নদী থেকে জামায়াত-যুবদল নেতাকর্মীদের অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, নির্বিকার প্রশাসন

হুরাসাগর নদীতে অবৈধভাবে বিভিন্ন পয়েন্টে বালু উত্তোলন
হুরাসাগর নদীতে অবৈধভাবে বিভিন্ন পয়েন্টে বালু উত্তোলন © সংগৃহীত

পাবনার বেড়া উপজেলার হুরাসাগর নদীতে অবৈভাবে চলছে বালু উত্তোলন ও বিক্রি। সংশ্লিষ্ট নীতিমালা উপেক্ষা করে একটি প্রভাবশালী চক্র প্রকাশ্যে এই কার্যক্রম চালালেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না—যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

সূত্রমতে, বাঙ্গালী-করতোয়া, ফুলজোর-হুরাসাগর নদীর সিস্টেম ড্রেজিং ও পুনঃখনন এবং তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় ড্রেজিং কাজ চলছে। নিয়ম অনুযায়ী, এসব নদীতে ২৬ ইঞ্চি ড্রেজার দিয়ে খনন করার কথা থাকলেও বাস্তবে ব্যবহার করা হচ্ছে ১৮ ইঞ্চি ড্রেজার।

নীতিমালা অনুযায়ী, খননকৃত বালু বা মাটি স্থানীয় জেলা পানি সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিলামের মাধ্যমে বিক্রির কথা থাকলেও সেই প্রক্রিয়া মানা হচ্ছে না। বরং, স্থানীয় একাধিক ঘাটে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে—বালু স্তুপ করে রাখা হচ্ছে কৃষিজমিতে এবং তা ট্রাকে করে সরাসরি বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে।

ট্রাকচালকরা জানিয়েছেন, প্রতি ট্রাক বালু বিক্রি হচ্ছে ১,৪০০ থেকে ১,৬০০ টাকায়। এমনকি রাতের অন্ধকারেও অবাধে চলছে বালু উত্তোলন।

অভিযোগ রয়েছে, বেড়া পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহান খাঁ, বৃশালিখা ঘাটে আবু সালেক ও টুটুল, অধীন নগর পয়েন্টে সাঁথিয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সদস্য সচিব লিখন ও বেড়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামী সদস্য মোশারফ—এসব ব্যক্তি বালু উত্তোলন ও বিক্রির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। স্থানীয়ভাবে তারা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বালু ব্যবসা পরিচালনা করছেন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জাহান খাঁ বলেন, “আমি বালু উত্তোলন বা বিক্রির সঙ্গে কোনোভাবে জড়িত না। এটি একটি মহলের ষড়যন্ত্র।”

বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোরশেদুল ইসলাম জানান, “বেড়ায় কোনো অনুমোদিত বালুমহাল নেই। হুরাসাগর নদীতে সেনাবাহিনীর ড্রেজিং প্রকল্প চলছে এবং নৌপথ সচল রাখতে বিআইডব্লিউটিএ কাজ করছে। অবৈধ বালু উত্তোলনের তথ্য পেলে মোবাইল কোর্ট ও মামলা করা হচ্ছে।”

বেড়া থানার ওসি অলিউর রহমান বলেন, “এটা প্রশাসনের বিষয়। প্রশাসন চাইলে পুলিশ সহযোগিতা করে।”

পানি উন্নয়ন বোর্ড পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, “এই প্রকল্পে পাবনার পানি উন্নয়ন বোর্ড জড়িত নয়, দায়িত্বে আছে বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলা।” সিরাজগঞ্জের প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান, “এই প্রকল্প সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ করে, আমরা কিছু বলতে পারবো না।”

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিটিসি-এমএলবি জেভির নির্বাহী পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর শেখ আশরাফুল বারী বলেন, “যারা বাংলা ড্রেজার দিয়ে বালু কেটে বিক্রি করছে, তারা আমাদের সঙ্গে জড়িত না। আমরা নিয়ম মেনেই কাজ করছি।”

প্রকল্প অনুযায়ী, ড্রেজিং কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ। সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ায় প্রথমে মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। পরবর্তীতে আবারও সময় বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়।

সচেতন মহলের অভিযোগ, সময় বাড়ানোর আড়ালে ঠিকাদার বিপুল পরিমাণ বালু উত্তোলন ও বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন, অথচ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি নেই।

অবৈধভাবে অতিরিক্ত বালু উত্তোলনের ফলে নদীর তলদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। কৃষিজমি হারিয়ে যাচ্ছে নদীগর্ভে, বিলীন হয়েছে বেশকিছু গ্রাম। হুমকির মুখে রয়েছে আরও বহু জনপদ। নদীপাড়ের মানুষজন দিন কাটাচ্ছে আতঙ্কে।