নির্যাতনের আলামত মুছতে আয়নাঘরে পরিবর্তন আনা হয়েছে: গোলাম আজমপুত্র আযমী
- ১০ জুলাই ২০২৫, ১৫:৪৭
রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত আয়নাঘর পরিদর্শন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা এবং ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকার কচুক্ষেতে ডিজিএফআই এবং উত্তরা ও আগারগাঁওয়ে র্যাবের আয়নাঘর পরিদর্শন করেন তারা। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী। পরিদর্শন শেষে ফেসবুকে নির্যাতনের আলামত মুছতে আয়নাঘরে পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি লেখেন, আজ সকালে প্রধান উপদেষ্টা কচুক্ষেতে অবস্থিত ডিজিএফআই এর আয়নাঘর পরিদর্শনে যান। ইতোমধ্যেই আপনারা নিশ্চয়ই তা দেখেছেন। এই পরিদর্শনের সময় তিনি আমাকেও সাথে নিয়ে যাওয়ায় উনার কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে গণমাধ্যমে আমি একটি বিবৃতি পাঠিয়েছি। আপনাদের সাথে তা শেয়ার করছি।
অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল লেখেন, আয়নাঘর পরিদর্শনে আমাকে সাথে নেয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। প্রধান উপদেষ্টা বহুল প্রতীক্ষিত আয়নাঘর পরিদর্শন করেন। আমাকে উনার সফরসঙ্গী হিসেবে নেয়ায় আমি উনার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বলতে দ্বিধা নেই যে, বাংলাদেশে তো বটেই, সম্ভবত সমগ্র পৃথিবীতে এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন যে একজন সরকার প্রধান তাঁর পূর্ববর্তী ফ্যাসিবাদ জালেম সরকারের যুলুমে নির্যাতিত, নিষ্পেষিত মজলুমকে সাথে নিয়ে নির্যাতনস্থল পরিদর্শনে গিয়েছেন। পৃথিবীর সকল শাসকদের জন্য এটা একটা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
তিনি আরও লেখেন, আমি দীর্ঘ ৮ বছর তথাকথিত আয়নাঘরে আটক থাকায় ধীরে ধীরে সেই স্থাপনার বিভিন্ন সেল, ইন্টারোগেশন রুম, সুপারভাইজারদের কক্ষসহ সেই স্থাপনার বিভিন্ন আনুষঙ্গিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য আমার জানার সুযোগ হয়েছিল। আজকের এই পরিদর্শনের ফলে আমি সরেজমিনে প্রধান উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টাসহ চারজন উপদেষ্টা, গুম কমিশনের চেয়ারম্যানসহ সকল সদস্য এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গণমাধ্যমের ব্যক্তিবর্গকে সরেজমিনে অনেক কিছু বিস্তারিত অবহিত করার সুযোগ পাই। ফ্যাসিবাদ সরকারের নির্দেশে একটি সরকারি বাহিনী মানুষের সাথে কত নির্মম হতে পারে, কতটা অমানবিক হতে পারে এবং নির্যাতনের মাত্রা কতটা জঘন্য হতে পারে এসব বিস্তারিত জেনে উনারা সকলেই অত্যন্ত মর্মাহত হন। এ ধরনের একটি পরিদর্শন ভবিষ্যতে দেশকে ফ্যসিবাদমুক্ত রাখতে অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে আশা পোষণ করি।
‘এখানে উল্লেখ করতে চাই যে, আমি বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেছি ইতোমধ্যেই ডিজিএফআই এর আয়নাঘরের অনেক পরিবর্তন করে ফেলা হয়েছে যাতে করে নির্যাতনের মাত্রার আলামত সঠিকভাবে বুঝা না যায়। উদাহরণস্বরূপ, দরজার গ্রিলের কপাট এবং স্টিলের দরজা খুলে কাঠের দরজা লাগানো হয়েছে, জানালার গ্রিল খুলে ফেলা হয়েছে, দরজা ও জানালার কাঁচের স্তর কালো রং এর আস্তর মুছে কাঁচ পরিষ্কার ও স্বচ্ছ করে ফেলা হয়েছে, দেয়াল ভেঙ্গে ভেন্টিলেটার বানানো হয়েছে, ছোট দুই রুমের মাঝের দেয়াল ভেঙ্গে রুমের সাইজ বড় দেখানো হয়েছে, যেই কক্ষে নির্যাতন করা হতো সেই কক্ষে নির্যাতন করার যত রকমের আলামত ছিল সব সরিয়ে ফেলা হয়েছে ইত্যাদি।’
‘এই অপকর্ম যারা করেছে তারা নিঃসন্দেহে অপরাধীদের দোষ ধামাচাপা দেয়ার জন্যই এই কাজ করেছে। অপরাধীদের অপরাধের মাত্রা কম দেখিয়ে তাদের বাঁচানোর বা শাস্তি লঘু করার চেষ্টার সাথে কারা জড়িত তা অনুসন্ধান করে তাদেরকেও বিচারের আওতায় আনার জন্য আমি সরকারের প্রতি আবেদন জানাচ্ছি।’
সবশেষে তিনি লেখেন, আমি আরো উল্লেখ করতে চাই যে, এ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ যারা করেছে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পরও তারা আজ পর্যন্ত গ্রেফতার না হওয়ায় আমি অত্যন্ত বিস্মিত। বলা বাহুল্য, প্রভাবশালী এ সকল অপরাধী মুক্ত থাকায় আমি নিজের নিরাপত্তা নিয়েও অত্যন্ত শঙ্কিত বোধ করছি। অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের হাতে সোপর্দ করার জন্য আমি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। “জাস্টিস ডিলেইড, জাস্টিস ডিনাইড” কথাটির গুরুত্ব অনুধাবন করে সংশ্লিষ্ট সকলকেই দ্রুত গ্রেফতার করে সুবিচার নিশ্চিত করার মাধ্যমে আমিসহ সারাদেশে যত মানুষ গুম-খুনসহ আরো যত রকমের জুলুমের শিকার হয়েছেন সকল অপরাধের দ্রুত বিচারের কাজ সম্পন্ন করে আমাদের ভোগান্তি কিছুটা লাঘব করার জন্য আমি জোর দাবি জানাচ্ছি।