৩১ বছরের অধ্যায়ের সমাপ্তি, অধ্যাপক সাবিহার বিদায়ে অশ্রুসিক্ত বাঙলা কলেজ

অধ্যাপক সাবিনা সুলতানা
অধ্যাপক সাবিনা সুলতানা © টিডিসি ফটো

সরকারি বাঙলা কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সাবিহা সুলতানা ৩১ বছর ৫ মাসের অনন্য শিক্ষকতা জীবনের ইতি টেনে বিদায় নিয়েছেন। এই বিদায় ছিল না কেবল একটি চাকরি ছাড়ার আনুষ্ঠানিকতা, বরং ছিল একটি প্রজন্ম গঠনের ইতিহাসের এক গর্বিত পরিসমাপ্তি। নিষ্ঠা, মমতা, সততা আর ভালোবাসার অধ্যায়টি তিনি যেভাবে রচনা করেছেন—তা চিরকাল শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের জন্য অনুপ্রেরণার বাতিঘর হয়ে থাকবে।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) কলেজের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক হৃদয়ছোঁয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা অশ্রুসজল চোখে বিদায় জানান প্রিয় এই শিক্ষিকাকে। স্মৃতির সোনালি পাতায় লেখা অধ্যাপক সাবিহার কর্মজীবন যেন এক আবেগঘন নদীর ধারা, যা ছুঁয়ে গেছে অসংখ্য হৃদয়।

কুমিল্লা শহরে জন্ম ও বেড়ে ওঠা অধ্যাপক সাবিহা সুলতানা পেশাগত জীবনে যাত্রা শুরু করেন ১৯৯৩ সালে কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজে। পরবর্তীতে তিনি ইডেন কলেজে প্রায় পাঁচ বছর এবং ধামরাই সরকারি কলেজে এক বছর দুই মাস শিক্ষকতা করেন। ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তিনি সরকারি বাঙলা কলেজে যোগ দেন এবং এখানেই শিক্ষকতা জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়টি অতিক্রম করেন।

শুধু একাডেমিক শিক্ষাদানেই নয়, শিক্ষার্থীদের মানবিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশেও তিনি রেখেছেন অসামান্য অবদান। মঞ্চনাটক, বিতর্ক, উপস্থাপনা ও সাহিত্যচর্চায় শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করে গড়ে তুলেছেন এক উজ্জ্বল অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।

বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি ছিলেন সহযোগী অধ্যাপক প্রতিনিধি, স্পোর্টস কমিটির সদস্য এবং কলেজের সাহিত্য সাময়িকী ম্যাগাজিনের সঙ্গেও যুক্ত। প্রতিটি ভূমিকায় তিনি রেখেছেন পেশাদারিত্বের স্বাক্ষর ও মমতার পরশ।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আবেগঘন কণ্ঠে অধ্যাপক সাবিহা সুলতানা বলেন, “জীবনের তিনটি বড় প্রাপ্তি—সুস্থতা, সম্মান ও অর্জন। আমি তা পেয়েছি। আল্লাহর কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা। আমি চাই, ভালোবাসার মধ্যেই যেন বারবার ফিরে আসতে পারি আপনাদের হৃদয়ে।”

তার ব্যক্তিজীবনও শিক্ষার্থীদের জন্য অনুকরণীয়। একমাত্র ছেলে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর স্কোয়াড লিডার, বড় মেয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন এবং ছোট মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অপেক্ষায়। স্বামী একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী। একটি পূর্ণ ও পরিপাটি জীবনের প্রতিচ্ছবি যেন অধ্যাপক সাবিনার জীবনচরিত।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সহকর্মীরা স্মৃতিচারণ করেন তার পাঠদান, স্নেহ এবং পথপ্রদর্শনার কথা। কেউ কেউ চোখ মুছতে মুছতে বলেন—“তিনি শুধু একজন শিক্ষক ছিলেন না, ছিলেন একজন অভিভাবক, একজন আশ্রয়।”

অধ্যাপক সাবিহা

সুলতানার বিদায় যেন এক যুগের অবসান হলেও, তাঁর রেখে যাওয়া আদর্শ, চিন্তাধারা ও মূল্যবোধ চিরকাল বেঁচে থাকবে শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে। শিক্ষকতা পেশার অনন্য আলো হয়ে তিনি রয়ে যাবেন সকলের অনুপ্রেরণায়।