
এসএসসি পরীক্ষার আগে সর্বশেষ প্রস্তুতিতে কী করবেন?
- ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২০

এসএসসি একজন শিক্ষার্থীরা জীবনের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এ পরীক্ষার ফলাফল জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োজন হবে। আগামী ১০ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এ জন্য শেষ সময়ের প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
আমরা সবসময় শুনে এসেছি ‘স্টাডি হার্ড’। যেন বেশি বেশি পড়াশোনা করলেই ভাল রেজাল্ট হবে। আসলে বলা উচিত ‘স্টাডি স্মার্ট’। কারণ সঠিক নিয়মে পড়াশোনা করলে এর চেয়ে অনেক বেশি ফলপ্রসূ হয়। পরীক্ষার শেষ সময়ের প্রস্তুতি বা রিভাইজ পর্ব যাতে আপনি আরও কার্যকর-ভাবে সম্পন্ন করতে পারেন তার সারমর্ম রূপে চূড়ান্ত কিছু টিপস তৈরি করা হয়েছে।
পরীক্ষার আগের দিন প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর জন্য ষেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমন উৎকণ্ঠার। ভয়, চিন্তা, অস্থিরতায় পার করে দিনটি। তাই অনেক সময় দেখা যায়, ভালো প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও তারা পরীক্ষায় ভালো ফল করতে পারেন না। পরীক্ষার আগের রাতটি তাই খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং কিছু নিয়মের মধ্যে অতিবাহিত করা উচিত।
আপনাদের নিশ্চয় জানা আছে, পরীক্ষার আগের দিনটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হাতে প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড আছে। এগুলোর কিছু ফটোকপি করে রাখতে হবে। প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড কখনো লেমিনেটিং করবেন না। পরীক্ষার দিন কী কী সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে, তার একটি তালিকা তৈরি করে রাখবেন।
পরীক্ষার আগের দিন প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর জন্য ষেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমন উৎকণ্ঠার। ভয়, চিন্তা, অস্থিরতায় পার করে দিনটি। তাই অনেক সময় দেখা যায়, ভালো প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও তারা পরীক্ষায় ভালো ফল করতে পারেন না। পরীক্ষার আগের রাতটি তাই খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং কিছু নিয়মের মধ্যে অতিবাহিত করা উচিত।
যেমন- প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ডের মূল কপি, জ্যামিতি বক্স, তিন-চারটি কলম, পেনসিল, রাবার, ক্যালকুলেটর, লম্বা স্কেল, হাতঘড়ি ইত্যাদি পরীক্ষার উপকরণ প্রস্তুত করে রাখতে হবে। পরের দিন যেন এ নিয়ে ভাবতে না হয়। সব উপকরণ একটি স্বচ্ছ ফাইলে ভরে রাখবেন। যে কলম দিয়ে দ্রুত লেখা যায়, এমন কলমই ব্যবহার করবেন। গণিত পরীক্ষার দিন তিন-চারটি পেনসিল আগে থেকেই মসৃণ করে রাখবেন। নতুন শার্পনার ব্যবহার করা ভালো।
পরীক্ষার রুটিন চেক করুন
অবশ্যই প্রথম কাজ হবে পরীক্ষার রুটিন অন্তত দু’বার চেক করা। কি পরীক্ষা, কখন পরীক্ষা, কোথায় পরীক্ষা এই বিষয়গুলো খুব ভালভাবে জেনে নিন, এবং প্রস্ততি শুরু করুন। কারণ এই ভুলটা মারাত্মক ভুল। অনেক ভাল প্রস্তুতি থাকা সম্তেও শুধুমাত্র সামান্য ভুলের জন্য পরিস্থিতি প্রতিকূল রূপে বদলে যেতে পারে।
নতুন টপিক এড়িয়ে চলা
নতুন কোন টপিক এখন পড়া যাবে না। পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন কোন অধ্যায় দেখলে তারা ভালোভাবে পড়া শুরু করে দেয়। এটা মোটেও ভাল অভ্যাস নয়। একদম শেষ মুহূর্তে নতুন করে কোন কিছু বুঝে ফেলা প্রায় অসম্ভব। তাই আপনাদের উচিৎ, এতদিনে যে অধ্যায়গুলো পড়েছেন, সেগুলোই ভালোভাবে বারবার পড়ে আয়ত্ত করে নেওয়া। কারণ, এই মুহূর্তে আপনি যদি নতুন কোন অধ্যায়ে পড়েন, তাহলে পরীক্ষায় গিয়ে মনে থাকবে না। সেই সঙ্গে আগের পড়াগুলো ভুলে যাবেন।
সঠিক খাদ্য গ্রহন
পরীক্ষার বিষয়ের মধ্যে খাবারের কথা শুনে অবাক হলেও জেনে রাখুন সঠিক খাদ্য গ্রহণ খুবই জরুরি পরীক্ষার আগে। কারণ আপনার মস্তিষ্ককে সঠিক খাবার না দিলে সে ঠিকমত কাজ করবেনা। তাই অবশ্যই ঠিকমত খাদ্য গ্রহণ করুন। অনেকেই পরীক্ষার আগে উৎকণ্ঠায় ও চিন্তায় খেতে পারেন না।
এ অভ্যাসটি পরিহার করুন। সুষম খাবার গ্রহন করুন। গবেষণায় দেখা গেছে, মিষ্টি জাতীয় খাবার মন্তিষ্কের জন্য খুব ভালো। কলা, চকলেট, মিষ্টি, বাদাম, মাছ ইত্যাদি খেতে পারলে খুব ভাল। তবে ঘুমানোর আগে চা, কফি বাদ দেওয়া উত্তম।
সুতরাং অবশ্যই সকালবেলা আপনাকে কিছুটা কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ করতেই হবে, যেটা ধীরে ধীরে শরীরে শক্তি যোগাবে। যেটা হতে পারে ওটস, রুটি বা কম চিনিযুক্ত সিরিয়াল। আপনার প্রোটিনের চাহিদাও কিছুটা পূরণ করতে হবে দুধ, দই কিংবা ডিম খেয়ে।
পরীক্ষার আগের রাত
আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত, পরীক্ষার আগের রাত। এই রাতে পরবর্তী দিনের পরীক্ষার বিষয়ে মনোযোগ দিয়ে বারবার পড়তে হবে। প্রস্তুতি অনুসারে ‘রিভিশন’ দিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকা যাবে না। কারণ, ভালো পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ভালো ঘুম যথেষ্ট প্রয়োজন।
পরিকল্পনা গ্রহণ
এটাকে সময়সাপেক্ষ মনে হতে পারে কিন্তু একটি পূর্ণাঙ্গ রিভিশন পরিকল্পনা প্রকৃতপক্ষে আপনার সময়কে বাঁচিয়ে দেবে। কতটুকু রিভাইজ দেবেন সেটা ভাববার জন্য এক মিনিটও সময় নষ্ট করতে হবেনা। এটা আপনার পাঠের কতটা অগ্রগতি হল সেটা যাচাই করারও একটা উপায় বটে।
সময়সূচী যতটা সম্ভব বিস্তারিত বা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নির্ধারণ করে নিন -এর সাথে যত সম্পর্কিত পেপার বা নোট দেখতে হতে পারে তা-ও যুক্ত করুন। সামাজিকতা, শরীরচর্চা কিংবা অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিরতি নিতে কখনোই ভুলে গেলে চলবে না।
বিশ্রামে থাকুন
পরীক্ষার আগের রাতে খুব বেশি চাপ নেবেন না। রিলাক্স থাকুন। হাল্কা ব্যায়াম করুন, একটু হাঁটুন, খুব বেশি চাপ লাগলে একটু হালকা বিরতি নেন; কোনো অবস্থাতেই অতিরিক্ত চাপ নেবেন না। কারণ বেশি চাপের ফলে আপনি যা পড়েছেন, তা ভুলে যেতে পারেন। পরীক্ষার হলে তার কুপ্রভাব আপনার ওপর পড়বে।
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে
পরীক্ষার প্রবেশপত্র, পরীক্ষাসংক্রান্ত সামগ্রী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগেই প্রবেশপত্র, কলম, পেন্সিল, ইরেজার, স্কেল ইত্যাদি গুছিয়ে রাখবেন। কারণ পরের দিন পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার সময় যদি এসব গোছাতে যান, তাহলে সময় অপচয় হবে এবং তাড়াহুড়োর কারণে অস্থিরতায় ভুগতে হবে। তাই পরীক্ষার উপকরণগুলো রাতেই ঠিকঠাক করে রাখবেন।
শান্ত এবং ইতিবাচক থাকা
শীর্ষস্থানীয় মনোবিজ্ঞানী, স্নায়ুবিজ্ঞানী এবং শিক্ষাবিদদের কাছ থেকে পাওয়া এইসব পরামর্শ এখন আপনার কাছে আছে যা আপনাকে আরও ভালোভাবে জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করবে। সুতরাং কাজে লাগান একে। অন্তত আগের প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের চেয়ে আপনি এখন বেশি ভালো জানেন, কীভাবে নিজের পরীক্ষার প্রস্তুতি আরও ভালোভাবে নিতে হবে।
ফোনটি সরিয়ে রাখুন
সোশ্যাল মিডিয়া এবং চ্যাট অ্যাপ্লিকেশনের টোপ আপনাকে বিভ্রান্ত করবে। ফোনের তো অবশ্যই প্রয়োজনীয়তা আছে কিন্তু লেখাপড়ার সময় নয়। আপনি ভাববেন না যে, টেবিলের ওপর ফোনটি রেখে দেবেন এবং তা স্পর্শ করবেন না। গবেষণায় দেখা গেছে যে, সামনে থাকা ফোনটির দিকে কেবল তাকালেও আপনার মনোযোগ নষ্ট করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।
আরো পড়ুন: নিজের তৈরি করা বানানরীতি মানে না খোদ বাংলা একাডেমি
পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশের আগে
পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশের আগে অবশ্যই দেখে নেবেন, প্রবেশপত্র ও পরীক্ষাসংক্রান্ত সব সামগ্রী অর্থাত্ পর্যাপ্ত কলম, পেনসিল, স্কেল, ইরেজার ইত্যাদি ঠিকঠাক আছে কি না। মনে রাখবেন, প্রবেশপত্র ও পরীক্ষাসামগ্রী ছাড়া অন্য কোনো বই, খাতা বা কাগজ সঙ্গে নেওয়া যাবে না। পরীক্ষা শুরু হওয়ার কমপক্ষে ১৫ মিনিট আগে হলে আসন গ্রহণ করবেন।
এসএসসি পরীক্ষার দ্বারপ্রান্তে এসে অনেক শিক্ষার্থীর মনে হতে পারে যে, শুধু কঠিন বিষয় গুলি পড়তে হবে। কিন্তু এ ধরনের মানসিকতা ঠিক নয়। কারণ, পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, সহজ বিষয় গুলোর জন্যই শিক্ষার্থীদের কাঙ্খিত ফলাফল অর্জন সম্ভব হয় না।
চলতি বছর শিক্ষা বোর্ডগুলোর প্রকাশিত সময়সূচি অনুযায়ী আগামী ১০ এপ্রিল থেকে এসএসসি, দাখিল ও এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এতে অংশ নেবেন ১৯ লাখ ২৮ হাজার ২৮১ জন পরীক্ষার্থী। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের লিখিত বা তত্ত্বীয় অংশ শেষ হবে ১৩ মে। মাদ্রাসা বোর্ডের অধীন দাখিলের লিখিত পরীক্ষা ১৫ মে শেষ হবে। ব্যবহারিক পরীক্ষা ২২ মে পর্যন্ত চলবে।