হজে শিশুদের অংশগ্রহণে শরিয়তের বিধান

হজে মা-বাবার সঙ্গে শিশু
হজে মা-বাবার সঙ্গে শিশু © সংগৃহীত

হজের মৌসুম এলেই সারা মুসলিম বিশ্বে বইতে থাকে আধ্যাত্মিক আবেগের বন্যা। দেশে দেশে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের হৃদয়ে জেগে ওঠে আল্লাহ প্রেমের উচ্ছ্বাস। শুরু হয় হজের প্রস্তুতির ব্যস্ততা। এই প্রস্তুতিতে যেমন প্রাপ্তবয়স্কদের দেখা যায়, তেমনি দেখা যায় ছোট ছোট শিশুদেরও—যাদের ওপর ইসলামি শরিয়তের কোনো ফরজ দায়িত্ব নেই।

তবুও সৌদি নাগরিকসহ বহু বাবা-মা হজের সফরে তাঁদের শিশু সন্তানদেরও সঙ্গে নিয়ে যান। এদের অনেকেই হজের প্রতিটি রীতিতে অংশ নেয়, যদিও তারা হজের অর্থ-উদ্দেশ্য বুঝে না। তখন স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে—শিশুরা কি হজ আদায় করতে পারে? শরিয়তের দৃষ্টিতে তাদের হজের বিধান কী?

এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমরা ফিরে যাই প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর যুগে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) একবার রাওহা নামক স্থানে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একদল আরোহীর সঙ্গে সাক্ষাতের ঘটনা বর্ণনা করেন, যেখান থেকে আমরা শিশুর হজ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা পাই।

তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা কোন সম্প্রদায়ের লোক?’ তারা বলল, ‘আমরা মুসলিম।’ তারা জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি কে?’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)।’ এরপর এক মহিলা নবীজি (সা.)-এর সামনে একটি শিশুকে তুলে ধরে জিজ্ঞেস করল, ‘এর জন্য হজ আছে কি?’ নবীজি (সা.) বললেন, ‘হ্যাঁ, এবং এতে তোমার জন্য সওয়াব রয়েছে’ (মুসলিম : ৩১৪৪)। ইবনে ইয়াজিদ (রা.) বলেন, আমার পিতা আমাকে নিয়ে বিদায় হজে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে হজ করেছেন। আমার বয়স তখন সাত বছর ছিল। (তিরমিজি : ৯২৮)

এসব হাদিসের আলোকে আলেমগণ বলেন, হজ মূলত প্রাপ্তবয়স্কদের ওপর ফরজ হলেও শিশুদের জন্যও পালন করা জায়েজ। নামাজ-রোজা যেমন শিশুদের ওপর ফরজ না হওয়া সত্ত্বেও পালন করলে সওয়াব হয় তদ্রূপ শিশুরা হজ পালন করলেও সওয়াব হয়। আর এ সওয়াব পাবে সাহায্যকারী তথা তার বাবা-মা। এ ক্ষেত্রে শিশু ছেলে হোক বা মেয়ে কিংবা বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন হোক বা একেবারে বিবেকবুদ্ধিহীন হোক, হজ পালন করার ক্ষেত্রে কোনো পার্থক্য নেই। তবে শিশুদের পালনকৃত হজ নফল হজ হিসেবে গণ্য হবে। শিশু অবস্থায় পালনকৃত হজ প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর ফরজ হজের জন্য যথেষ্ট নয়। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর যদি হজ ফরজ হয়, তা হলে তাকে পুনরায় হজ আদায় করতে হবে।

সাধারণত হজের যেসব করণীয় রয়েছে তা শিশুদের জন্যও প্রযোজ্য। তবে কিছু বিষয়ে শিশুদের জন্য শিথিলতা রয়েছে। শিশু যদি একেবারে বিবেকবুদ্ধিহীন হয়, তা হলে তার পক্ষ থেকে তার বাবা-মা ইহরামের নিয়ত করবেন এবং তার পক্ষ থেকে তার বাবা-মা হজের সব কার্যক্রম সম্পাদন করবেন। তবে যথাসাধ্য তাদের ইহরাম পরিপন্থি সব বিষয় থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করবে এবং তাওয়াফ চলাকালীন তাদের কাপড় ও শরীর পবিত্র রাখারও চেষ্টা করবে। 

তা সত্ত্বেও যদি তাদের থেকে ইহরাম পরিপন্থি কোনো কাজ প্রকাশ পায়, তা হলে তাদের বা বাবা-মা কারও ওপর দম ওয়াজিব হবে না তথা পশু কুরবানি করতে হবে না। আর শিশু যদি বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন হয়, তা হলে তার ইহরাম সে নিজেই বাঁধবে। সেই সঙ্গে যেসব বিষয়ের প্রতি প্রাপ্তবয়স্ক ইহরাম পরিহিতরা যত্নবান থাকে সেসব বিষয়ের প্রতি যত্নবান থাকবে। 

তদ্রূপ যেসব কাজ সে নিজে সম্পাদন করতে সক্ষম সেসব কাজ সে নিজেই সম্পাদন করবে। চাই শিশু বিবেকবুদ্ধিহীন হোক বা বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন হোক। যেমন- আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা, মুযদালিফায় রাত যাপন করা ইত্যাদি। পক্ষান্তরে, যেসব কাজ সে নিজে করতে সক্ষম নয় তা বাবা-মা তার পক্ষ থেকে আদায় করতে পারবেন। যেমন- পাথর নিক্ষেপ করা। হজরত জাবের (রা.) বলেন, ‘আমরা যখন রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে হজ করি, তখন আমরা শিশুদের পক্ষ থেকে পাথর নিক্ষেপ করেছি’ (তিরমিজি : ৯৩৭)। তবে এক্ষেত্রে বাবা-মা প্রথমে তাদের নিজেদের হজ কার্য সম্পাদন করবেন। অতঃপর শিশুদের পক্ষ থেকে আদায় করবেন।