দুই বাংলার নাট্যজনদের নিয়ে রাবিতে ‘আনর্ত’র নাট্যমেলা শুরু

রাবিতে আজ সোমবার দুই বাংলার নাট্যকর্মীদের নিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো দুইদিনব্যাপী ব্যতিক্রমী নাট্যমেলার উদ্বোধন করা হয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) দুই বাংলার নাট্যকর্মীদের নিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো দুইদিনব্যাপী ব্যতিক্রমী নাট্যমেলা শুরু হয়েছে। মেলার আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার পত্রিকা ‘আনর্ত’। আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজী একাডেমিক ভবনের সামনে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। উদ্বোধন পর্ব শেষে একটি শোভাযাত্রা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে লিয়াকত আলী লাকী  বলেন, ‘আমাদেরকে বাংলা নাটক নিয়ে আরও ভাবতে হবে। কারণ নাট্য-সংস্কৃতিটাকে একটা শক্তি হিসেবে পরিচিত করানোর পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই। বাংলা নাটকের শক্তিটাকে উদ্ধার করা এবং আর্ন্তজাতিক বিশ্বে সুপ্রতিষ্ঠিত করা হোক আমাদের নাট্য আন্দোলনের অংশ।’

নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ বলেন, ‘নাটক যে শিল্পের অংশ, মানুষকে মানবিক করার অংশ, বুদ্ধিবিত্ত করার অংশ- এই বিষয়টি মানুষকে বোঝানো কঠিন। এ কারণে নাটক নিগৃহিত হয়, রাষ্ট্রক্ষমতায় যারা থাকেন তারা নাটককে গুরুত্ব দিতে চান না।’ তাই পরিশিলিত শিল্পের চর্চার কারণেই নাটককে গুরুত্ব দেওয়ার আহবান জানান তিনি। 

মলয় কুমার ভৌমিক বলেন, ‘আনর্ত একটি মঞ্চ। এই মঞ্চ থেকে আমরা চিৎকার করে বলতে চাই পৃথিবী অসাম্প্রদায়িক হোক, ভেদাভেদ নাই হয়ে যাক, যুদ্ধ পালিয়ে যাক, সম্প্রীতি বাড়ুক।’

দুইবাংলার নাট্যজনদের মিলনমেলা: গ্রুপ থিয়েটার, গ্রাম থিয়েটার, থিয়েটারের মানুষ সকলেই মিলিত হয়েছিলেন আনর্ত আয়োজিত নাট্যমেলায়। মেলা ঘিরে মিলনমেলায় পরিণত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজী ভবন প্রাঙ্গন। নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, মামুনুর রশীদ, লিয়াকত আলী লাকী, অংশুমান ভৌমিক, মলয় কুমার ভৌমিক, বিপ্লব বালাসহ দুই বাংলার জনপ্রিয় প্রায় ৬০ জন নাট্যব্যক্তিত্ব এ মেলায় উপস্থিত ছিলেন। আয়োজনকে সকল গোত্রের, দলের, মতের উর্দ্ধে এসে একটি সম্মিলিত প্লাটফর্ম হিসেবে উল্লেখ করেন তারা।

এদিকে মেলার প্রথম দিনের চমক হিসেবে ছিলো কলকাতার রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের মোনালিসা চ্যাটার্জির উপস্থাপনায় নারী অস্তিত্বের সংগ্রাম, আরশি ও মনসামঙ্গল শীর্ষক নাট্যকথা। 

স্থিরচিত্রে চার যুগের থিয়েটার: এদিকে থিয়েটার উপকরণ নিয়ে আয়োজন ছিলো 'গৌরবের থিয়েটার চার যুগের উপস্থাপন' শীর্ষক স্থিরচিত্র প্রদর্শনী। সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজী ভবনের পাশের এই প্রদর্শনীতে ১৯৭৩ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত জনপ্রিয় দেশী-বিদেশী মঞ্চ নাটকের উপকরণসহ বিভিন্ন ধরনের ১৯০ টি চিত্র প্রদর্শন করা হচ্ছে।

আয়োজকরা বলেন, এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে চার যুগের থিয়েটারের বিবর্তন, উন্নয়নসহ বিভিন্ন দিক উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে।

এছাড়া দুই দিনব্যাপী এ আয়োজনে থাকছে, ২০টি নাট্যদলের অংশগ্রহণে নাট্য উপকরণ প্রদর্শনী, নাটক, নাটকের গান, নাট্য-আড্ডা, বৈঠক, বইয়ের হাট, রাজশাহী বিভাগীয় নাটকের উল্লেখযোগ্য দলসমূহের স্টল আর বিরতিহীন সৌহার্দ্য বিনিময়: থিয়েটারের মানুষে-মানুষে। মেলার পর্দা নামবে আগামীকাল মঙ্গলবার ।