ক্যারিয়ারে কতটুকু দরকার এমবিএ ডিগ্রি
- ৩০ নভেম্বর -০০০১, ০০:০০
ব্যবসায়ীক সমস্যাকে কিভাবে মুনাফায় রূপান্তর করে সমাধান করা যায়, অষ্টাদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে মানুষ যখন সেই চিন্তা করল। তখন থেকে ব্যবসায়ীক চিন্তা ও ধরণ পরিবর্তিত হয়। ওই সময়ে ব্যবসাগুলো দিন দিন বড় হচ্ছিল, নতুন নতুন সমস্যার আবির্ভাব হচ্ছিল। তখন ব্যবসায়ীদের মাথায় চিন্তা আসলো কিভাবে ভালোভাবে ব্যবসা করা যায়, এমন চিন্তা থেকে বিজনেস স্কুল যাত্রা শুরু হয়। কারণ সাধারণ পড়ালেখা দিয়ে ব্যবসায়ী সমস্যাগুলো সমাধান করা যাচ্ছিল না।
প্রথম দিকে বিজনেস স্কুলগুলো এমবিএ দিত, যেখানে যোগ্য ও উচ্চপদস্থ একজন ব্যক্তি একটা পর্যায়ে গিয়ে এমবি ডিগ্রি অর্জন করে এবং প্রতিষ্ঠানকে সামনে এগিয়ে নেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো দেখলো এমবিএ ডিগ্রিধারীরা খুব ব্যয় বহুল। তাই তারা জোড় দিলো বিবিএ করতে হবে। বিবিএ তে কিছু বেসিক জিনিস শিখানো হয়, যা দিয়ে মোটামুটি স্বাভাবিক কাজগুলো হয়ে যায়। আগে বেশি টাকা খরচ করে একটি প্রতিষ্ঠান এমবি ডিগ্রিধারী ব্যক্তিদেরকে নিতে কিন্তু এখন বিবিএ শেষ করা শিক্ষার্থীদের নিয়ে নিচ্ছে। সোজা কথা বলতে গেলে, বিবিএ তে প্রাথমিক জ্ঞান থাকে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে আর এমবিএ বিশদ তথ্য ও জ্ঞানের শাখা।
এমবি একটি প্রোফেশনাল ডিগ্রি। ওয়ার্ল্ডের ভালো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দুই থেকে তিন বছরের প্রোফেশনাল অভিজ্ঞতা ছাড়া এমবিএ করার সুযোগ দেয় না। একজন ব্যক্তি একটা প্রোফেশনে কয়েক বছর কাজ করার পর যখন বুঝতে পারবে আরো বেশি নলেজ অর্জন করা দরকার বা প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পর্যায়ে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে তখন সে একটি এমবিএ ডিগ্রি নিতে পারে। তবে যারা কোন চাকরির অভিজ্ঞতা ছাড়া এমবিএ করে যাচ্ছে, তাদের বিষয়টা হচ্ছে বিবিএ দিয়ে চাকুরি পাচ্ছে না। তাই এমবিএ করে তারপর ফ্রেসার হিসেবে চাকরিতে ঢুকছে। আর যে বিবিএ করে চাকরি করে এরপর এমবিএ ডিগ্রি নিচ্ছে সে খুব দ্রুত ক্যারিয়ারে উপরে উঠে যায়।
এমবিএ ডিগ্রি সিএ বা আইসিএমএ ডিগ্রি থেকে আলাদা। যারা সিএ বা আইসিএমএ ডিগ্রি নিচ্ছে তারা এ্যাকাউন্স বা অডিট সেক্টরে থাকছে। তারা কিন্তু ব্যবসা পরিচালনায় সরসরি আসার কথা না, কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় সিএ করা ব্যক্তিরা প্রতিষ্ঠানের লিডিং পর্যায়ে রয়েছে, এ সংখ্যাটা কম। এমবিএ হোল্ডাররা এ্যাকাউন্স পরিচালনা করে না কিন্তু এ্যাকাউন্ট হোল্ডাকে কাজের দিক-নির্দেশনা দেন। আর কোনো প্রতিষ্ঠানে যদি কেউ ডিরেক্টর বা সিইও হতে চায় সেক্ষেত্রে ম্যানেজমেন্ট, মার্কেটিং, ফিন্যান্স বা এইচআরএমের এর উপর এমবি ডিগ্রি যুগউপযোগী সিদ্ধান্ত। তবে, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির বিজনেস স্কুল নিয়ে আমি খুশি। কারণে এখানকার অধিকাংশ ফ্যাকাল্টি মেম্বার খুবই দক্ষ এবং খুবই অভিজ্ঞ। সব চেয়ে বড় দিক হলো সব শিক্ষককেরই ভাল মানের আন্তর্জাতিক এমবিএ ডিগ্রি আছে। সবারই কর্পোরেট জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা রয়েছে। যা বাংলাদেশের একটি বা দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে দেখা যায়। কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষার্থীদের ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ স্কলারশিপ দেয়া হয়।
চাকুরির থেকে আমরা বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি যোগ্য এমবিএ হোল্ডার তৈরির লক্ষ্যে। কারণ আমরা ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার চাকরির জন্য এক লাখ সিভি পাই, কিন্তু এক লাখ টাকার চাকরির জন্য তেমন ভালো সিভি পাই না। তো এ চিত্র থেকে বুঝা যায়, আমরা যোগ্য এমবিএ ফোল্ডার তৈরি করতে পারছি না। তাই আমরা শিক্ষার্থীদের যোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করছি। এছাড়া, আমাদের ১৫ থেকে ২০ কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এমওইউ চুক্তি করার আছে। সেখানে শিক্ষার্থীরা ইন্টার্নশিপ করতে পারবে এবং চাকুরির ক্ষেত্রে বিশাল সুযোগ পাবে বলে আমি মনে করি।
মোটা দাগে বলতে গেলে, কয়েকটি সুনির্দিষ্ট পয়েন্ট বলা যায় এ বিষয়ে। দ্রুত চাকুরীর সুযোগ করে দেয় এমবিএ ডিগ্রি। শুধু তাই নয়, অন্যদের তুলনায় বেশি বেতনের চাকুরি পেতে সহায়তা করে। যাদের আগে থেকে নিজেই নিজের বস হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন তাদের স্বপ্ন আরও প্রখর করে তোলে এমবিএ। উদ্যোক্তা বা বস হওয়ার এটাই উত্তম উপায়। কর্পোরেট দুনিয়ায় সবচেয়ে ভাল ক্যারিয়ারের সুযোগ দেয় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো। নামীদামী বিশ্বসেরা কোম্পানিগুলোতে এমবিএ মানেই হলো একধাপ এগিয়ে থাকলেন আপনি। আর এমবিএ সারা বিশ্বের স্বীকৃত একটি ডিগ্রি। প্রফেশনাল নেটওয়ার্কিং বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে এ প্রফেশনাল ডিগ্রিতে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, বিজনেস স্কুল, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।