জবি শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে গঠন হচ্ছে বিশেষ কমিটি
- ২০ মে ২০২৫, ১৪:০৭
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে বিশেষ কমিটি গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) এক সদস্যের নেতৃত্বে কমিটিতে থাকবেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষা ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দুই অতিরিক্ত সচিব এবং সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি। এ ছাড়া কমিটিতে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন আরও সদস্য নেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ সূত্র।
সূত্র জানায়, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল নির্মাণ ও কেরানীগঞ্জে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ যাতে দ্রুত হয়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে।
শনিবার ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ গণমাধ্যমকে বলেন, 'জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলের কাজ দ্রুত করা হবে। আমি নিজে গিয়ে দেখেছি, দাঁড়ানোর জায়গা নেই, বসা যায় না। এভাবে একটি ক্যাম্পাস চলতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য বরাদ্দ বাড়ানো হবে।'
৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন বৃত্তি, প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট অনুমোদন, দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ একনেক সভায় পাস ও বাস্তবায়ন দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে টানা চার দিন আন্দোলন করেন জবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবি এতে যোগ হয়। এক পর্যায়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় অধ্যাপক ফায়েজ গিয়ে দাবি পূরণের ঘোষণা দেন এবং শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্র জানায়, আশ্বাস অনুযায়ী দাবি পূরণের কাজ শুরু হয়েছে। জবি উপাচার্যকে আগামী তিন দিনের মধ্যে আবাসিক হল নির্মাণের বিষয়ে প্রকল্প প্রস্তাব ও ডিজাইন তৈরি করে সরকারের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে জানান, আবাসিক হলের প্রকল্প প্রস্তাব সোমবার মন্ত্রণালয়ে জমা দেবেন তারা। সরকার অনুমোদন দিলে নির্মাণকাজ দ্রুত শুরু হবে। তিনি বলেন, 'সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বৃদ্ধি করবে। খুব দ্রুত অস্থায়ী হল নির্মাণ করা হবে। নতুন ক্যাম্পাসের কাজ দ্রুত বাস্তবায়নে সবকিছু করা হবে।'
সূত্র জানায়, আবাসন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকরের বিষয়ে সরকার একমত নয়। ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের কোনো দেশে এমন নজির নেই।
এ ব্যাপারে ইউজিসি চেয়ারম্যান সরাসরি উত্তর দেননি। তিনি বলেন, 'শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক ও নৈতিক দাবিগুলো সরকার পূরণ করবে।'
১৮৫৮ সালে প্রতিষ্ঠা পাওয়া জগন্নাথ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয় ২০০৫ সালে। শুরু থেকেই শিক্ষার্থীরা ভুগছেন আবাসন সংকটে। শিক্ষার পরিসর বাড়লেও আবাসন সমস্যার সমাধান হয়নি। ২০১৪ সালেও আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।
বেদখল হলগুলোর মধ্যে পুরান ঢাকার ওয়াইজ ঘাটের ৮ দশমিক ৮৮৯ কাঠার তিব্বত হলের জমিতে 'গুলশান আরা সিটি মার্কেট' নির্মাণ করেছেন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি হাজী সেলিম। বেদখল অন্য হলের মধ্যে রয়েছে- আরমানিটোলার ২৫ দশমিক ৭৭ কাঠায় দ্বিতল ভবন আবদুর রহমান হল, আরমানিটোলার মাহুতটুলীর ৪০ কাঠায় আনোয়ার শফিক হল, ওয়ারীর টিপু সুলতান রোডের গোপীমোহন বসাক লেনে এক বিঘা জমিতে নজরুল ইসলাম হল (আংশিক উদ্ধার)। এই হলের বিপরীতে ২৩ কাঠা জমিতে অধ্যক্ষ সাইদুর রহমান ও আব্দুর রউফ রহমান হল, রমাকান্ত নন্দী লেনের ৫ কাঠায় আজমল হোসেন হল, বংশালের পুরানা মোগলটুলীর বজলুর রহমান হল।
পুরান ঢাকায় ৭ একর জমিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস। জমির সংকুলান না হওয়ায় কেরানীগঞ্জে নতুন ক্যাম্পাস করতে ২০০ একর জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। ২০১৭ সালে সেই প্রকল্পের অনুমোদন পেলেও এখনো কাজ শেষ করতে পারেনি প্রশাসন। তবে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণের বাকি কাজ সেনাবাহিনীর হাতে হস্তান্তরের প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সরকারি বরাদ্দের ক্ষেত্রে তারা বৈষম্যের শিকার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২০১ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ৫০ কোটি বেশি। শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও পেনশনে ব্যয় হয় ১১৬ কোটি ৬২ লাখ টাকার বেশি। ইউজিসি থেকে ১৫৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা আসবে ধরে নিয়ে বাজেট দেওয়া হয়। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব খাত থেকে আয় ধরা হয় ৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে জবির প্রায় ১৯ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ইউজিসির বরাদ্দ ১৫৪ কোটি টাকা, যা অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় বেশ কম।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করছে। সব পক্ষের সহযোগিতায় দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।
তিনি জানান, দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণ একটি পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প। অর্থাৎ, মাস্টারপ্ল্যানের অধীনে নির্মাণ প্রকল্পের অংশ বিশেষ যথাযথ প্রক্রিয়ায় উপস্থাপন করা হলে একনেক দ্রুত অনুমোদন দেবে।