বিদেশে উচ্চশিক্ষা: সাশ্রয়ী খরচ ও সহজে ভিসা সুবিধা প্রাপ্তিতে আদর্শ ৮ দেশ
- ২০ মে ২০২৫, ১৪:০৭
বর্তমানে বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা শিক্ষার্থীদের একটি স্বপ্ন। কিন্তু উচ্চ খরচ ও জটিল ভিসাপ্রক্রিয়া অনেক শিক্ষার্থীর স্বপ্নকে বাধাগ্রস্ত করে। তবে কিছু দেশ রয়েছে যেখানে কম খরচে এবং সহজ ভিসাপ্রক্রিয়ায় মানসম্মত উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব। আজ আমরা এমন ৮টি দেশ নিয়ে আলোচনা করব যেখানে উচ্চশিক্ষার খরচ অন্যান্য দেশের তুলনায় কম এবং স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়া তুলনামূলকভাবে সহজ। চলুন জেনে নিই সেই দেশগুলো সম্পর্কে।
১. পোল্যান্ড
সাশ্রয়ী মূল্যে শিক্ষা, নিরাপদ পরিবেশ ও বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের কারণে জনপ্রিয়তা অর্জন করছে পোল্যান্ড। ভিসাপ্রক্রিয়া সহজ ও স্বচ্ছ হওয়ায় দেশটির প্রতি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ রয়েছে। আবেদনকারীদের মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশই ভিসা পেয়ে যান। তাই শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে সহজলভ্য অধ্যয়নের গন্তব্যগুলোর মধ্যে এটি একটি হতে পারে।
২. তুরস্ক
তুরস্ক, এশিয়া ও ইউরোপের মিলনস্থলে অবস্থিত একটি অনন্য দেশ, যা শুধু প্রাচীন স্থাপত্যের জন্য নয়, বরং মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থার জন্যও বিখ্যাত। ইউরোপীয় উচ্চশিক্ষা অঞ্চলের অংশ হওয়ায়, তুর্কি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ডিগ্রি পুরো ইউরোপে স্বীকৃত। সাশ্রয়ী টিউশন ফি ও জীবনযাত্রার তুলনামূলক কম খরচ শিক্ষার্থীদের জন্য তুরস্ককে একটি আদর্শ গন্তব্যে পরিণত করেছে। একজন শিক্ষার্থীকে সাধারণত প্রতি শিক্ষাবর্ষে ১০০ থেকে চার হাজার ইউরোর মতো খরচ করতে হয়। যা বিশ্ববিদ্যালয় ও কোর্সের ওপর নির্ভর করে। একজন বিদেশি শিক্ষার্থী প্রতি মাসে ৪০০ থেকে ৬৫০ ইউরো বাজেটের মধ্যে তুরস্কে থাকতে পারে।
আরও পড়ুন: জেনে রাখুন বিশ্বসেরা ২৯ স্কলারশিপের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট
৩. জার্মানি
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচ্চমানের শিক্ষাব্যবস্থা ও টিউশনমুক্ত নীতির কারণে জার্মানি অনেকটাই এগিয়ে অন্য অনেক দেশের চেয়ে। দেশটিতে স্টুডেন্ট ভিসা গ্রহণের হার ৯০ শতাংশেরও বেশি। স্টেম (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল, গণিত) প্রোগ্রামের জন্য আবেদনকারী শিক্ষার্থীরা প্রায়ই সহজেই ভিসা পেয়ে যান। এ ছাড়া জার্মানি ১৮ মাসের পোস্ট-স্টাডি ওয়ার্ক ভিসা প্রদান করে, যা স্নাতকদের পড়াশোনা শেষে চাকরি খুঁজতে সাহায্য করে।
৪. ফ্রান্স
ফ্রান্সও সহজলভ্য ভিসা প্রক্রিয়ার কারণে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে শিক্ষার্থীদের কাছে। স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে প্রায় ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ভিসা পেয়ে থাকেন। ন্যূনতম ডকুমেন্টেশন ও ভিসা প্রক্রিয়াকরণ তুলনামূলকভাবে দ্রুত হয়ে থাকে। ফ্রান্স জনপ্রিয় অধ্যয়নের গন্তব্য হওয়ার পেছনে ব্যবসা, আতিথেয়তা এবং ফ্যাশনও একটি কারণ বলে মনে করা হয়।
/Turkie.jpg)
৫. অস্ট্রিয়া
অস্ট্রিয়া, ইউরোপের শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ একটি দেশ, যা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় একটি গন্তব্য। এখানকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতি সেমিস্টারে মাত্র ২০ ইউরো নিবন্ধন ফি এবং টিউশন ফি বাবদ গড়ে ৭২৬.৭২ ইউরো খরচ হয়। তবে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় টিউশন ফি ছাড়াই পড়ার সুযোগ দেয়।
ভিয়েনা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়, ইনসব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়, জোহানেস কেপলার ইউনিভার্সিটি লিঞ্জ, গ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং লিওবেন বিশ্ববিদ্যালয় এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। এ ছাড়া, মাসে ৯০০ থেকে ১,৩০০ ইউরো বাজেটের মধ্যে ভিয়েনা বা সালজবার্গে একজন শিক্ষার্থী আবাসন, খাবার ও পাবলিক পরিবহনের সব খরচ সহজেই মেটাতে পারেন।
৬. সংযুক্ত আরব আমিরাত
ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায়িক প্রোগ্রামে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত পছন্দের একটি গন্তব্য হয়ে উঠেছে। দেশটি সাধারণত ৩০ দিনেরও কম সময়ে স্টুডেন্ট ভিসা প্রক্রিয়া করে এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য পাঁচ বছর পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি ভিসা প্রদান করে। ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ভিসা গ্রহণের হার এবং সামগ্রিক শিক্ষার খরচ কম থাকায় মধ্যপ্রাচ্যর দেশটির প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ছে।
/UAE.jpg)
৭. ফিলিপাইন
ফিলিপাইন চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা-সম্পর্কিত শিক্ষা প্রোগ্রামের জন্য বেশ পরিচিত। ভিসা আবেদনপ্রক্রিয়া সহজ ও টিউশন ফি পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। ভিসা গ্রহণের হার ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশের মধ্যে।
৮. নরওয়ে
নরওয়ে, ইউরোপের অন্যতম শান্তিপূর্ণ ও উন্নত দেশ, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষায় টিউশন ফি-মুক্ত সুবিধা প্রদান করে। জার্মানির মত এখানকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও টিউশন ফি নেই। শিক্ষার্থীদের শুধু প্রতি সেমিস্টারে ৩০ থেকে ৬০ ইউরো ইউনিয়ন ফি দিতে হয়, যা পাবলিক পরিবহন, জাদুঘর, সাংস্কৃতিক ইভেন্ট, স্বাস্থ্যসেবা এবং ক্রীড়া সুবিধাসহ বেশ কিছু সুবিধা প্রদান করে।
তবে নরওয়ের বড় শহরগুলোতে জীবনযাত্রার ব্যয় তুলনামূলকভাবে বেশি। প্রতি মাসে একজন শিক্ষার্থীর প্রায় ৮০০ থেকে ১,৪০০ ইউরো পর্যন্ত খরচ হতে পারে। অন্যদিকে, ছোট শহরগুলোতে ৮০০ থেকে ১,০০০ ইউরোর মধ্যেই থাকা-খাওয়া এবং অন্যান্য দৈনন্দিন খরচ সহজেই মেটানো যায়।