গাজায় গণহত্যার নিন্দা করায় শিক্ষার্থীর সনদ আটকে দিল নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়
- ১৯ মে ২০২৫, ০৯:০৮
গাজায় চলমান ইসরায়েলি গণহত্যা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা নিন্দা জানানোয় নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি এক শিক্ষার্থীর স্নাতকের সনদ আটকে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যালাটিন স্কুল অব ইন্ডিভিজুয়ালাইজড স্টাডিজের স্নাতক শিক্ষার্থী লোগান রোজোস।
গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে রোজোস বলেন, “বর্তমানে গাজায় যে গণহত্যা চলছে, তা রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করছে। এটি আমাদের করের অর্থ দিয়ে চলছে এবং গত ১৮ মাস ধরে সরাসরি আমাদের মোবাইল ফোনে সম্প্রচারিত হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমি আজ শুধু আমার রাজনৈতিক মতামত ব্যক্ত করতে চাইছি না, বরং সকল বিবেকবান মানুষের পক্ষ থেকে কথা বলতে চাই, যারা এই নৃশংসতার নৈতিক আঘাত অনুভব করেন।”
রোজোস স্পষ্ট করে বলেন, “আমি এই গণহত্যা এবং এতে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে যারা জড়িত, তাদের সহায়তাকে আমি ঘৃণাভরে নিন্দা জানাই।”
তার বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস ও সমর্থনের পাশাপাশি তাকে উৎসাহও দেন শ্রোতারা।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার এই বক্তব্যকে একপাক্ষিক ও ব্যক্তিগত রাজনৈতিক মত প্রকাশ হিসেবে অভিহিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়। তারা অভিযোগ করে, রোজোস তার ভাষণের খসড়া জমা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম মেনে চলেননি।
তাদের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা তার সনদ স্থগিত রেখেছি এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। আমরা দুঃখিত যে, আমাদের অতিথিরা এই ধরনের বক্তব্য শুনতে হয়েছে এবং একজন ব্যক্তি তার প্রাপ্ত বিশেষ সুযোগের অপব্যবহার করেছে।”
এদিকে আল মায়াদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটি নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ঘটনা নয় যেখানে ইসরায়েলবিরোধী মত প্রকাশের কারণে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালের আগস্টে বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ‘ছাত্র আচরণ বিধি’ হালনাগাদ করে ‘জায়নিস্ট’ শব্দের ব্যবহারকেও নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে বৈষম্য ও হয়রানির আওতায় আনে।
সেখানে উল্লেখ করা হয়, “অনেক ইহুদি মানুষের কাছে জায়নবাদ তাদের ধর্মীয় পরিচয়ের অংশ। তাই ইহুদি বা ইসরায়েলিদের বিরুদ্ধে যেসব বক্তব্য ননডিসক্রিমিনেশন অ্যান্ড অ্যান্টি-হারাসমেন্ট নীতিমালা লঙ্ঘন করে, ঠিক তেমনি জায়নিস্টদের উদ্দেশ্যে এমন বক্তব্যও NDAH নীতিমালা লঙ্ঘন করতে পারে।”
এই পরিবর্তনের পেছনে গাজায় চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভকে প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয়। প্রতিবাদের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাসে পুলিশ ডেকে আনে, যার ফলে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ব্যাপক গ্রেফতার হয়।
২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় লাভবান কোম্পানিগুলো থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনিয়োগ প্রত্যাহারের দাবিতে সিট-ইন আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় দুই স্থায়ী অধ্যাপক—অ্যান্ড্রু রস ও সোনিয়া পসমেনটিয়ারকে ‘পার্সোনা নন গ্রাটা’ ঘোষণা করা হয় এবং তাদের নির্দিষ্ট ক্যাম্পাস ভবনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়।