রাবির সাবেক উপাচার্যের ‘দুর্নীতি’ তদন্তে অসহযোগিতা প্রশাসনের, মামলা করতে পারে দুদক
- ২২ মে ২০২৫, ০৮:২৬
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ জন্য তার বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে একাধিকবার চিঠিও দিয়েছে সংস্থাটি। তবে সহযোগিতা পায়নি দুদক। ফলে সোবহানের দুর্নীতিবিষয়ক তদন্তের কাজ বিলম্ব হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, বারবার তথ্য চেয়েও সহযোগিতা না পাওয়ায় রাজশাহীর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের বিরুদ্ধে যেকোনও সময় মামলা হতে পারে। দুদকের ১৯(৩) ধারায় বলা হয়েছে, কোনও প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাছে তথ্য চেয়ে সহযোগিতা না পেলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে দুদক।
আব্দুস সোবহানের দুর্নীতির তথ্য ও রেকর্ডপত্র সরবরাহের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে কয়েক দফায় পাঠানো হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ফলে অনুসন্ধানের কাজ বিঘ্নিত ও বিলম্বিত হচ্ছে।
জানা গেছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিপুল সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আছে সাবেক উপাচার্যের বিরুদ্ধে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ১৩৮ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে নিয়োগ দেন তিনি। এ ছাড়াও বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকায় তদন্ত শুরু করে দুদক।
আব্দুস সোবহানের দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান করতে কমিশনের উপ-পরিচালক মো. সাইদুজ্জামানকে দলনেতা করে তিন সদস্যবিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করেছে দুদক। দুই সদস্য হলেন, আফনান জান্নাত কেয়া ও মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।
দুদকের সহকারী পরিচালক খোরশেদ আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, আব্দুস সোবহানের দুর্নীতির তথ্য ও রেকর্ডপত্র সরবরাহের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে কয়েক দফায় পাঠানো হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ফলে অনুসন্ধানের কাজ বিঘ্নিত ও বিলম্বিত হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আব্দুস সোবহানের বিষয়ে যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে, তা হলো— অধ্যাপক এজাজুল হকের নেতৃত্বে গঠিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা (পিজিডি)’ প্রকল্পের ৩ কোটি টাকা অনিয়মের প্রমাণ পাওয়াসংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদনের সত্যায়িত ফটোকপি। এ তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গৃহীত ব্যবস্থাসমূহের বিস্তারিত বিবরণ ও রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ফটোকপিও চাওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া আব্দুস সোবহানের মেয়াদ শেষে ৩৪ কোটি ৬১ লক্ষ টাকা ঘাটতি সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি; তার কর্মকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের খাতভিত্তিক আয় ও ব্যয়ের বিবরণী (অর্থ বছরভিত্তিক); সোবহানের মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সানজানা সোবহান ও জামাতা এ টি এম সাহেদ পারভেজ-এর এনআইডি বা স্মার্ট কার্ডের ফটোকপি; মো. আব্দুস সোবহান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পাওয়ার পূর্বের এবং পরের কর্মকর্তা বা কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালার সত্যায়িত ফটোকপি চেয়েছে দুদক।
সোবহানের ব্যক্তিগত নথির সত্যায়িত ফটোকপি; তার সময়ে গৃহীত প্রকল্পের নাম, প্রাক্কলিত টাকার পরিমাণ, প্রাপ্ত টেন্ডারের সংখ্যা, টেন্ডার আহ্বানের পদ্ধতি, কার্যাদেশ প্রদ্দত্ত টাকার পরিমাণ, পরিশোধিত টাকার পরিমাণ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানা, প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার নাম, পদবি ও তাদের স্বদায়িত্ব সব ডকুমেন্টের ফটোকপিও চাওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: মন্ত্রণালয়-মাউশির ভুলে কর্মচারীদের উৎসব ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব ফাইলবন্দি
অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, তারা বেশ কয়েকবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। কিন্তু কোনও ধরনের তথ্য তাদের কাছ থেকে পাননি। ফলে তদন্তের কাজ বিলম্ব হচ্ছে। তারা আবারও দেখবেন। যদি তথ্য না পান, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে দুদক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে দুদকের চিঠি এসেছে কিনা জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ বলেন, ‘দুদক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে আমার। তবে তারা যেসব তথ্য চেয়েছেন, তার মধ্যে কিছু তথ্য দিতে পেরেছি। অনেক তথ্যই আমাদের কাছে নেই। ফলে আমরা সময় নিয়েছি।’
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘দুদকের একজন কর্মকর্তাকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আমার কাছে এসেছিলেন। দুদক যেসব তথ্য আমাদের কাছে চাইবে, সব ধরনের তথ্য দেওয়ার জন্য আমি বলে দিয়েছিলাম। কিন্তু কেন দেয়নি, সে বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিচ্ছি।’