
ঈদে এসআই কবীর বাড়ি ফিরলেন ঠিকই, তবে ফ্রিজিং গাড়িতে করে
- ২৮ মার্চ ২০২৫, ১৬:১৯

বাংলাদেশ পুলিশের সাভার থানার এসআই মো. ফজলুর রহমান কবীর (৩৯) ঈদের ছুটি পেয়ে পরিবারের সঙ্গে গ্রামের বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আজ শুক্রবার (২৮ মার্চ) তার বাড়িতে ফেরার কথা ছিল। তবে জীবিত নয়, তার নিথর দেহ পৌঁছায় বাড়িতে, এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার পর।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) দুপুরে সাভারে দায়িত্ব পালন শেষে থানায় ফেরার পথে একটি বালুবাহী ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে গুরুতর আহত হন এসআই কবীর। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আজ শুক্রবার ভোরে লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে করে তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। তার মৃত্যুতে স্বজন ও এলাকাবাসীর মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। বাদ জুমা জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, নিহত কবীর স্ত্রী মেঘলা, মেয়ে আয়াত (৩), ছেলে আলভি (১৮ মাস) এবং মা শরবানু কবিরের সঙ্গে সাভারে বসবাস করতেন। ঈদের ছুটিতে আজ শুক্রবার (২৮ মার্চ) তাদের সঙ্গে গ্রামের বাড়ি ফেরার কথা ছিল তার।
গতকাল তিনি পরিবেশ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালতে দায়িত্ব পালনের পর দুপুর ২টার দিকে মোটরসাইকেলে থানায় ফেরার সময় দুর্ঘটনার শিকার হন। প্রথমে দুটি হাসপাতালে নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত শ্যামলীর একটি স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের মরদেহ নিয়ে আসা সাভার থানার এএসআই নেসার উদ্দিন বলেন, “তিনি শুধু একজন সিনিয়র অফিসারই ছিলেন না, তিনি সবার প্রিয় ছিলেন। একটি ট্রাক সব ধ্বংস করে দিয়েছে।”
এসআই কবীরের বড় ভাই, সিভিল এভিয়েশনে কর্মরত হারুন অর রশিদ বলেন, “মা তার কাছে ছিলেন, সবাই একসঙ্গে বাড়ি ফেরার কথা ছিল। সবাই ফিরেছে, তবে আমার ছোট ভাইটি লাশ হয়ে ফ্রিজিং গাড়িতে...” এ কথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
প্রতিবেশীরা বলেন, কবীর ছিলেন এলাকার গর্ব। পুলিশ ইউনিফর্ম পরা অবস্থায় যেমন সাহসী অফিসার ছিলেন, তেমনি সাধারণ মানুষের প্রতি ছিলেন সদয় ও সহানুভূতিশীল।
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মেরেঙ্গা ভূইয়া বাড়ির বাসিন্দা কবীর স্থানীয় আব্দুল জব্বার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও নান্দাইল সরকারি শহীদ স্মৃতি আদর্শ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে ঢাকার তিতুমীর কলেজ থেকে স্নাতক ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন এবং আইনে স্নাতক ডিগ্রি নেন।
২০০৬ সালে পুলিশের কনস্টেবল হিসেবে যোগ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। এরপর পদোন্নতি পেয়ে এএসআই হন এবং টানা ছয় বছর এসআই হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার অকাল প্রয়াণে পরিবার, সহকর্মী ও এলাকাবাসীর মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।