পাঠাতে হবে না। ভালো থাকো তোমরা। আল্লাহ হাফেজ।’
একটি ভুল সিদ্ধান্তের চিরন্তন মাশুল দিল ইউশা, তার সহপাঠীরা জানায়, এসএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করার পর ইউশা নিজের পছন্দে ঢাকার বিএএফ শাহীন কলেজে ভর্তি হয়। তবে কিছুদিনের মধ্যেই সে বুঝতে পারে কলেজ নির্বাচনটি তার প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। পরিবারকেও সে বিষয়টি জানায়। এ নিয়ে নিজের মধ্যে অপরাধবোধ ও চাপ তৈরি হয়।
হাজারীবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহবুব অর রশিদ জানান, আমরা খবর পেয়ে হাজারীবাগে জিগাতলা মনেশ্বর রোড টেক কেয়ার হোম ছাত্র হোস্টেল ষষ্ঠ তলার একটি ফ্ল্যাটে যাই। সেখানে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করি। পরে আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, আমরা একটি চিরকুট উদ্ধার করেছি, সেখানে আর্থিক অনটন ও হতাশার কথা উল্লেখ করা রয়েছে। আমরা তার মোবাইল এবং চিরকুট জব্দ করেছি। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
ইউশার খালা নাহিদা ইসলাম বলেন, সে বি এফ শাহীন কলেজে ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্র ছিল, জিগাতলায় (টেক-কেয়ার হোম) ছাত্র হোস্টেলে থাকতো। কি কারণে আত্মহত্যা করেছে বিষয়টি আমরা বলতে পারবো না।