ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করলো নভোএয়ার
- ২২ জুন ২০২৫, ১৫:২১
দেশীয় বেসরকারি এয়ারলাইন্স সংস্থা নভোএয়ারের সব ফ্লাইট বন্ধ হয়ে গেছে। শুক্রবার (২ মে) থেকে সংস্থাটির কোনো ফ্লাইট আকাশে উড়েনি। সাময়িকভাবে বন্ধ বলা হলেও কতদিন ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকবে, কিংবা আদৌ আর চালু হবে কি না—তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না সংস্থাটি। এরই মধ্যে উঠেছে একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়ার গুঞ্জন।
নভোএয়ার সূত্র জানিয়েছে, সাময়িক বিরতির কারণ হিসেবে বিমান বিক্রির প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে। সংস্থাটি তাদের বহরে থাকা পাঁচটি এটিআর (ATR) উড়োজাহাজ বিক্রির প্রক্রিয়ায় রয়েছে, যার ইন্সপেকশন ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। বিক্রির এই কার্যক্রম চলতি মাসের মধ্যেই শেষ হবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।
এর আগেই নভোএয়ার টিকিট বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছিল ২০ এপ্রিল থেকে। বিষয়টি জনসমক্ষে এলে আবার টিকিট বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু ২ মে থেকে আবারো সব ফ্লাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অনলাইনে টিকিট কাটার অপশনও এখন আর পাওয়া যাচ্ছে না।
বহর সম্প্রসারণ ও আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রা শুরুর পরিকল্পনার কথা বহুবার জানিয়েছিল নভোএয়ার। এয়ারবাস ও অন্যান্য উড়োজাহাজ কেনার কথা থাকলেও তাতে অগ্রগতি হয়নি। সংস্থাটি বর্তমানে চরম অর্থ সংকটে আছে এবং এখনো কোনো নতুন বিনিয়োগকারী নিশ্চিত করতে পারেনি। বিনিয়োগ না মিললে চূড়ান্তভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে এক সময় সম্ভাবনাময় হিসেবে বিবেচিত এই বেসরকারি এয়ারলাইন্সটি।
বর্তমানে নভোএয়ার ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, যশোর, সৈয়দপুর ও রাজশাহীর অভ্যন্তরীণ রুটে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করে আসছিল। যাত্রী সংকটের কারণে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে তাদের একমাত্র আন্তর্জাতিক রুট—কলকাতা—পরিচালনা বন্ধ রয়েছে।
এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ বলছে, নভোএয়ার তার পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোতে পারছে না। বিমান লিজে নিতে বাজারে ঘাটতি রয়েছে, পাশাপাশি বড় বড় বিমান সংস্থার সঙ্গে প্রতিযোগিতার কারণে বিমান কেনাও কঠিন হয়ে পড়েছে। এতে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যও থমকে গেছে।
নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান এক গণমাধ্যমে জানান, একটি নতুন বিনিয়োগকারীকে বোর্ডে আনার আলোচনা চলছে। সেই আলোচনা চূড়ান্ত হলে বিমান বিক্রি না করেই কার্যক্রম চালু রাখা সম্ভব হতে পারে। কিন্তু বিনিয়োগ না মিললে ফ্লাইট কার্যক্রম তিন মাসের জন্য বন্ধ রাখতে হবে বলে জানান তিনি। তবে এ সময়ে কর্মীরা তাদের স্বাভাবিক বেতন পাবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন।
২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করে নভোএয়ার। এ পর্যন্ত উড়োজাহাজ অধিগ্রহণে সংস্থাটি ৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি ও অবকাঠামো ও সহায়ক খাতে ১০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু ২০১৮–১৯ অর্থবছর বাদে প্রতিটি বছরই লোকসান গুণতে হয়েছে তাদের। করোনাভাইরাস মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের পর জ্বালানির দাম বাড়ায় ব্যবসার ওপর বড় ধাক্কা এসেছে। এর পাশাপাশি সঙ্কুচিত অভ্যন্তরীণ বাজার ও যাত্রী সংকট সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মঞ্জুর কবির ভূঁইয়া বলেন, নভোএয়ারের ফ্লাইট আপাতত বন্ধ। সংস্থার সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা বলেছে অর্থনৈতিক কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। দুই সপ্তাহ পর আবার চালু করার পরিকল্পনা আছে। তবে অর্থনৈতিক সমাধান না হলে তারা কী করবে, তা নিশ্চিত নয়।