কোন অবস্থাতেই কেউ অন্যকে শারীরিক আক্রমণ করতে পারে না: সাইয়েদ আব্দুল্লাহ

কুয়েটের ঘটনায় আহতদের একাংশ
কুয়েটের ঘটনায় আহতদের একাংশ © সংগৃহীত

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রদলের ‘সংঘর্ষ’র ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট সাইয়েদ আব্দুল্লাহ।

মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে দেওয়া পোস্টটি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে দেওয়া হলো-

‘কোন অবস্থাতেই কেউ অন্য কারও ওপর শারীরিক আক্রমণ করতে পারে না, কুয়েটে আজকে সেখানে বহু রক্তারক্তি হয়ে গেছে, এটাকে কোনোভাবেই ব্ল্যাংকচেক দিয়ে বা কোনোকিছু দিয়ে জাস্টিফাই করার সুযোগ নাই।

ডানে-বামে অনেক কথা থাকতে পারে, অনেক যুক্তি, অনেক প্রেক্ষাপট থাকতে পারে, কিন্তু ঘটনা ঘটিয়ে ফেলার পর মানুষ ঘটনাটাই দেখে।

ছাত্রদলের যারা যারা আক্রমণ করেছে এবং বহিরাগতদের ডেকে নিয়ে এসে আক্রমণ করিয়েছে, এদের সবার বিরুদ্ধে খুবই শক্ত স্টেপ নিতে হবে। এটার মানে শুধু সংগঠন থেকে বহিষ্কার করার মত গড়পড়তা স্টেপ না। ভার্সিটি থেকে প্রশাসনিক ব্যবস্থাসহ একেবারে ক্রিমিনাল চার্জ এনে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। গড়পড়তা কোন লোকদেখানো স্টেপ নিলে তা বরং এরূপ ঘটনাকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়। এইখানে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা দেখালে তা বরং ছাত্রলীগের মত দায়মুক্তি দেওয়ার সংস্কৃতি চালু করে দিবে।

ছাত্রদল, বহিরাগত এবং অন্য যাদের যাদের হাতে অস্ত্রশস্ত্র ছিলো, সেসব ছবি এবং ভিডিও অনলাইনেই দেখা যাচ্ছে। পুলিশের উচিৎ এদের কার কী পরিচয়, সেসব না দেখে সবাইকে আইনের আওতায় আনা। 

ছাত্রদল তো বটেই, ছাত্রদলের পাশাপাশি এই পুরো ঘটনায় বহিরাগত যারা ছিলো এবং অন্য সংগঠনগুলোরও কেউ যদি কোন স্তরে এনগেইজড থাকে (সেটা শিবির, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সংগঠন, কিংবা সংগঠনের নাম পরিচয় প্রকাশ না করা সাধারণ শিক্ষার্থী অথবা যে-কেউ) এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে প্রোপার তদন্ত করে ক্রিমিনাল চার্জ আনতে হবে।

আরেকটা কথা হলো, ক্যাম্পাসে যদি রাজনীতি থাকে, তাহলে তা সবার জন্যই থাকা উচিৎ। আর যদি রাজনীতি না থাকে, তাহলে সবার জন্যই বন্ধ থাকা উচিৎ। 

ছাত্রদল যদি সদস্যফর্ম বিতরণ করতে বাঁধার সম্মুখীন হয়, তাহলে তো ওই ক্যাম্পাসে বৈষম্যহীন ছাত্র আন্দোলনেরও কোন কমিটি থাকা উচিৎ না, কারণ বৈষম্যহীন প্ল্যাটফর্মও ইতোমধ্যে ডি- ফ্যাক্টো রাজনৈতিক দল হয়ে গেছে। আবার শিবিরও থাকতে পারে না সেই ক্যাম্পাসে। একইসাথে দলের নাম লুকিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী সেজে নিজেরা ঠিকই কার্যক্রম চালাবে, কিন্তু প্রকাশ্যে যারা রাজনীতি করবে, এমন কাউকে বাঁধা দেয় যারা, তাদেরও এই গুপ্ত কৌশলী রাজনীতি চলতে পারে না।

আর যদি সবাইমিলে একসাথে মনে করে যে রাজনীতি তারা করবেই, তাহলে প্রত্যেকটা সংগঠনেরই কমন কিছু গ্রাউন্ডে একজায়গায় আসতেই হবে। যেমন, কাউকে জোরপূর্বক কোথাও কোন সংগঠন করতে বা কর্মসূচিতে যোগ দিতে বাধ্য করা যাবে না। কোন অবস্থাতেই মারামারি, লাঠালাঠি কিংবা শারীরিক কোন আক্রমণ করা যাবে না, তাতে করে কার কী পরিচয়, কে কী মতাদর্শের—এগুলোর কোনোকিছুই বিবেচ্য হতে পারে না।

পুরো এই ঘটনায় দায়মুক্তি যাতে না পেতে পারে আক্রমণকারীরা, সেটা কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে। মারামারি, রক্তারক্তির সংস্কৃতিকে চিরতরে কবর দেওয়া উচিৎ। মানুষের জীবনের চেয়ে রাজনীতি বড় নয়।’