সংস্কার-নির্বাচনের আগে হত্যাকাণ্ডের বিচার হতে হবে: সারজিস আলম
- ২৪ জুন ২০২৫, ১৩:০০
অন্তবর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে সারসিজ আলম বলেন, সংস্কার, নির্বাচনে আগে হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এই সরকার যদি শহীদদের হত্যার বিচার হওয়া আগ পর্যন্ত অন্য চিন্তা করে তাহলে এই শহীদদের রক্তের দায় এড়াতে পারবে না।
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) বেলা তিনটার দিকে ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে জুলাই, পিলখানার ও শাপলা গণহত্যার বিচার এবং গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগে শহীদি সমাবেশ এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের আট মাস পেরিয়ে নয় মাস হয়েছে। আজকে আমরা যে দাবি নিয়ে এখানে এসেছি তা বাস্তবায়ন করার কথা ছিল আগস্ট মাসেই। যে ভারত এতো গুলো খুনের হুকুমকারী খুশী হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে, সেই হাসিনাকে বাংলাদেশ ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত ভারতের সাথে সম্পর্ক ভালো হতে পারে না।
এসময় জুলাই আন্দোলন, শাপলা চত্বর ও পিলখানায় হত্যাকাণ্ডে নিহত অনেক পরিবার বক্তব্য রাখেন।
শাপলা চত্বরে শাহাদত বরণকারী একজনের বোন বলেন, ২০০৯ সালের বিডিআর হত্যা থেকে শুরু করে ২০১৩ সাথে শাপলা চত্বরে থেকে যে বিপ্লবের বীজ রোপিত হয়েছিল ২০২৪ এর অভ্যুত্থানে তা বাস্তবায়িত হয়। কিন্তু আমাদের আন্দোলন এখনো শেষ হয় নি। যখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না করা হবে এবং সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার না করা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, আমাদের জুলাই শেষ হয়ে যায় নাই। আমাদের জুলাইয়ে যে অঙ্গীকার তা বাস্তবায়িত হয়নি। আজকে আমরা এই অঙ্গীকার রক্ষার্থে আজকে শপথ গ্রহণ করবো। আমরা আজকে শপথ নিবো যে আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধ ও তাদের বিচারের আগে পর্যন্ত আমরা আমাদের লড়াই চালিয়ে যাবো।
জুলাইয়ে শহীদ বনশ্রীর মোসলে উদ্দিনের ৪ বছর বয়সী বুদ্ধি প্রতিবন্ধী সন্তান বলেন, আমি আমার বাবার হত্যার বিচার চাই।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের নেতা শেখ মাহবুবুর রহমান বলেন, আজকে দেখছি আওয়ামী পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে। তাদের নিষিদ্ধ করার কথা ছিল। কিন্তু তারা বিভিন্ন স্থানে তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ বিচারের জন্য আজকে আন্দোলন করতে হবে আমরা এমনটা ভাবি নাই। আমরা শাপলার হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার কার্যক্রম দেখছি না। আমরা দ্রুত এর বিচার দেখতে চাই।
শহীদ ইমাম হাসানের ভাই বলেন, আমাদের শহীদ পরিবারের কষ্টটা অন্যরা বাইরে থেকে বুঝতে পারবে না। কারণ এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য এমন কোন দরজা নাই যে আমরা যাই নাই। আমাদের কেন ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হবে? সংস্কার ও নির্বাচন চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জুলাই অভ্যুত্থানের বিচার। আমরা সরকারকে বলব বিচার কার্যক্রমের দিকে নজর দেন।
শহীদ সায়িমের মা বলেন, আমার ছেলে ১৯ জুলাই হত্যা করা করে রাস্তায় ফেলে রেখেছে। তারা তো কোনো অস্ত্র নিয়ে নামেনি। সে তো অধিকার আদায়ের জন্য নেমেছিল। আমার ছেলেকে পাখির মতো গুলি করে মারছে। আমার ছেলেকে যেভাবে হত্যা করছে , ঠিক সেভাবেই যেন বাংলার মাটিতে এনে তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়। সে যেন বুঝতে পারে সন্তান হাড়ানো একটা মায়ের জন্য কতো কষ্ট। যেদিন এদেশে শহীদদের হত্যাকারীদের বিচার হবে সেদিন আমার মন শান্তি হবে।
আশুলিয়া ভ্যানের উপর পুড়িয়ে দেওয়া শহীদ সজলের মা বলেন, আমার ছেলেকে যখন পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল, তখন সে জীবিত ছিল। তার লাশটা যখন পাই তার শরীরের মাংস ছিল না। আমরা সন্তানকে ফিরিয়ে দিয়ে আবার আওয়ামী প্রতিষ্ঠা করলে আমি কিছু বলব না। আমার এক সন্তান মারা গেছে আমার হাজার হাজার সন্তান আছে, তারা তাদের বিচার নিশ্চিত করবেন।
অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে প্রশ্ন করে বলেন ,কেন এখনও আমরা রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছি? যারা শহীদ হয়ে আপনাদের চেয়ারে বসিয়েছে তাদের হত্যার কেন এখনো বিচার হচ্ছে না?
আলী হাসান জুনায়েদ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর যে সরকার কায়েম হয়েছে আজকে তাদের কাছে নয় মাস হয়ে গেলেও এখনো আওয়ামী লীগ বিচারের দাবি জানতে হচ্ছে। জুলাই অভ্যুত্থানের আহতরা বেঁচে থাকতে আওয়ামী লীগ দেশে রাজনীতি করতে পারবে না। কোনো হুমকি দিয়ে আমাদের চুপ করে করাতে পারবেন না। অন্তবর্তীকালীন সরকারকে বলতে চাই, আপনারা বিচার না করতে পারলে আপনাদেরকেও সরাতে খুব বেশি সময় লাগবে না। আগামীর বাংলাদেশ জুলাই যোদ্ধাদের বাংলাদেশ হবে।