সারা দেশে আজ পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
- ২৪ জুন ২০২৫, ১২:৫৫
ছয় দফা দাবি আদায়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতাভুক্ত পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের জোট কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ। রোববার (২৭ এপ্রিল) ঢাকাসহ সারা দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবেন শিক্ষার্থীরা।
গতকাল শনিবার (২৬ এপ্রিল) ফেসবুকে কারিগরি শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ’র ফেসবুক পেজে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী রোববার (২৭ এপ্রিল) সারা দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের নিজ নিজ ক্যাম্পাসে একযোগে বিক্ষোভ মিছিল পালিত হবে এবং আগের দেওয়া সব নির্দেশনা অব্যাহত থাকবে।
এর আগে দাবি আদায়ে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা।
গত ২৩ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করেন কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন : ধর্ষণের শিকার জুলাই আন্দোলনে শহীদের মেয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে পদোন্নতিতে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ কোটার রায় বাতিলসহ ছয় দাবি আদায়ে কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করছেন সারা দেশের চার লাখেরও বেশি পলিটেকনিক শিক্ষার্থী। প্রথম দিকে তারা স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধন কর্মসূচি করেছেন। পরে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেও দাবি আদায় না হওয়ায় গত ১৬ এপ্রিল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সাতরাস্তা মোড় অবরোধ করেন। এতে রাজধানীতে ব্যাপক যানজট শুরু হয়।
একই দিনে সারা দেশে অবরোধ কর্মসূচি করেন শিক্ষার্থীরা। কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের অবরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা লাঠিচার্জ করেন। এতে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আলোচনায় আসে।
১৮ এপ্রিল কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে বিক্ষোভ করেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা। এদিন কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে বিক্ষোভ করেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা। আগের দিন ১৭ এপ্রিল তারা সারা দেশে রেলপথ ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। পরে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে তাদের আশ্বাস দেওয়া হলে কর্মসূচি শিথিল করে আলোচনায় বসেন শিক্ষার্থীরা। তবে সেই আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় ধারাবাহিক কর্মসূচি করে আসছেন তারা।
আরও পড়ুন : ইউআইইউতে আন্দোলন: একযোগে পদত্যাগ করলেন ভিসি, ডিনসহ সব বিভাগীয় চেয়ারম্যান
শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি
১ জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ প্রমোশন কোটা বাতিল করতে হবে। জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
২. ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল করতে হবে। উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু করতে হবে এবং একাডেমিক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে করতে হবে।
৩. উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রীয়, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৪. কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনিভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোয় অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ ও সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
৫. স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা’ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করতে হবে।
৬. পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নত মানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।