
ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন, মেটার বিরুদ্ধে মামলা করে জিতলেন ব্রিটিশ নারী
- ২৯ মার্চ ২০২৫, ০০:৪৮

নিজের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে লক্ষ্যভিত্তিক বিজ্ঞাপন দেখানোর বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করে জয় পেলেন লন্ডনের বাসিন্দা তানিয়া ও'ক্যারল। মামলার পর প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মেটা জানিয়েছে, ফেসবুকে তাঁকে আর ব্যক্তিগত তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞাপন দেখানো হবে না।
তানিয়া ও'ক্যারল পেশায় প্রযুক্তি ও মানবাধিকার নীতির গবেষক। তাঁর ভাষায়, এই মামলার রায় অন্যদের জন্যও এক নতুন দ্বার উন্মোচন করবে, যাতে কেউ চাইলে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে লক্ষ্যভিত্তিক বিজ্ঞাপন দেখানো বন্ধ করতে পারেন।
যুক্তরাজ্যের তথ্য কমিশনারের কার্যালয় (আইসিও) জানিয়েছে, অনলাইনে লক্ষ্যভিত্তিক বিজ্ঞাপনকে সরাসরি বিপণনের আওতায় বিবেচনা করা উচিত। তবে মেটার দাবি, তারা ব্যবহারকারীদের জন্য পর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রেখেছে, যাতে তাঁরা চাইলে বিজ্ঞাপনের ধরন নির্ধারণ করতে পারেন।
দুই দশক আগে ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খোলা তানিয়া ২০২২ সালে মেটার বিরুদ্ধে মামলা করেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, মেটা তাঁর ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে এমন বিজ্ঞাপন দেখাচ্ছে, যা তিনি পছন্দ করেন না।
তানিয়া বলেন, আমি জানতাম যে এই ধরনের আগ্রাসী ও অনুপ্রবেশকারী বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে আমাদের আইনগতভাবে আপত্তি জানানোর অধিকার আছে। আমি মনে করি না যে আমাদের এই অন্যায্য শর্তগুলো মেনে নিতে হবে, যেখানে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য বিশ্লেষণ করে আমাদের ওপর নজরদারি করা হয়।
২০১৭ সালে তিনি যখন গর্ভবতী হন, তখন ফেসবুকের লক্ষ্যভিত্তিক বিজ্ঞাপনের বিষয়টি তাঁর সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তাঁর ফিডে শিশুর ছবি, গর্ভাবস্থা ও মাতৃত্বসংক্রান্ত বিজ্ঞাপনের সংখ্যা বেড়ে যায়।
তানিয়া বলেন, আমি তখনও ব্যক্তিগতভাবে কাউকে জানাইনি, অথচ ফেসবুক বুঝে ফেলেছিল যে আমি গর্ভবতী। এটি আমার কাছে আতঙ্কজনক লেগেছিল।
যুক্তরাজ্যের তথ্য সুরক্ষা আইন (জিডিপিআর) অনুযায়ী, ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য কীভাবে ব্যবহার করা হবে, তা নির্ধারণের অধিকার তাঁরই। তানিয়ার মামলার যুক্তি ছিল, ফেসবুকের লক্ষ্যভিত্তিক বিজ্ঞাপন যুক্তরাজ্যের সরাসরি বিপণন সংজ্ঞার আওতায় পড়ে এবং এটি ব্যবহারকারীদের আপত্তি জানানোর অধিকার দেয়।
মেটা অবশ্য দাবি করেছে, তাদের বিজ্ঞাপন ব্যবস্থা ন্যূনতম ১০০ জনের একটি দলকে লক্ষ্য করে তৈরি হয়, তাই এটি সরাসরি বিপণনের সংজ্ঞায় পড়ে না। তবে যুক্তরাজ্যের তথ্য কমিশন এই যুক্তি মানতে রাজি হয়নি।
আইসিওর এক মুখপাত্র বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবশ্যই ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাঁদের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাতে হবে। এর মানে হলো, ব্যবহারকারীদের স্পষ্টভাবে তাঁদের তথ্য ব্যবহারে আপত্তি জানানোর সুযোগ দিতে হবে।
তানিয়া বলেন, মেটা আমার ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন দেখানো বন্ধ করতে রাজি হয়েছে। অর্থাৎ, আমি ফেসবুকে সব ধরনের নজরদারিমূলক ও লক্ষ্যভিত্তিক বিজ্ঞাপন বন্ধ করতে পেরেছি।
তানিয়া ফেসবুক ছাড়তে চান না। তিনি বলেন, ফেসবুক আমার জীবনের অনেক মুহূর্তের সঙ্গে জড়িয়ে আছে—পরিবার, বন্ধু, অসংখ্য স্মৃতি। আমি এটি ব্যবহার করতে চাই, তবে নিজের ব্যক্তিগত তথ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ রেখেই।
তাঁর মতে, এই মামলার ফলে অন্য ব্যবহারকারীদের জন্যও একটি নতুন পথ তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, যদি অন্যরাও এই অধিকার প্রয়োগ করতে চান, তবে এখন তাঁরা জানেন যে যুক্তরাজ্যের নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাঁদের পাশে থাকবে। মেটা অবশ্য তানিয়ার দাবির সঙ্গে একমত নয়।
প্রতিষ্ঠানটির এক মুখপাত্র বলেন, কোনো ব্যবসাকে তার পরিষেবা বিনামূল্যে দিতে বাধ্য করা যেতে পারে না। ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম তৈরি ও পরিচালনা করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়। ব্রিটিশ ব্যবহারকারীরা বিজ্ঞাপনের কারণে এটি বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের পরিষেবা ব্রিটিশ অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। এটি ব্যবসাগুলোকে তাঁদের সম্ভাব্য গ্রাহকদের সঙ্গে সংযুক্ত করছে এবং যেকোনো আয়ের মানুষের জন্য অনলাইনে বিনামূল্যে পরিষেবা নিশ্চিত করছে। আমরা ব্যবহারকারীদের পছন্দ ও গোপনীয়তা রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকব।
ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীদের জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত সাবস্ক্রিপশন সেবা চালু করেছে মেটা। ব্রিটিশ ব্যবহারকারীদের জন্যও এমন একটি সেবা চালুর পরিকল্পনা করছে প্রতিষ্ঠানটি। এক মুখপাত্র জানান, আমরা যুক্তরাজ্যের জন্যও এই ধরনের সেবা চালুর পরিকল্পনা করছি এবং যথাসময়ে এ বিষয়ে আরও তথ্য জানানো হবে।
সূত্র: বিবিসি নিউজ