ইবির নতুন ভবনেও বাসিন্দা নেই, তবুও নির্মাণ হচ্ছে ১০তলা ভবন
- ১৪ মে ২০২৫, ০৩:৫৪
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আবাসিক এলাকায় একদিকে শিক্ষকদের জন্য নির্মিত ভবনগুলো খালি পড়ে রয়েছে, অন্যদিকে নির্মাণাধীন হচ্ছে আরও দুটি ১০ তলা ভবন। নব্বইয়ের দশকে নির্মিত কয়েকটি ভবন অনেক আগেই পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে, আবার নতুন আধুনিক ভবনেও অধিকাংশ ফ্ল্যাট ফাঁকা। ফলে বাস্তবতার সঙ্গে বেমানান হয়ে উঠেছে এহেন নির্মাণ কার্যক্রম।
তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ে সাতটি ভবনে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য মোট ৬৯টি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৫০টিই খালি। নব্বইয়ের দশকে নির্মিত পদ্মা, যমুনা ও মেঘনা ভবনে ২৪টি ফ্ল্যাট থাকলেও ১৪টিতে কেউ থাকেন না। কর্ণফুলী ও কপোতাক্ষ ভবন দুটিকে কার্যত পরিত্যক্ত বলা চলে। চারতলা এসব ভবন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
শুধু পুরোনো ভবনই নয়, কয়েক বছর আগে নির্মিত একটি আধুনিক দশতলা ভবনে ১৯টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ১১টি ফাঁকা। একইভাবে প্রভোস্টদের জন্য তৈরি কোয়ার্টারেও ১০টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ৮টিই খালি পড়ে আছে।
আরও পড়ুন: ইবি শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে আওয়ামীপন্থিদের অংশগ্রহণ রুখে দেওয়ার ঘোষণা শিবিরের
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নির্মিত কোয়েল ভবনের ১০টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ৮টি, ময়না ভবনের ৯টি ফ্ল্যাট ফাঁকা থাকলেও দোয়েল ভবনটি পূর্ণ বাসিন্দায় পরিপূর্ণ। তবে ব্যবহার না হওয়ায় অন্যান্য ভবনগুলোতে জঙ্গল গজিয়ে উঠেছে, দেয়ালজুড়ে জমেছে শ্যাওলা—পুরোপুরি ভুতুড়ে পরিবেশ।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভবনগুলো ক্রমেই জরাজীর্ণ হয়ে পড়ছে। একসময় যেখানে এসব ভবন পুরোপুরি ভাড়া ছিল, আজ সেখানে নীরবতা আর পরিত্যক্ততার ছাপ স্পষ্ট।
শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দুই বছর আগেও সব ভবন প্রায় পরিপূর্ণ ছিল। তখন কোয়ার্টারের ভাড়া ছিল মাত্র ৩ হাজার ৭৫০ টাকা। কিন্তু ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সরকার নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী ভাড়া বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় বেতনের এক বিশাল অংশ—২১ হাজার ২০৮ টাকা পর্যন্ত। ফলে অধিকাংশ বাসিন্দাই কোয়ার্টার ছেড়ে দিয়েছেন।
পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত ২৮ অক্টোবর ভাড়ার যৌক্তিক পুনঃনির্ধারণের জন্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল হান্নান শেখকে আহ্বায়ক করে একটি ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করেন। এস্টেট অফিসের উপ-রেজিস্ট্রার মোয়াজ্জেম হোসেন (বর্তমানে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন পরিচালক) ছিলেন সদস্য-সচিব। দীর্ঘ যাচাই-বাছাই শেষে কমিটি তাদের সুপারিশ জমা দিয়েছে, যেখানে পুরাতন ভবনের অনুপযোগিতার বিষয়টি বিশেষভাবে উঠে এসেছে।
কমিটির আহ্বায়ক ড. হান্নান শেখ বলেন, “আমরা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখেছি। পুরোনো ভবনগুলো এখন আর শতভাগ উপযোগী নয়—দেয়ালের প্লাস্টার খসে পড়েছে, পানির লাইন নষ্ট। আমরা সুপারিশ করেছি, অডিট আপত্তির বিষয় মাথায় রেখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে ভাড়া কমিয়ে এসব ভবন ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হোক।”
আরও পড়ুন: দেশব্যাপী ধর্ষণ ও আইনশৃঙ্খলার অবনতির প্রতিবাদে ইবি ছাত্রদলের মানববন্ধন
এ বিষয়ে ট্রেজারার অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “বিদ্যমান ভবন খালি থাকলেও নতুন ভবন নির্মাণকে আমি অর্থের অপচয় মনে করি না। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ও সুযোগ-সুবিধা শহরের তুলনায় ভিন্ন। আমরা ইউজিসিকে জানিয়েছি যেন বাসাভাড়া নির্ধারণে এসব বিষয় বিবেচনায় নেয়া হয়। প্রয়োজনে আমরা মন্ত্রণালয়ের সাথেও কথা বলবো।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নকীব নসরুল্লাহ বলেন, “কিছু ভবনকে আমরা পরিত্যক্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছি। এগুলোর সংস্কার দরকার। নতুন দশতলা ভবন ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে করা হচ্ছে। এখন বাসিন্দা না থাকলেও একদিন এসব ভবনে বসবাসকারীরা থাকবে—এই আশা নিয়েই আমরা এগোচ্ছি। নাগরিক সুবিধার সীমাবদ্ধতা থাকায় পূর্ণ ভাড়া কার্যকর করা কঠিন। ইউজিসিকে জানানো হয়েছে। বাসিন্দারা ফিরে এলে পরিবেশও বদলে যাবে।”