‘প্লিজ কেউ কাউকে ছেড়ে যায়েন না’
শিক্ষার্থীদের সংঘাতে না জড়ানোর বার্তা নিয়ে ঢাবিতে ছাত্রদল নেতার ব্যতিক্রমধর্মী গ্রাফিতি
- টিডিসি রিপোর্ট
- ১৩ জুলাই ২০২৫, ১১:১৪
গ্রাফিতি হলো মানুষের মনকে আন্দোলিত করার একটি শক্তিশালী উপায়। গ্রাফিতি যখন সমাজ পরিবর্তনের আহ্বান করে তখন তা কেবল একটি শিল্পকর্ম থাকে না। তখন এটি হয়ে উঠে একটি পরিবর্তনের প্রতীক।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পটপরিবর্তনের পর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা একাধিকবার সংঘাতে জড়িয়েছেন। সর্বশেষ গত রবিবার দিবাগত রাতে রাজধানীর নীলক্ষেতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘাতে জড়ান সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আগামীতে এমন সংঘাতে না জড়ানোর বার্তা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে এক ব্যতিক্রমধর্মী গ্রাফিতি আঁকলেন শাখা ছাত্রদল নেতা আবিদুল ইসলাম খান। ‘প্লিজ কেউ কাউকে ছেড়ে যায়েন না’ শিরোনামে তার এ শিল্পকর্মের উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থীদের সংঘাতে না জড়াতে সচেতন করা।
তার ভাষ্য, পাশাপাশি ছাত্রজনতা ২০২৪-এর অভ্যুত্থানে যেভাবে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিল, ওই স্পিরিট যেন থাকে। সামনে এমন যদি সংকট তৈরি হয়, তাহলে তারা যেন একসঙ্গে আবার ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামতে পারে, একসঙ্গে লড়াই করতে পারে। এ জন্যই তার এই ব্যতিক্রমধর্মী গ্রাফিতি আঁকার উদ্যোগ।
জানা যায়, আজ বুধবার দুপুরে ক্যাম্পাসের টিএসসি, শ্যাডো, মধুর ক্যান্টিনসহ বিভিন্ন ভবনের প্রধান ফটক ও দেয়ালে দেয়ালে এই গ্রাফিতি আঁকা হয়। শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবিদুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে এই কর্মসূচিতে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
গ্রাফিতিতে ছাত্রদলের এই নেতার ৫ আগস্টের ‘প্লিজ কেউ কাউকে ছেড়ে যায়েন না’ শীর্ষক এক বক্তব্যের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে এই আহবানটি প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে। তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ঐক্যবদ্ধ মজলুমদের মাঝে ফাটল দৃশ্যমান হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ঠুনকো অভিযোগে একে অপরের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। ঢাকা কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজ, মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ, কবি নজরুল কলেজগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ হতে দেখেছি। সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের মুখোমুখি সংঘর্ষ অনাকাঙ্ক্ষিত ও চরম দুঃখজনক। এই ঘটনাগুলো আমাদের চরম হতাশ করেছে ও পীড়া দিচ্ছে। চোখের সামনে অসংখ্য মৃত্যু দেখেছি, এখন ঐক্য বিনষ্ট হতে দেখছি, যা এ রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ।
তিনি আরও বলেন, তাই আজকের এই দিনগুলোতে ৫ আগস্টের সেই ‘প্লিজ কেউ কাউকে ছেড়ে যায়েন না’ এই আহবানটা প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে। এই লাইনটার সাথে ৫ জন শহীদ ও অসংখ্য আহতের রক্ত জড়িয়ে আছে।
‘‘এই লাইনটা যেন আমাদের এখনো আহবান করছে ঐক্যবদ্ধ হতে, ঘৃণা চর্চা বন্ধ করতে এবং একটি স্থিতিশীল নতুন বাংলাদেশ গড়তে। সেই ঐক্যের প্রতীক হিসেবে গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের রক্তে ভেজা এই লাইনটুকু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও অনুষদে অঙ্কিত হয়েছে।’’
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় কারফিউ ভাঙার পূর্বে ছাত্রদলের এই নেতা উপস্থিত ছাত্র-জনতাকে বলছিলেন,‘প্লিজ কেউ কাউকে ছেড়ে যায়েন না। এই যুদ্ধের ময়দানে আমাদের সাথে থাকেন, আজকেই আমরা জিতব।’ পরে তার এই বক্তব্যে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সাড়া ফেলেছিল।