টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন
হার্ভার্ডে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ৯২ শতাংশ মুসলিম শিক্ষার্থী
- টিডিসি ডেস্ক:
- ২৩ জুন ২০২৫, ১৬:৩৬
গাজা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইহুদি ও ইসলামবিদ্বেষের ঘটনা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা গেছে; যা যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শীর্ষ এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির জন্য উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
গতকাল মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) ক্যাম্পাসে ইহুদি–বিদ্বেষ ও ইসলাম–বিদ্বেষের চিত্র তুলে ধরে ভিন্ন দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে টাস্কফোর্স।
প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইহুদি ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বাড়তে থাকা বিভাজনের গভীরতা এবং শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা যে বৈষম্য ও বৈরিতার মুখোমুখি হচ্ছেন, তা স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। গাজা যুদ্ধকে ঘিরে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করার পর হার্ভার্ড প্রশাসন এ দুটি টাস্কফোর্স গঠন করেছিল।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯২ শতাংশ মুসলিম শিক্ষার্থীই আশঙ্কা করেন, গাজা ইস্যুতে নিজেদের রাজনৈতিক মত প্রকাশ করলে অ্যাকাডেমিক এবং পেশার ক্ষেত্রে শাস্তি পেতে হতে পারে। এ ছাড়া, মোট শিক্ষার্থীর অর্ধেকই আশঙ্কা করেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাদের ওপর যেকোনো সময় হামলা হতে পারে।
নাম প্রকাশ না করে এক শিক্ষার্থীর উদ্ধৃতি তুলে ধরা হয়েছে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে। তিনি বলেছেন, ‘একজন মুসলিম শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা প্রতিনিয়ত আতঙ্ক বোধ করি।’
ওই শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে ক্যাম্পাসে কিছু ট্রাক ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওই ট্রাকগুলোতে আমার বেশ কয়েকজন মুসলিম সহপাঠীর ছবি প্রদর্শন করা হচ্ছে যারা শুধু ধর্মীয় সংগঠনের নেতৃত্বে থাকার কারণে চাকরিচ্যুত হয়েছেন বা চাকরির সুযোগ হারিয়েছেন। যদি ক্যাম্পাসে ইহুদিবিদ্বেষী বার্তা লেখা ট্রাক ঘুরে বেড়াত বা আকাশে ইহুদিবিদ্বেষী স্লোগান লেখা বিমান ওড়ানো হতো, আমি বিশ্বাস করি, হার্ভার্ড তখন আরও কঠোর ব্যবস্থা নিত।
টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা ছাড়াও, যেসব মুসলিম শিক্ষার্থী কম সক্রিয়, তারাও হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। হিজাব পরা নারীরাও মৌখিক নির্যাতনের শিকার হন এবং তাদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি পুরো অ্যাকাডেমিক পরিবেশে ইহুদিবিদ্বেষের প্রবণতা বেড়েছে। টাস্কফোর্সের অনলাইন জরিপে অংশগ্রহণকারী ইহুদি শিক্ষার্থীদের ২৬ শতাংশ জানিয়েছেন যে, তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থী বলছেন, তারা ক্যাম্পাসে নিজেদের ‘ঘর’ হিসেবে অনুভব করতে পারছেন না।
অন্যদিকে, মাত্র ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন যে, তাদের মতামত প্রকাশের ফলে অ্যাকাডেমিক বা পেশাগত ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হননি।
প্রতিবেদনের ফলাফল প্রকাশের সময়, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট অ্যালেন গারবার এক বিবৃতিতে জানান, যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে ইহুদি, ইসরায়েলি এবং জায়নবাদী সম্প্রদায়ের সদস্যরা তাদের পরিচয় গোপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। অন্যদিকে, মুসলিম, আরব এবং ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন যে, তাদের ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে এবং তাদের কণ্ঠ রোধ করা হচ্ছে।
গারবার বলেন, ‘সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো—শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পরিক সহানুভূতির বদলে একে অন্যকে অবজ্ঞা করার প্রবণতা বেড়েছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একে অপরকে তীব্রভাবে কটাক্ষ করছেন এবং একঘরে করে দিচ্ছেন। অনেকে অভিযোগ করেছেন যে তাদের পরিচয় এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে সহপাঠীরা তাদের ক্যাম্পাস জীবনের মূল স্রোত থেকে সরে যেতে বাধ্য করছে।’