ভাষা আন্দোলনের অজানা গল্প
- ৩০ নভেম্বর -০০০১, ০০:০০
কমলা ভট্টাচার্য। জন্ম তার বাংলাদেশের সিলেটে। ১৯৪৫ সালে। জীবনে হয়তো অনেক শখ ছিল তার। অনেক স্বপ্ন ছিল। যে স্বপ্নগুলো ছিল নক্ষত্রেভরা রাতের মতো। বাংলার অবারিত চির সবুজের মতো। কমলার জন্মের পর পরই নদী ভাঙার ন্যায় ভেঙে যায় এই দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। বিভক্ত হয়ে যায় আমার সোনার বাংলা। আমার প্রাণের বাংলা। কমলাদের পরিবার সিলেট ছেড়ে চলে যায় আসামের বরাক উপত্যকার শীলচরে। বাংলাদেশের সুরমা নদীর ভারতীয় নাম বরাক। এই বরাক নদীর জলেই মিশে গিয়েছিল কমলার রক্ত। যে রক্ত বয়ে গেছে বাংলাদেশের বুকের উপর দিয়ে। ভাষা শহীদ কমলার কথা স্মরণ করব আজ।
সেই বরাক নদী তীরবর্তী শীলচর উপত্যকা রঞ্জিত হয়েছিল কমলার রক্তে। ১৯৬১ সালের ১৯ মে, ভারতের অঙ্গরাজ্য আসামের শীলচরের বরাক নদীর তীর ঘটে যায় বাংলাকে প্রতিষ্ঠা করার আরেক আন্দোলন। বাংলাকে প্রাদেশিক সরকারের দাপ্তরিক ভাষা করার দাবিতে আন্দোলন করে আসামের বাংলা ভাষীরা। পুলিশ গুলি চালায় নির্বিচারে। শহীদ হন ১১ জন। রক্তমাখা রাজপথে পড়ে থাকে তাদের নিথর দেহ। শহীদদের মধ্যে অন্যতম ছিল আমাদের বোন কমলা ভট্টাচার্য। দশম শ্রেণি পেরিয়ে সবে মাত্র মেট্রিকুলেশন পরীক্ষা দিয়েছিল কমলা।
১৯৫২ সালের পর দ্বিতীয়বার বাঙালিরা প্রমাণ করল যে, ভাষার সম্মান মানে আমাদের মায়ের সম্মান। আমাদের অস্তিত্বের সম্মান। শীলচরের যে জায়গাটি শহীদদের রক্ত ধারণ করেছিল, সেই জায়গাটিতে বর্তমানে একটি রেল স্টেশন আছে। নাম তার ‘ভাষা শহীদ রেলস্টেশন’।
ভাষা শহীদরা আমাদের অহংকার। আমাদের চেতনার উৎস। আমাদের দেশপ্রেমের সূতিকাগার। প্রতি বছরই আমরা স্মরণ করি ভাষা শহীদদের। স্মরণ করি রফিক, সালাম, বরকতসহ নাম না জানা জীবনদানকারীদের। আজ না হয় স্মরণ করলাম আমাদের বোন কমলাকে। এভাবেই স্মরণ করে আসছি গত তিন বছর যাবৎ। যেদিন থেকে আমি কমলার আত্মত্যাগের কথা জানতে পারি, সেদিন থেকেই প্রতি ভাষা দিবসে স্মরণ করি তাকে।
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে স্মরণ করছি সকল শহীদদের। আসুন, আজ থেকে কুরুচিপূর্ণ বিদেশী চ্যানেল বর্জন করি। বিদেশী টিভি সিরিয়াল দেখা বর্জন করি। যারা ঐ সব দেখে তাদের প্রতিহত করি। রুখে দিই কতিপয় রেডিও চ্যানেলে বিকৃত বাংলা উচ্চারণ। বাংলা ভাষার অপব্যবহার বন্ধ করি। আসুন, বিশুদ্ধ বাংলায় মনের কথা বলি। ভালোবাসার কথা বলি। গান গাই প্রাণের বাংলা ভাষায়। প্রিয় বাংলা অক্ষর দিয়ে তৈরি করি কোমলমতি শিশুদের জন্য খেলনা। আসুন, শুদ্ধ বাংলায় কবিতা লিখি। গল্প লিখি। বাংলা কই পড়ার জন্য উৎসাহ দিই অন্যকে।
আসুন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাংলা ভাষাকে রক্ষা করি। চলুন সমাজের সর্বস্তরে মাতৃভাষা বাংলার ব্যাপক প্রসার ও প্রচলন করে দিই আজ থেকেই। যেমনটা জাপান করেছে। বর্তামানে যারা রয়েছে উন্নতির উচ্চ শিখড়ে। আশা করছি আমাদেরও সেই সুদিন আসবে। আমি বিদেশী ভাষাকে মোটেও খাটো করছি না। অসম্মান করছি না। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে ইংরেজি ভাষা শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। তবে নিজ দেশের ভাষার স্থান থাকতে হবে সবার উপরে। যেমন করে রাজার মাথায় মুকুট বসানো থাকে। আর বাংলা ভাষা আমাদের কাছে রাজ-মুকুটের মতই। বেঁচে থাকুক কমলার স্মৃতি। জাগ্রত হোক রফিক, সালাম আর বরকতদের আত্মত্যাগের মহিমা।
মো. মাহফুজুর রহমান, প্রভাষক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, নোয়াখালী সরকারী কলেজ।