এআই প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রকে হারাতে অভিনব পরিকল্পনা চীনের
- ৩০ মে ২০২৫, ১৬:৪৪
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে শুরু হয়েছে এক নতুন প্রযুক্তিগত দৌড়। যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এ প্রতিযোগিতাকে আখ্যা দিয়েছেন ‘চীনের সঙ্গে অস্ত্র প্রতিযোগিতা’ হিসেবে। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্র যদি এআই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়, তবে চীনা নিয়ন্ত্রিত প্রযুক্তির প্রভাবে দেশটি ‘এআই-এর দাসে’ পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সুরক্ষিত রাখতে ওপেনএআই, মাইক্রোসফট, এএমডি এবং কোরওয়েভের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টরা সরকারের কাছে হালকা নিয়ন্ত্রণ নীতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। একই সঙ্গে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যা তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ‘এআই নেতৃত্ব’ বজায় রাখার কৌশল হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। আগামী বছরগুলোতে এআই-চালিত ডেটা সেন্টার নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্র এক ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে।
অন্যদিকে, চীন এ প্রতিযোগিতায় ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। যুক্তরাষ্ট্র যেখানে এজিআই (Artificial General Intelligence) নিয়ে গবেষণা ও ভবিষ্যৎ ভাবনায় ডুবে আছে, সেখানে চীন বাস্তবিক প্রয়োগে জোর দিচ্ছে। চীনের লক্ষ্য—শিল্প ও ভোক্তা পর্যায়ে এআইকে ব্যবহার করে দৈনন্দিন জীবনে বিপ্লব ঘটানো।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বলেছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে পারমাণবিক অস্ত্রের মতো বিপজ্জনক প্রযুক্তি হিসেবে নয়, বরং বিদ্যুতের মতো অপরিহার্য ও উপযোগী প্রযুক্তি হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। এই দর্শন থেকেই চীন চালু করেছে ‘এআই+’ কর্মসূচি, যার উদ্দেশ্য বিদ্যমান শিল্প ও উৎপাদনে এআই প্রযুক্তিকে একীভূত করা। এটি মূলত এক দশক আগের সফল ‘ইন্টারনেট+’ পরিকল্পনার উন্নত সংস্করণ।
চীন শুধু নিজেদের উদ্ভাবনেই থেমে থাকছে না, বরং পশ্চিমা এআই মডেলগুলোর অনুকরণ করে সেগুলো ওপেন সোর্স হিসেবে উন্মুক্ত করছে। যেমন, চীনা প্রতিষ্ঠান ডিপসিক সম্প্রতি এমন একটি ভাষা মডেল প্রকাশ করেছে, যার সক্ষমতা ওপেনএআই-এর সমতুল্য বলে দাবি করা হয়। মডেলের গঠনমূলক উপাদানগুলো উন্মুক্ত করে চীন একটি বার্তা দিতে চাইছে—আগামীর মূল্য নির্ধারণ হবে মডেল তৈরির নয়, বরং তার কার্যকর প্রয়োগের ওপর।
এর পাশাপাশি, চীনের গবেষকরা সরকারি অর্থায়নে একদম নতুন ভিত্তিতে এজিআই উন্নয়নের পথে হাঁটছেন। উদাহরণস্বরূপ, এমন মডেল তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে যা ছবি বিশ্লেষণ করে বাস্তব জগতের সঙ্গে ইন্টারঅ্যাকশন করতে পারে, কিংবা মস্তিষ্কের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হয়ে কাজ করতে সক্ষম এআই তৈরি করা হচ্ছে।
তবে কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (IMF) মতে, আগামী এক দশকে এআই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ৫.৬ শতাংশ বাড়াতে পারবে, যেখানে চীনের সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি ৩.৫ শতাংশ। এর প্রধান কারণ—চীনের সেবা খাত তুলনামূলক ছোট এবং উৎপাদনশীলতার জায়গায় এখনও সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
তবু পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছে, চীন একটি ভিন্ন পথে এবং কার্যকর কৌশলে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে—যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাতে। [সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট]