পারভেজের মিডটার্ম পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ, অশ্রুজলে যা বললেন শিক্ষক

নিহত শিক্ষার্থী পারভেজ
নিহত শিক্ষার্থী পারভেজ © টিডিসি সম্পাদিত

ছোটখাটো গড়ন, চোখেমুখে সারাক্ষণ একরকম সাদামাটা হাসি লেগেই থাকত। পারভেজের বন্ধুরা বলতেন, ‘চুপচাপ ছেলেটা, কথা কম বলে’। কিন্তু যারাই তাকে একটু কাছ থেকে চিনেছে, তারা জানত—এই ছেলেটার চোখে ছিল অফুরন্ত স্বপ্ন, জীবনের প্রতি ছিল দুরন্ত একটা টান। পড়াশোনা শেষ করে কিছু একটা হতে চেয়েছিলেন তিনি, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর, পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর এক তীব্র তাড়া ছিল তার ভেতরে।

কিন্তু সেই স্বপ্নভরা চোখ দুটি আজ আর নেই। নেই বইয়ের ব্যাগে রাখা খাতা-কলম, নেই ক্লাস শেষে গেটের কাছে বন্ধুবান্ধবের হাসি-ঠাট্টা, আড্ডা আর চা-সিঙাড়ার বিকেলের গল্পগুলো। গত শনিবার মিডটার্ম পরীক্ষা দিয়ে বের হয়েই জীবন থেমে গেল পারভেজের। ইউনিভার্সিটির গেটের সামনেই একদল দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে ঝরে গেল এক তাজা প্রাণ।

আজ শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) তার শেষ মিডটার্ম পরীক্ষার অ্যাসাইনমেন্টের রেজাল্ট প্রকাশ করেছেন প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন।

পারভেজের প্রাপ্ত নম্বর জানিয়ে কান্নাজড়ানো কণ্ঠে এই শিক্ষক দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘জাহিদুল আমার অ্যাসাইনমেন্টে ৪০ নম্বরের মধ্যে ৩০ নম্বর পেয়েছে। সে ছিল ভদ্র, বিনয়ী ও অত্যন্ত পরিশ্রমী এক শিক্ষার্থী। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সে তার এই প্রাপ্ত নম্বরটি দেখে যেতে পারেনি। এটি আমার শিক্ষকতা জীবনের সবচেয়ে বেদনাদায়ক মুহূর্তগুলোর একটি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এই সম্ভাবনাময় তরুণকে আমরা নির্মমভাবে হারালাম। আমি তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। একজন শিক্ষক হিসেবে আমি জোর দাবি জানাই—এই হত্যাকাণ্ডের সাথে যারা জড়িত, তাদেরকে অতিদ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একজন শিক্ষার্থীর জীবন এভাবে ঝরে যেতে পারে না।’

এর আগে গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে পরীক্ষা শেষে ক্যাম্পাস সংলগ্ন র‍্যাংকন ভবনের সামনে বন্ধুদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলেন পারভেজ। পাশে ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রী। সেই সময় কোনো রকম ‘হাসাহাসি’ হয়েছে কিনা, এমন অভিযোগ তুলে সেখানে এসে হাজির হন মেহেরাজ ইসলাম, আবু জহর গিফফারি পিয়াস এবং মাহাথির হাসান নামের তিনজন যুবক। দু’পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডা শুরু হয়, যা ধরা পড়ে আশেপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে।

পরবর্তীতে বিষয়টি প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে গড়ায়। শিক্ষকদের মধ্যস্থতায় বিষয়টির সমাধান হলেও, পরিস্থিতি শান্ত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরোনোর সময়ই গেটের সামনে পারভেজকে ঘিরে ধরে একদল যুবক। 

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ৩০ থেকে ৪০ জন দুর্বৃত্ত একযোগে তার ওপর হামলে পড়ে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হন পারভেজ। পরে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে, চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।