অর্থের অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না তরুণীর, ছেড়ে চলে যান স্বামীও

এক বছর আগে ২০২৩ সালে নাজমিন নাহারকে রংপুরের বাসিন্দা খালেক নামের এক পোশাকশ্রমিকের সঙ্গে বিয়ে দেন তার পরিবার। অভাব-অনটনের সংসার হওয়ায় স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় গিয়ে পোশাক কারখানায় কাজ শুরু করেন নাজমিন। পাঁচ মাস আগে হঠাৎ অসুস্থ হলে বাড়ি চলে আসেন তিনি। চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জানা যায়, তার হার্টের দুটি ভালভ নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু উন্নত চিকিৎসা করাতে দরকার অনেক টাকা।

এদিকে স্ত্রীর অসুস্থতা ও চিকিৎসার খরচের কথা শুনে নাজমিনকে ছেড়ে চলে যান তার স্বামী খালেক। বাবাহারা নাজমিনের পরিবারে লেগে আছে অভাব। কিন্তু উন্নত চিকিৎসা করাবেন, সেই সামর্থ্য নেই তাদের। এ অবস্থায় দেশবাসীর সহযোগিতায় বাঁচার আকুতি জানিয়েছেন নাজমিন।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের মৌলভীপাড়া এলাকার মৃত জাবেদ আলী-মর্জিনা বেগম দম্পতির আট সন্তানের মধ্যে পঞ্চম নাজমিন।

সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, বিধবা মায়ের ঘরে আশ্রয় নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে দিন কাটছে নাজমিনের। তাদের দিন এনে দিন খাওয়ার অবস্থাও নেই। কারণ উপার্জনক্ষম কোনো পুরুষও নেই পরিবারে।

জানতে চাইলে অসুস্থ নাজমিনের পরিবার জানান, চিকিৎসক জানিয়েছেন, উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন নাজমিন। তবে এতে খরচ হবে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। এদিকে টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা করাতে না পারায় অনেকটাই মানবেতর দিন কাটছে পরিবারটির।

কুড়িগ্রামের হক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোস্তাফিজুর রহমানের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছেন নাজমিন নাহার। ওই চিকিৎসকের বরাতে পরিবার জানিয়েছেন, উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা সম্ভব।

অসুস্থ নাজমিন নাহার দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমার অসুখ দেখে আমার স্বামী আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। আমার বাবাও নেই যে চিকিৎসা করবে। মায়ের সংসারে অভাব থাকার কারণে আমার দুই ভাই এতিমখানায় থাকে। উন্নত চিকিৎসা তো দূরের কথা, ঠিকমতো ওষুধ কিনে খাইতে পারছি না। আমার পরিবারের দিকে তাকিয়ে কেউ যদি চিকিৎসার দায়িত্ব নেন, তার কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকব।

নাজমিনের মা মর্জিনা বেগম বলেন, অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসা নিয়ে মহা দুশ্চিতায় আছি। তার স্বামীও নাই যে চিকিৎসা করাবে।মেয়ের অসুখ দেখে  জামাই তাকে ছেড়ে চলে গেছে। কেউ যদি আমার মেয়েটার চিকিৎসার দায়িত্ব নিত, সারা জীবন তার জন্য দোয়া করতাম।

প্রতিবেশী হাবিবুর রহমান মিন্টু নামে এক যুবক বলেন, নাজমিনের এক বছর আগে বিয়ে হয়। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ধরা পড়ে তার হার্টের দুটি ভালভ নষ্ট হয়ে গেছে। এমন অসুস্থ দেখে তার স্বামীও তাকে ছেড়ে যায়। তার এখন চিকিৎসা করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। ঠিকমতো তিন বেলা খেতে পারে না পরিবারটি। এত টাকা কই পাবে তারা। কেউ যদি মেয়েটির চিকিৎসায় পাশে দাঁড়াত, তাহলে মেয়েটা সুস্থ হতো।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আবু বক্কর বলেন, অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে দিশেহারা নাজমিনের বিধবা মা। তার সুস্থতায় দরকার উন্নত চিকিৎসা। কিন্তু অর্থের অভাবে তা হচ্ছে না। এ জন্য সরকারের পাশাপাশি দেশবাসী সহযোগিতা করলে হয়তো সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে।