ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কক্সবাজার সৈকতে আড্ডায় স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীরা

ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কক্সবাজার সৈকতে ঘুরছে শিক্ষার্থীরা
ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কক্সবাজার সৈকতে ঘুরছে শিক্ষার্থীরা © টিডিসি ফটো

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো মানুষ এখানে ছুটে আসে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই সৈকতের চেহারায় দেখা দিচ্ছে এক ভিন্নরূপ। সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিদিন সকাল থেকেই স্কুল ও কলেজের ইউনিফর্ম পরা শিক্ষার্থীদের জটলা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তাদের কেউ কেউ আড্ডায় মত্ত, আবার কেউ কেউ আসছে জোড়ায় জোড়ায়। অনেকে আবার সেলফি ও ভিডিও বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করছে। আশঙ্কার বিষয় হলো, এসব শিক্ষার্থীরা মূলত স্থানীয় স্কুল কলেজের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সমুদ্রসৈকতে সময় কাটাতে আসছে। এছাড়া এমন দৃশ্য নিয়মিতভাবে চোখে পড়ছে বলে অভিযোগ করেন একাধিক অভিভাবক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় দোকানদার মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আগে এই সময়টাতে মূলত পর্যটকরা থাকতেন, কিন্তু এখন স্কুল-কলেজের পোশাক পরা অনেক ছেলে-মেয়ে এসে এখানে বসে থাকে। এমনকি কেউ কেউ ধূমপান করতেও দ্বিধা করে না। তারা সৈকতের পরিবেশ নষ্টের পাশাপাশি নিজেদের সুন্দর ভবিষ্যতও হুমকির মুখে ফেলছে।’

আমি মনে করি স্কুল কলেজ গুলোতে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করলেই এর প্রকৃত সমাধান সম্ভব। প্রতিষ্ঠানে পঠন পাঠন এর পাশাপাশি সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রম যেমন খেলাধুলা, শিক্ষাসফর, বিতর্ক, সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান জোরদার করে প্রতিষ্ঠানকে আকর্ষনীয় করতে হবে—অধ্যাপক রেজাউল করিম মোহাম্মদ তারেক, কক্সবাজার সরকারি কলেজ

একই কথা বলেন এক পর্যটক দম্পতি। তারা বলেন, ‘আমরা পরিবার নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছি। হঠাৎ দেখি আশেপাশে কয়েকজন ছেলে-মেয়ে অশালীন আচরণ করছে। পরে বুঝলাম, এরা স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী। এটা খুবই দুঃখজনক। অভিভাবক ও স্থানীয় প্রশাসনের এব্যাপারে সচেতন হওয়া জরুরি।’

সৈকতের পাশের দোকানদার মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আগে সকাল-বিকেলে এখানে মূলত পর্যটকদের দেখা যেত। এখন দেখি স্কুল-কলেজের পোশাক পরা অনেক ছেলে-মেয়ে এসে বসে থাকে। কেউ কেউ তো প্রকাশ্যে ধূমপানও করে। এতে সৈকতের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, আর এসব ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যতও হুমকির মুখে পড়ছে।’

পর্যটক রাশেদা আক্তার ও তার স্বামীও অভিজ্ঞতার কথা জানালেন। তারা বলেন, ‘আমরা পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছি। হঠাৎ দেখি আশপাশে কিছু ছেলে-মেয়ে অশালীন আচরণ করছে। পরে দেখি, তারা স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী। খুবই দুঃখজনক। অভিভাবক ও স্থানীয় প্রশাসনকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

কক্সবাজার সরকারি কলেজের শিক্ষক অধ্যাপক রেজাউল করিম মোহাম্মদ তারেক দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বজ্র (কঠিন) আঁটুনি (বাঁধা) ফস্কা (ফসকে যাওয়া) গেরো (গিট)। অর্থাৎ কঠিনভাবে কোন ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করার পরেও ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণে না থাকা।

স্কুল-কলেজের সময় যেন ইউনিফর্ম পরে সৈকতে আড্ডা দিতে না পরে সেজন্য আমরা সজাগ আছি৷ প্রায় সময়ই আমরা এগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে থাকি— মোঃ আব্দুল মুকিত, ট্যুরিস্ট পুলিশ পরিদর্শক

তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি স্কুল কলেজ গুলোতে  ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করলেই এর প্রকৃত সমাধান সম্ভব। প্রতিষ্ঠানে পঠন পাঠন এর পাশাপাশি  সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রম যেমন খেলাধুলা, শিক্ষাসফর, বিতর্ক, সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান জোরদার করে প্রতিষ্ঠানকে আকর্ষনীয় করতে হবে। তবে প্রাপ্তবয়স্ক কোন শিক্ষার্থী পরস্পর সম্মতিতে আড্ডা বা পাঠ বহির্ভূত কাজে লিপ্ত হলে বিষয়টি সামাজিক ভাবে অনৈতিক। কিন্ত রাস্ট্রীয় আইনে এটা বেআইনি কিনা দেখতে হবে। যেহেতু বিষয়গুলো প্রচলিত আইনে বে-আইনি নয়, সেক্ষেত্রে তাদেরকে পুলিশ বা কেও হয়রানি করাও বে-আইনি হবে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই বয়সের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক চঞ্চলতা থাকেই। তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয় হওয়ার প্রবণতা এবং সুষ্ঠু বিকল্প বিনোদনের অভাব এসব মিলেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সেটাকে যদি নিয়ন্ত্রণে না রাখা যায়, তাহলে তারা বিপথে যেতে পারে। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সৈকতে সময় কাটানো কোনোভাবেই ইতিবাচক হতে পারে না। তাই স্কুল-কলেজে উপস্থিতি মনিটরিং এবং অভিভাবকদের সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়োজন। নয়তো আগামী প্রজন্ম ভুল পথে চলে যাবে।

এ বিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ পরিদর্শক মোঃ আব্দুল মুকিত দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘স্কুল-কলেজের সময় যেন ইউনিফর্ম পরে সৈকতে আড্ডা দিতে না পরে সেজন্য আমরা সজাগ আছি৷ প্রায় সময়ই আমরা এগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে থাকি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি মোবাইল টিমকে বলে দিচ্ছি যেন এমন শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।’

তবে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের শীর্ষ কর্মকর্তা অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ আপেল মাহমুদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বললেন এর স্থায়ী সমাধানের কথা। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে শিক্ষার্থীরা স্কুল কলেজ ফাকি দিয়ে সৈকতে আড্ডা দিচ্ছে এই বিষয়টি আমরা অবগত। তবে আমাদের কাছে স্কুল কলেজ বা অভিভাবকদের কাছ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ না থাকায় আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারছি না। পরিবার, সমাজ, স্কুল কলেজ সকলকে এই ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন গুলোকে এই সমস্যাগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। সেই সাথে স্কুল কলেজ এবং অভিভাবকরা আমাদের সহযোগিতা করলেই এই সামাজিক অবক্ষয়ের হাত থেকে বাঁচা যাবে।’

সমুদ্রসৈকত আনন্দের জায়গা। সেটি যেন শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করার জায়গা না হয়ে দাঁড়ায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় প্রশাসনসহ আমাকে, আপনাকে।