ঢাকা রেসিডেনশিয়াল মডেল কলেজে ‘মাইন্ডস অ্যান্ড বিনস’ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

‘মাইন্ডস অ্যান্ড বিনস’ কর্মশালা
‘মাইন্ডস অ্যান্ড বিনস’ কর্মশালা © টিডিসি ছবি

ঢাকা রেসিডেনশিয়াল মডেল কলেজে অনুষ্ঠিত হলো ব্যতিক্রমধর্মী কর্মশালা ‘মাইন্ডস অ্যান্ড বিনস’। শব্দ দূষণ, পরিবেশ-মনোবিজ্ঞান এবং পরিচ্ছন্নতা এই তিনটি বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে দিনব্যাপী এই আয়োজন হয়ে ওঠে মন-প্রকৃতি-শিক্ষার এক প্রাণবন্ত মিলনমেলা।

শনিবার ( ২৪ মে ) রেমিয়ান্স নেচার অ্যান্ড আর্থ ক্লাব (RNEC) ও পরিবেশবান্ধব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আর্থস অ্যান্টসের যৌথ উদ্যোগে আয়োজনটি কলেজ ক্যাম্পাসের সবুজ পরিবেশে নতুন মাত্রা যোগ করে।

অনুষ্ঠানের সূচনা হয় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে। এরপর কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. মোহাম্মদ জাবের হোসেন স্বাগত বক্তব্যে বলেন, “শিক্ষার্থীদের মানসিক ও নৈতিক বিকাশে প্রকৃতির ভূমিকা অপরিসীম। কলেজ ক্যাম্পাসে দুই শতবর্ষী বটগাছে পাখিদের জন্য শতাধিক মাটির হাঁড়ি বসানো হয়েছে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তোলার নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

আরএনইসি’র সভাপতি টি এম সামস তারবিজ আকিব বলেন, “আমরা চাই শিক্ষার্থীরা যেন প্রকৃতিকে শুধু বইয়ের পাতায় নয়, নিজের জীবনের অংশ হিসেবেও উপলব্ধি করে।” তিনি আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

কর্মশালার গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ ছিল শব্দ দূষণ বিষয়ে সচেতনতামূলক উপস্থাপনা। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা শব্দ দূষণের শারীরিক ও মানসিক প্রভাব নিয়ে দুটি ভিডিও প্রদর্শনসহ আলোচনা করেন। তারা বলেন, “অবিরাম উচ্চ শব্দ শুধু শ্রবণশক্তি নয়, শেখার মনোযোগেও বিঘ্ন ঘটায়।”

মূল কর্মশালায় আলোচনার বিষয় ছিল ‘পরিবেশ-মনোবিজ্ঞান ও পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাস সংস্কৃতি’। আর্থস অ্যান্টসের তরুণ বক্তারা গাছ, আলো, শব্দ, ধুলা ইত্যাদির মানসিক প্রভাব ব্যাখ্যা করেন। তারা বলেন, “পরিবেশ যেমন হবে, আমাদের চিন্তাভাবনাও তেমন গড়ে উঠবে।”

সংগঠনটির চিফ অপারেটিং অফিসার ও সাধারণ সম্পাদক নূরেন তাসনিম বলেন,“পরিচ্ছন্নতা একটি অভ্যাস। এটি গঠিত হয় তিনটি বিষয়ে: মনোভাব, সামাজিক রীতি, আর আত্মনিয়ন্ত্রণ। এই তিনটি থাকলে আমরা সবাই মিলে একটি সুন্দর পৃথিবী গড়তে পারি।”

প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিরাজুল ইসলাম বলেন, “একটি শান্ত ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত জরুরি। আপনি যদি বিশ্ব পরিবর্তন করতে চান, তাহলে প্রথমে নিজের মানসিকতা পরিবর্তন করুন।”

আলোচনায় বিশেষ বক্তা হিসেবে ছিলেন ঢাকা আহসানিয়া মিশনের জ্যেষ্ঠ মনোবিজ্ঞানী রাখী গাঙ্গুলি। তিনি বলেন, “যেখানে পরিবেশ বিশৃঙ্খল, সেখানে মনও বিশ্রাম পায় না। তাই বাইরে যেমন পরিচ্ছন্নতা দরকার, ভেতরেও প্রয়োজন শান্তি।”তিনি শিক্ষার্থীদের সচেতন ও স্বাস্থ্যকরভাবে বড় হয়ে ওঠার আহ্বান জানান।

দিনশেষে আয়োজিত হয় কুইজ প্রতিযোগিতা, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা সারাদিনের আলোচনা থেকে শেখা বিষয়গুলো কাজে লাগিয়ে প্রতিযোগিতা করে। বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় পুরস্কার, আর সবার জন্য ছিল সার্টিফিকেট ও পরিবেশবান্ধব উপহার।

অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানেন কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও অনলাইন শিক্ষক এম মাশরুর হোসেন। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, “তুমি যদি নিজের চারপাশটা বদলাতে চাও, তবে প্রথমে নিজের চিন্তা বদলাও।"