বার্মিংহামে ডিনার, লাহোরে শিরোপা—অবিশ্বাস্য সিকান্দার রাজা
- ২৯ মে ২০২৫, ০৬:২২
নটিংহ্যামে জিম্বাবুয়ের ইনিংস ব্যবধানে পরাজয়ের পরদিনই ভিন্ন এক উৎসবে মত্ত হলেন সিকান্দার রাজা। তাকে কাঁধে তুলে নিয়ে উচ্ছ্বাসেও মেতেছিলেন সতীর্থরা। পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) ইতিহাসে অন্যতম রেকর্ডগাঁথা গল্প লিখেছেন এই অলরাউন্ডার।
টেস্ট হার আর ভ্রমণ ক্লান্তিকে 'বুড়ো আঙুল' দেখিয়ে অবিশ্বাস্য এক অভিজ্ঞতার সঙ্গী হয়েছেন তিনি। গেল শনিবার (২৪ মে) শেষ বিকেলে তিনি প্যাভিলিয়নে ফেরার পরই তাসের ঘরের মত লুটিয়ে পড়ে রোডেশিয়ানরা। আর ইনিংস ব্যবধানে হারের পরই অনিশ্চিত যাত্রায় পাড়ি জমান এই অলরাউন্ডার। সে সময়ে পিএসএল ফাইনালের ২৪ ঘণ্টাও বাকি ছিল না।
টেস্ট শেষ করেই পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে রওনা দেন রাজা। বার্মিংহাম বিমানবন্দর থেকে ইকোনমি টিকিট নিয়ে দুবাইয়ের ফ্লাইট ধরেন। দুবাইয়ে নেমে গাড়িতে আবুধাবি যান রাজা। কারণ, আবুধাবি থেকে পিএসএলের ভেন্যু পাকিস্তানের লাহোরের বিমান আগেভাগেই পাওয়া যাবে।
লাহোরের বিমানবন্দরে নেমেই গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের উদ্দেশ্যে গাড়িতে রওনা দেন। ফাইনালে টস হবার ১০ মিনিট আগে দলের সঙ্গে যোগ দেন তিনি। টস করার সময় রাজার একাদশে থাকা নিশ্চিত করেন, লাহোর অধিনায়ক শাহিন শাহ আফ্রিদি। তখনও তিনি বিমানবন্দর থেকে স্টেডিয়ামের পথে ছিলেন। এরপর তো রাত নামার আগে স্মরণীয় এক বাউন্ডারিতে লাহোরের শিরোপা জয়ের বড় অবদান রাখেন রাজা।
ভক্ত-সমর্থকদের ছাপিয়ে সম্ভবত রাজা নিজেই এই মুহূর্তটিকে বেশি মনে রাখবেন। ফাইনালে শেষে নিজের রোমাঞ্চকর ২৪ ঘণ্টার বর্ণনা দিতে গিয়ে রাজা বলেন, ‘ডিনার করেছি বার্মিংহামে, সকালের নাশতা দুবাইয়ে, আবুধাবিতে লাঞ্চ আর পাকিস্তানের রাতের খাবার করেছি।’
পাকিস্তানের পাঞ্জাবের শিয়ালকোটে জন্ম নেওয়া রাজা আরও বলেন, ‘আমার মনে হয় পেশাদার ক্রিকেটারদের জীবন এমনই। এমন একটি জীবনের অংশ হতে পেরে সত্যিই নিজেকে ধন্য ও সৌভাগ্যবান মনে করি।’
তবে এই ইনিংসটি কেবল রান দিয়ে বিচার করলেই হবে না। এতে সিকান্দার রাজার হৃদয়, সাহস, উদ্দেশ আর আবেগের এক অনবদ্য মিলনও পরিলক্ষিত হয়েছে।
আর রাজার প্রতি তার দলও আস্থা রেখেছিল। এই অলরাউন্ডারকে পাওয়া অনিশ্চিত হবে জেনেও দুটি টিম শিট তৈরি করেছিল লাহোর। একটি তাকে নিয়েই, আর অন্যটি তাকে ছাড়াই। তবে শেষমেশ রাজা ম্যাজিকেই চ্যাম্পিয়ন লাহোর। দলের ভরসার জায়গা ঠিক রেখে আর ক্লান্তি-বিষণ্ণতা দূরে ঠেলে রঙিন উৎসবে দলের হয়ে প্রত্যাশিত উপাখ্যানই লিখেছেন তিনি।
উল্লেখ্য, রোববার (২৫ মে) লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ২০১ রানের সংগ্রহ গড়ে কোয়েটা। জবাবে ১৯ দশমিক ৫ ওভারে ৬ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে নোঙ্গর করে লাহোর।
মূলত ফাইনালে শেষ ৩ ওভারে ৪৭ রানের কঠিন সমীকরণ মিলিয়ে দুর্দান্ত জয় ছিনিয়ে নেয় পেরেরা-রাজা জুটি। সিকান্দার রাজা ৭ বলে ২২ আর ৩১ বলে ৬২ রান করেন কুশাল পেরেরা। এমন ইনিংসের সুবাদে ফাইনাল সেরার খেতাব জিতে ৫০ লাখ পাকিস্তানি রুপি পেয়েছেন পেরেরা।