আছিয়ার রায় ১২ কার্যদিবসে, বাকি ধর্ষণ মামলাগুলোও কি ৯০ দিনে রায় পাবে?

বিচারপ্রক্রিয়া ৯০ দিনের মধ্যে শেষ করার আদেশজারি করেছে সরকার
বিচারপ্রক্রিয়া ৯০ দিনের মধ্যে শেষ করার আদেশজারি করেছে সরকার © টিডিসি সম্পাদিত

সম্প্রতি দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে মাগুরার শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা। এ ঘটনায় দোষীদের বিচারের দাবিতে সারাদেশে অভূতপূর্ব জাগরণ দেখা যায়। এ অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার বিদ্যমান আইন সংশোধন করে। বিচারপ্রক্রিয়া ৯০ দিনের মধ্যে শেষ করার আদেশজারি করে। যার ফলে মাত্র ১২ কার্যদিবসে আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার বিচার কাজ সম্পন্ন হয়। এই ঘটনাকে অনেকেই বিচার বিভাগের একটি ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন। বিশ্লেষকেরা আশা করছেন, এ অবস্থায় অন্যান্য ধর্ষণ মামলাগুলো দ্রুত সময়ে বিচারকার্য শেষ হবে।

জানা গেছে, দেশজুড়ে একের পর এক ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় তীব্র জনরোষ, প্রতিবাদ এবং আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকার ধর্ষণ মামলার বিচার দ্রুত শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছে। উদ্যোগের অংশ হিসেবে আইন সংশোধন করে বিচারপ্রক্রিয়ার সময়সীমা অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। এখন থেকে ধর্ষণ মামলার তদন্ত ১৫ দিনের মধ্যে এবং বিচার কাজ ৯০ দিনের মধ্যে শেষ করার বাধ্যবাধকতা থাকবে।

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল জানান, ধর্ষণের মতো সংবেদনশীল মামলার বিচার যদি দীর্ঘ সময় ধরে চলে, তাহলে সেটি ভুক্তভোগী ও তার পরিবারের জন্য চরম অবিচার হয়ে দাঁড়ায়। তাই দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতেই নেওয়া হয়েছে এই পদক্ষেপ।

‘দ্রুত বিচার পাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার। দেখা গেছে কোনো-কোনো মামলার বিচারপ্রক্রিয়ায় ১০-১৫ বছর সময় কিংবা তারও বেশি সময়ক্ষেপণ হয়। এতে করে বিচারের প্রাসঙ্গিকতা আর থাকে না’—শিশির মনির, আইনজীবী, বাংলা‌দেশ সুপ্রিমকোর্ট।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আছিয়ার মামলা ছিল একটি ব্যতিক্রমধর্মী এবং আলোচিত ঘটনা, যে কারণে তা দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব হয়েছে। দেশের হাজারো বিচারাধীন ধর্ষণ মামলা একই গতিতে শেষ করতে পারবে কি না সরকার সেই বিষয়ে সন্দেহ করছে বিশ্লেষকরা।

তাদের অভিমত, ইতিপূর্বে আইনে ১৮০ দিনের মধ্যে ধর্ষণ মামলার বিচারকাজ শেষ করার বিধান রাখা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে বছরের পর বছর ধরে মামলা চলতে দেখা যায়। তেমনই একটি আলোচিত মামলা হলো সিলেটে এমসি কলেজে তরুণী ধর্ষণের মামলা। ২০২০ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বরে সংঘটিত ওই ধর্ষণ মামলা তদন্তের পর ২০২২ সালের জানুয়ারিতে অভিযোগ গঠন করে সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। এরপর ডিএনএ পরীক্ষা করে মামলার চার আসামির সঙ্গে ডিএনএ ম্যাচিংও পাওয়া যায়। তারপরও মামলার বিচার শেষ হয়নি। একইভাবে, ২০১৬ সালে কুমিল্লায় সংঘটিত তনু হত্যা মামলার বিচারও শেষ হতে দেখা যায়নি।

আরও পড়ুন: সবচেয়ে বেশি চোর-ধর্ষক-ডাকাত তেজগাঁও-রমনা-মিরপুরে, কম লালবাগে

এদিকে পুলিশের নথি বলছে, ‘বায়ান্ন বাজার তেপ্পান্ন গলির শহর’ ঢাকাসহ সারাদেশে গত ৪ মাসে (জানুয়ারি-এপ্রিল) ধর্ষণ-নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা হয়েছে মোট ৭০১৫টি। তার মধ্যে মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএমপিতে ৬২২, সিএমপিতে ১৪৬, কেএমপিতে ৫৫, আরএমপিতে ৫৮, বিএমপিতে ৮২, এসএমপিতে ৩৭, আরপিএমপিতে ৪০, জিএমপিতে ১১৯টি মামলা রয়েছে।

এছাড়াও পুলিশের ঢাকা রেঞ্জে ১ হাজার ১৭৮, ময়মনসিংহ রেঞ্জে ৪৩১, চট্টগ্রাম রেঞ্জে ৮৮৯, খুলনা রেঞ্জে ৭১৮, বরিশাল রেঞ্জে ৫১৯, রাজশাহী রেঞ্জে ৯৩২, রংপুর রেঞ্জে ৭৯৬টি মামলা হয়েছে। যদিও নতুন এই মামলাগুলোর বাইরেও এর আগের অনেক মামলা আদালতের কার্যতালিকায় রয়েছে। জানা যায়, যে পরিমাণ মামলা আছে সেই পরিমাণ বিচারক, এজলাস নেই মামলাগুলো পরিচালনা করতে। তাই এসব মামলাগুলো পরিচালনায় অনেক সময় লাগছে বলে জানান বাংলা‌দেশ সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী খন্দকার সুলতান আহ‌মেদ।

‘যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক, বিচার করে তখনই, যখন কোনো ঘটনা ভাইরাল হয়ে গণমাধ্যমে ব্যাপক চাপ তৈরি হয়। সেই চাপের ফলেই বিচার নিশ্চিত হয়, নইলে নয়। যে মামলায় গণমাধ্যমের চাপ থাকে না অথবা ভাইরাল হয় না সেগুলো স্থানীয় প্রভাবশালীদের ক্ষমতার প্রভাবে ভুক্তভোগী সঠিক বিচার পায় না’— ড. তৌহিদুল হক, সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ এবং সহযোগী অধ্যাপক, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের দেশের বিচার বিলম্ব হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার বড় সংকট হলো বিচারকের ঘাটতি। দেশে যে সংখ্যক মামলা চলছে, সেই তুলনায় বিচারকের সংখ্যা একেবারেই অপর্যাপ্ত। যদিও সিভিল, ক্রিমিনাল এবং সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতগুলো বিভাগভিত্তিকভাবে পরিচালিত হয়, কিন্তু বাস্তবতা হলো—নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালে বিচারক নিয়োগ দেওয়া হলে সিভিল ও ক্রিমিনাল কোর্টগুলো বিচারক সংকটে পড়ে। এতে এক বিভাগের মামলার চাপ অন্য বিভাগের উপর এসে পড়ে, এর কারণে বিচারকার্য বিলম্ব হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন: ‘যেখানে যেতেন সেখানেই যৌন হয়রানিতে জড়াতেন’ ড. মিজান, ব্যবস্থা নিতে ঢাবির গড়িমসি

তিনি আরও বলেন, ইজলাস সংকটও আরেকটি বড় সমস্যা। দেশের অধিকাংশ আদালতেই দিনে মাত্র কয়েকটি মামলার বিচার সম্পন্ন হয় একটি মাত্র এজলাসে। ফলে একজন বিচারক যদি কোনো একটি মামলার শুনানিতে বিলম্ব করেন বা সেটি দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে তার পরবর্তী মামলাগুলোতেও দেরি হয়। তাই শুধু আইন পাশ করেই এর সমাধান সম্ভব নয়, আমাদের সংকটের জায়গাগুলো ও সমাধান করতে হবে।

আইনজীবীরা বলছেন, একটি মামলা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয় মূলত তদন্ত ও ট্রায়াল প্রক্রিয়াকে ঘিরেই। প্রথমেই তদন্ত ধাপে সময় লেগে যায় প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ, প্রমাণ উপস্থাপন এবং সাক্ষীদের শনাক্ত করতে। এরপর যখন মামলা আদালতে ট্রায়াল পর্যায়ে পৌঁছে, তখন শুরু হয় সাক্ষ্য গ্রহণ। এ পর্যায়ে সময় আরও দীর্ঘ হয় কারণ অধিকাংশ মামলার একাধিক সাক্ষী থাকেন, যাদের সবাইকে একদিনে আদালতে হাজির করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়।

এর সঙ্গে যুক্ত হয় তদন্ত কর্মকর্তার অনুপস্থিতি, যিনি হয়তো অন্য দায়িত্বে থাকায় নির্ধারিত দিনে উপস্থিত হতে পারেন না। আরেকটি বড় সমস্যা হলো—আদালতের কর্মচারীদের দায়িত্বে গাফিলতি। তারা অনেক সময়েই মামলার নোটিশ পৌঁছাতে দেরি করেন, যা মামলার সময়সীমাকে আরও বাড়িয়ে দেয়।

‘২০২০ সালে ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবনের পরিবর্তে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন করা হলো। কিন্তু তাতে কি দেশে ধর্ষণের ঘটনা কমেছে? কমেনি। বাস্তবায়ন না করতে পারলে হাজারটা আইন থেকেই কোনো লাভ হবে না’—খন্দকার সুলতান আহ‌মেদ, আইনজীবী, বাংলা‌দেশ সুপ্রিমকোর্ট।

চাঞ্চল্যকর শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার দ্রুত রায় বিচার বিভাগের একটি বড় সাফল্য, এতে সন্তোষ প্রকাশ করে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী শিশির মনির নিজের ফেসবুক এক স্ট্যাটাসে জানান, মামলার বিচার শেষে যার যতটুকু শাস্তি ততটুকুই হতে হয়। আবেগ দিয়ে বিচার চলে না। তিনি বলেন, দ্রুত বিচার পাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার। দেখা গেছে কোনো-কোনো মামলার বিচারপ্রক্রিয়ায় ১০-১৫ বছর সময় কিংবা তারও বেশি সময়ক্ষেপণ হয়। এতে করে বিচারের প্রাসঙ্গিকতা আর থাকে না।

অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, আরো যেসব চাঞ্চল্যকর মামলা রয়েছে, ওইসব মামলায় সাক্ষ্য সংগ্রহ সম্ভব হলে দ্রুত বিচার নিশ্চিতে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, অতীতে আমরা দেখেছি বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর মামলায় গণহারে সাজা দিতে।

তবে পুলিশ বলেছে, নিরপরাধদের ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনতে প্রতিটি মামলার সুষ্ঠু ও সময়োপযোগী তদন্ত অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে করা হয়।

আরও পড়ুন: বিশ্ব উষ্ণায়ন মানুষের জন্য আত্মহত্যা স্বরুপ

এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের এআইজি ইনামুল হক সাগর দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো প্রতিটি মামলার সঠিকভাবে এবং যথাসময়ে নিষ্পত্তি করা। এ জন্য আমরা নিরবচ্ছিন্নভাবে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, সাক্ষ্য গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় প্রমাণ যাচাইয়ে গুরুত্ব দিয়ে থাকি।

ধর্ষণ মামলার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের কাছে প্রতিটি মামলাই সমান গুরুত্বের। তবে কিছু মামলা যেমন ধর্ষণ সংক্রান্ত অভিযোগ, সেগুলোর ক্ষেত্রে তদন্তে বাড়তি মনোযোগ দিতে হয়, কারণ এখানে ভিকটিমের মেডিকেল রিপোর্ট, সাক্ষ্য-প্রমাণ এবং ঘটনার প্রেক্ষাপট গুরুত্বপূর্বক বিবেচনায় নিতে হয়। এ ধরনের মামলায় স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা রক্ষা করেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করার চেষ্টা করি আমরা, যাতে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো দ্রুত বিচার পায় এবং ন্যায়বিচারের প্রতি মানুষের আস্থা অটুট থাকে।

দেশের বড় একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেহেতু এই আইনটি সামনে এসেছে তাই এই মামলাটির দ্রুত বিচারকার্য শেষ হবে বলে মনে করেন বাংলা‌দেশ সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী খন্দকার সুলতান আহ‌মেদ। তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘২০২০ সালে ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবনের পরিবর্তে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন করা হলো। কিন্তু তাতে কি দেশে ধর্ষণের ঘটনা কমেছে? কমেনি। বাস্তবায়ন না করতে পারলে হাজারটা আইন থেকেই কোনো লাভ হবে না। আর এখন যেভাবে আইন পরিবর্তন করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার কথা বলা হচ্ছে, সেটি কতটুকু সম্ভব হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। ফলে আইন করার চেয়ে, সেটি বাস্তবায়নই সরকারের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন এই সিনিয়র আইনজীবী।

সরকার চাইলে অবশ্যই সম্ভব। যেকোনো মামলার দ্রুত বিচারকার্য সম্পন্ন করা। কিন্তু আমরা সরকারকে যে মূল বার্তাটি দিতে চাই তা হলো, কেবল ভাইরাল হওয়া মামলা কিংবা গণমাধ্যমের চাপের কারণেই যেন কোনো মামলার বিচার সম্পন্ন না হয়। সকল মামলার বিচার যেন সমান গুরুত্বের সঙ্গে এবং যথাসময়ে কার্যকর করা হয়— লায়ন মো. এ এইচ রোমিও, মানবাধিকার কর্মী।

একই কথা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক। তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক, বিচার করে তখনই, যখন কোনো ঘটনা ভাইরাল হয়ে গণমাধ্যমে ব্যাপক চাপ তৈরি হয়। সেই চাপের ফলেই বিচার নিশ্চিত হয়, নইলে নয়। যে মামলায় গণমাধ্যমের চাপ থাকে না অথবা ভাইরাল হয় না সেগুলো স্থানীয় প্রভাবশালীদের ক্ষমতার প্রভাবে ভুক্তভোগী সঠিক বিচার পায় না।

তিনি জানান, নতুন আইনে তিন মাসের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করার নির্দেশনা আছে কিন্তু আমরা বলছি তিন মাসে নয় ছয় মাস সময় নিয়ে মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ করেন। এমনভাবে কার্যক্রম করুন যেন ছয় মাস পূর্ণ হওয়ার পরের দিন থেকে অপরাধীর সাজা কার্যকর হতে শুরু করে।

বিচারের দীর্ঘসূত্রিতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভুক্তভোগী। ড. তৌহিদুল বলেন, যে ক্ষতিগ্রস্ত, সে ক্রমাগতভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। আর যে অপরাধী, সে পার পেয়ে গিয়ে অপরাধে আরও বেশি উৎসাহী হয়ে ওঠে।

তিনি বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ের নারী ও শিশু নির্যাতনের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রভাব অত্যন্ত তীব্রভাবে কাজ করে। দেশের প্রতিটি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত মামলা পরিচালনার জন্য আলাদা ডেস্ক থাকলেও কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি নেই। তার ভাষায়, আমাদের কাঠামো আছে, আইন আছে, নীতিমালা আছে—সবকিছুই আছে। কিন্তু সদিচ্ছা নেই। আমাদের সদিচ্ছা শুধুই মৌখিক। এ ছাড়াও তিনি মনে করেন, নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলায় বিচার বিলম্বের মূল কারণ হচ্ছে বাস্তবিক সদিচ্ছার ঘাটতি।

বিচার ব্যবস্থায় গতি আনা সরকারের জন্য একেবারেই অসম্ভব নয়, বরং সরকারের সদিচ্ছা থাকলে যেকোনো মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব বলে উল্লেখ করেন— সেন্টার ফর দ্য এনফোর্সমেন্ট অফ হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লিগ্যাল এইড (সিএইচআরএলএ), ঢাকা সেন্ট্রাল ব্রাঞ্চের অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক লায়ন মো. এ এইচ রোমিও।

তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘সরকার চাইলে অবশ্যই সম্ভব—যেকোনো মামলার দ্রুত বিচারকার্য সম্পন্ন করা। কিন্তু আমরা সরকারকে যে মূল বার্তাটি দিতে চাই তা হলো, কেবল ভাইরাল হওয়া মামলা কিংবা গণমাধ্যমের চাপের কারণেই যেন কোনো মামলার বিচার সম্পন্ন না হয়। সকল মামলার বিচার যেন সমান গুরুত্বের সঙ্গে এবং যথাসময়ে কার্যকর করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বিচারপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হলো অসমতা। ভাইরাল না হলে, সামাজিক বা রাজনৈতিক চাপ না থাকলে অনেক মামলাই বছরের পর বছর ধরে পড়ে থাকে। এই পদ্ধতি থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে’

লায়ন রোমিও আরও বলেন, ‘মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে আমাদের ন্যায়ের ভিত্তি সুদৃঢ় করতে হবে। এর জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা জরুরি—তা সে যত ছোট মামলাই হোক না কেন।’