পরনিন্দার ভয়াবহ পরিণতি
- ২৪ জুন ২০২৫, ১৫:০৫
পরনিন্দা ইসলামের দৃষ্টিতে একটি জঘন্য ও কঠিন গোনাহর কাজ। এটি মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট করে এবং সমাজে বিভেদ ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়। ইসলামে মুসলিম ভাইয়ের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরনিন্দা অর্থ হলো কারো অনুপস্থিতিতে তার দোষ বা ত্রুটি তুলে ধরা, যা শুনলে সে কষ্ট পাবে— যদি তা সত্য হয়।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা পরনিন্দাকে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় নিষেধ করেছেন। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের কেউ যেন কারো পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি স্বীয় মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করতে পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা তো একে ঘৃণাই করো।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১২)
এই আয়াতে আল্লাহ পরনিন্দার ভয়াবহতা বোঝাতে একে মৃত ভাইয়ের মাংস ভক্ষণ করার সঙ্গে তুলনা করেছেন, যা একজন বিবেকবান মানুষ কল্পনাও করতে পারে না। পরনিন্দা শুধুমাত্র মানুষের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে না, বরং এটা মানুষের আমলনামাকে কলুষিত করে এবং আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত করে। তাই প্রতিটি মুসলমানের উচিত নিজের জিহ্বা সংযত রাখা, গীবত ও পরনিন্দা থেকে দূরে থাকা এবং অপরের ভুল গোপন করে তাদের সম্মান রক্ষা করা।
আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মিরাজের রাতে আমি এমন এক কওমের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম, যাদের নখগুলো তামার তৈরি এবং তা দিয়ে তারা অনবরত তাদের মুখমণ্ডলে ও বুকে আঁচড় মারছে। আমি বললাম, হে জিবরাঈল, এরা কারা? তিনি বলেন, এরা সেসব লোক, যারা মানুষের গোশত খেতো (গিবত করত) এবং তাদের মানসম্মানে আঘাত হানত।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৭৮)
রাসুল (সা.) পরনিন্দাকে ব্যভিচারের চেয়েও জঘন্য আখ্যায়িত করেছেন। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘গিবত ব্যভিচারের চেয়েও জঘন্যতম গুনাহ।
তিনি রাসুল (সা.)-এর কাছে জানতে চাইলেন, এটা কিভাবে? তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ব্যভিচার করার পর তাওবা করলে তার গুনাহ মাফ হয়ে যায়। কিন্তু যে গিবত করে তার গুনাহ প্রতিপক্ষের মাফ না করা পর্যন্ত মাফ হয় না।’ (শুআবুল ঈমান)
নাউজুবিল্লাহ, বছরের ১১ মাস পর আমাদের কাছে এসেছে অবারিত রহমত ও ফজিলতের মাস পবিত্র রমজান। যাতে সব আমলের সওয়াব বহু গুণে বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
সুতরাং, পরনিন্দার ভয়াবহতা ও এর পরিণাম সম্পর্কে আমাদের সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি, বিশেষ করে পবিত্র রমজানের মতো মহিমান্বিত মাসে, যখন প্রতিটি আমল বহুগুণে বৃদ্ধি পায় এবং আল্লাহর রহমত ও মাফ পাওয়ার এক অনন্য সুযোগ থাকে। এই সময়ে আমাদের উচিত শুধু রোজা রাখা নয়, বরং জিহ্বাকে সকল প্রকার অশুভ কাজ থেকে সংযত রাখা, গিবত ও পরনিন্দা থেকে সম্পূর্ণভাবে বিরত থাকা এবং আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের চেষ্টা করা।
পরনিন্দা শুধু একজন ব্যক্তির সম্মান ক্ষুণ্ন করে না, বরং সমাজে অবিশ্বাস ও বিভেদের বীজ বপন করে। তাই মুসলমান হিসেবে আমাদের উচিত একে ভয় করা, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং নিজের আমলনামা কলুষিত হওয়া থেকে বাঁচানো। আল্লাহ আমাদের সবাইকে পরনিন্দা থেকে বাঁচার তাওফিক দান করুন এবং রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করার তাওফিক দিন—আমিন।