জাতিসংঘের প্রতিবেদন: পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদ, বিচারবহির্ভূত হত্যার প্রমাণ
- ১০ জুলাই ২০২৫, ১৫:৪৭
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে বেপরোয়া গুলি করে হত্যা করেছে পুলিশ। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) প্রকাশিত তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে ওএইচসিএইচআর নিশ্চিত হয়েছে যে, আবু সাঈদ বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। ভুক্তভোগী ব্যক্তি, প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা এবং ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণের ভিত্তিতে পুলিশ সরাসরি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
২৩ বছর বয়সী আবু সাঈদ পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট এবং পরিবারের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া সদস্য ছিলেন। তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। গত বছরের ১৬ জুলাই আন্দোলন চলাকালে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে তিন থেকে চার হাজার শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করেন। শিক্ষার্থীদের একটি বড় দল ১ নম্বর গেটে জড়ো হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পুলিশের দেওয়া প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে বিক্ষোভকারীরা জোর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট দিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করলে ছাত্রলীগ (বর্তমানে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রসংগঠন) সমর্থকদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে গ্যাসের শেল এবং ফাঁকা গুলি ছোড়ে। পুলিশ জানিয়েছে, আবু সাঈদ গুরুতর আহত হয়ে পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘মাথায় আঘাত ও গুলির চিহ্ন’ পাওয়া গেছে।
কিন্তু ওএইচসিএইচআর-এর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, পুলিশ ও ছাত্রলীগ সমর্থকরা লাঠিসোঁটা নিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, আবু সাঈদও মারধরের শিকার হন। এরপর পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ও প্রাণঘাতী মেটাল প্যালেটভর্তি শটগান দিয়ে গুলি চালায়, যাতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন।
ভিডিও ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য অনুযায়ী, পুলিশ গুলি চালানোর সময় আবু সাঈদ দু’হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং কারও জন্য কোনো হুমকি তৈরি করেননি। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, যখন তিনি পুলিশের দিকে তাকিয়ে ‘আমাকে গুলি করো’ বলে চিৎকার করছিলেন, তখন দুই পুলিশ সদস্য তাঁকে সরাসরি লক্ষ্য করে একাধিকবার গুলি করেন। ফরেনসিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তাঁর শরীরে ৪০ থেকে ৫০টি মেটাল প্যালেটের আঘাত ছিল, যা প্রাণঘাতী ছিল।
জাতিসংঘের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা আবু সাঈদের মেডিকেল রেকর্ড পরীক্ষা করে দেখেছেন, তাঁর যথাযথ ময়নাতদন্ত করা হয়নি। তবে মরদেহের ছবি ও অন্যান্য মেডিকেল তথ্য বিশ্লেষণে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, তাঁকে প্রায় ১৪ মিটার দূর থেকে অন্তত দুবার গুলি করা হয়েছিল। ফরেনসিক বিশ্লেষণে আরও দেখা গেছে, গুলি করার পর তাঁর শরীর থেকে প্রচুর রক্তপাত হচ্ছিল এবং মাথায় গুরুতর কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনটি বলছে, উপস্থাপিত প্রমাণের ভিত্তিতে এটি নিশ্চিত হওয়া যায় যে, পুলিশ আবু সাঈদকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গুলি করে হত্যা করেছে এবং এটি একটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড।