৩৩ হাজার গাছ লাগিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন শাকির
- ০৬ জুলাই ২০২৫, ১১:২০
পরিবেশ রক্ষায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে বৃক্ষরোপণের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সিলেটের শাহ সিকান্দার আহমদ শাকির। আজ তিনি সবার কাছে পরিচিত ‘বৃক্ষবন্ধু শাকির’ নামে। বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব উদ্যোগের কথা উঠলেই তার নাম উঠে আসে।
এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি নিজের অর্থ ও শ্রম দিয়ে গাছ লাগিয়ে যাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত তার রোপণ করা গাছের সংখ্যা ৩৩ হাজার ৩০২, যা তাকে দেশের অন্যতম পরিবেশপ্রেমী ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্বীকৃতি এনে দিয়েছে।
বৃক্ষবন্ধু শাকিরের সবুজ অভিযাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে। পরিবেশের প্রতি তার ভালোবাসা ছেলেবেলা থেকেই। তবে বিষয়টি সক্রিয়ভাবে শুরু হয় যখন তিনি দেখেন, নগরায়ণের ফলে সবুজ কমে যাচ্ছে, বাতাসে দূষণ বাড়ছে, তখন থেকেই তিনি গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করেন। প্রথমে নিজের বাসার আশপাশ থেকে শুরু করেন, পরে তা ছড়িয়ে যায় সিলেট শহরের বিভিন্ন প্রান্তে।
বেশির ভাগ মানুষ মনে করেন, বৃক্ষরোপণ একটি দলগত কাজ, কিন্তু শাকির নিজের প্রচেষ্টাতেই ৩৩ হাজারের বেশি গাছ লাগিয়েছেন। সিলেটের রাস্তাঘাট, বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ, হাসপাতাল চত্বর, খালি জায়গা— যেখানে সুযোগ পেয়েছেন, সেখানেই গাছ লাগিয়েছেন। শুধু লাগানোই নয়, তিনি নিজ হাতে গাছগুলোর পরিচর্যা করেন, নিয়মিত পানি দেন এবং স্থানীয়দেরও গাছের যত্ন নিতে উৎসাহিত করেন।
শাকিরের ভাষায়, ‘আমরা প্রতিদিন অক্সিজেন নিই, প্রকৃতির ওপর নির্ভর করি, কিন্তু তার যত্ন নিই না। আমার লক্ষ্য শুধু গাছ লাগানো নয়, মানুষকে গাছের গুরুত্ব বোঝানো। প্রতিটি গাছ মানে নতুন জীবন। তাই আমি যত দিন বাঁচব, গাছ লাগিয়ে যাব।’
তার এই অসাধারণ উদ্যোগ স্থানীয়দের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও সাধারণ মানুষ এখন তার সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করতে আগ্রহী। বিভিন্ন সময় সিলেটের বিভিন্ন সংগঠন তাকে সংবর্ধনা দিয়েছে। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তাকে ‘বৃক্ষবন্ধু শাকির’ নামে অনেকে চিনে ফেলেছেন।

শাকির শুধু গাছ লাগিয়েই থেমে থাকেননি, বরং পরিবেশ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতেও উদ্যোগী হয়েছেন। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন, তাদের গাছ লাগানোর প্রতি আগ্রহী করে তোলেন। তিনি বিশ্বাস করেন, তরুণদের যদি পরিবেশ সচেতন করে তোলা যায়, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি সবুজ ও বাসযোগ্য পৃথিবী পাবে।
তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আরও বিস্তৃত। তিনি চান, একদিন গাছের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যাবে। বিশেষ করে, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে বড় পরিসরে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি চালু করতে চান।
শাকির দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, যদি আমরা প্রতিদিন হাজার হাজার টন কার্বন-ডাই অক্সাইড বাতাসে ছড়িয়ে দিই, তাহলে তা শোষণের জন্য সমপরিমাণ গাছও থাকতে হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত সব জায়গায় বন ধ্বংসের প্রবণতা বাড়ছে, যা আমাদের পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলছে।
শাকির মনে করেন, শুধু গাছ লাগালেই হবে না, বরং তা বড় হওয়া পর্যন্ত যত্নও নিতে হবে। তিনি বলেন, ‘অনেকে দেখানোর জন্য গাছ লাগায়, কিন্তু পরে তার খোঁজ নেয় না। এতে বেশির ভাগ গাছই মারা যায়। গাছ লাগানোর পাশাপাশি তার পরিচর্যা করাটাই আসল দায়িত্ব।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে ইসলামের স্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও আমাদের দেশের ইসলামি প্রতিষ্ঠান, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বা ইমাম সমিতিগুলো এ বিষয়ে তেমন প্রচার চালায় না। অথচ রাসুলুল্লাহ (সা.) পরিবেশ সংরক্ষণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি গাছ লাগানোর উপকারিতা ব্যাখ্যা করেছেন এবং এটিকে সওয়াবের কাজ বলেছেন।দুঃখজনকভাবে, অনেক মসজিদের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, গাছ লাগাতে বাধা দেওয়া হয়। বলা হয়, এটি নামাজের জায়গা নষ্ট করে বা অন্যভাবে সমস্যার সৃষ্টি করে। অথচ মসজিদের চত্বরে গাছ থাকা মানে ছায়া পাওয়া, শীতল পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা।
শাকির বলেন, ইসলামিক শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য শুধু ইবাদত নয়, বরং সামগ্রিকভাবে সৃষ্টির কল্যাণ নিশ্চিত করাও। ইমাম ও ইসলামিক নেতাদের উচিত ধর্মীয় প্রচারের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষার বিষয়েও মানুষকে সচেতন করা। যদি রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ে মসজিদ থেকে প্রচার চালানো সম্ভব হয়, তবে পরিবেশ রক্ষার মতো জরুরি বিষয় কেন আলোচনায় আসবে না? মসজিদ থেকেই যদি মানুষকে গাছ লাগানোর ফজিলত, পানি ও প্রকৃতি সংরক্ষণের শিক্ষা দেওয়া হয়, তাহলে পুরো সমাজে এই বার্তা ছড়িয়ে যাবে।