৩৪ বছরের শিক্ষকতা শেষে রাজকীয় বিদায় প্রধান শিক্ষকের
- ১৩ জুলাই ২০২৫, ১১:২৬
শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকের বিদায় বেলায় শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৪ নং খাড়খাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মন্টু চন্দ্র দেবনাথ। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে প্রধান শিক্ষকের অবসরগ্রহণ উপলক্ষে রাজকীয় বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, সহকর্মী ও এলাকাবাসী।
জানা যায়, ১৯৯০ সালে বদরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দিয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্ম জীবন শুরু করেন মন্টু চন্দ্র দেবনাথ। এরপর ২০০০ সালে বদলি হয়ে লোহাগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। পদন্নতি পেয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে উপাধীক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০০৩ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত ছিলেন তিনি। সর্বশেষ খাড়খাঁ দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০০৪ হতে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। প্রায় দীর্ঘ ৩৪ বছর শিক্ষকতা শেষে আজ মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) অবসরে ঘোষণা দেন এই প্রধান শিক্ষক।
প্রিয় শিক্ষকের অবসর গ্রহণের সময় শিক্ষককে গাড়িতে উঠিয়ে ফুল দিয়ে বরণ করে স্কুলে নিয়ে আসেন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। তারপর মঞ্চে উঠিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ সময় চারপাশের পরিবেশ যেন ভারি হয়ে উঠে। শিক্ষাগুরুর ভালোবাসার স্মৃতিচারণ করেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
বিদায়ী অনুষ্ঠানে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘তিনি আমাদের আলোর পথ দেখিয়েছেন। তার দেওয়া পথে আমরা অনেকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি, স্যারের স্মৃতি ভোলার নয়। তিনি আমাদের হৃদয়ের অন্তঃস্থল স্থায়ী হয়ে থাকবেন। তিনি চিন্তায় ও মননে ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক। তিনি ছিলেন রাজনৈতিক বা আঞ্চলিক দলাদলির ঊর্ধ্বে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। যে জ্ঞানের প্রদীপশিখা তিনি এ অঞ্চলে প্রজ্বলিত করে গেছেন, তার ঋণ শোধ করার মতো নয়। স্যারের নিরলস কর্মজীবনে সততা, ন্যায়পরায়ণতা, ত্যাগ ও আদর্শ আমাদের সমগ্র জীবনের দিশারি হয়ে থাকবেন।’
প্রিয় শিক্ষকের প্রতি আবেগ অনুভূতির প্রকাশ করে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আজকের পর থেকে স্যারকে আর স্কুলে দেখবো না। তিনি সবসময় আমাদের মনে থাকবেন, স্যারকে আমরা মিস করবো। স্যারের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। স্যার আমাদের আদর যত্ন করে পড়ালেখা করাতেন।’
বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক মনির তপদার বলেন, ‘স্যারের শূন্যতা কখনই পূরণ হওয়ার নয়। স্যার অনেক ভালো শিক্ষক ছিলেন। স্যারকে আমরা আমাদের চাকুরি জীবনের শুরু থেকেই দেখেছি তিনি কখনোই সময়ের অপব্যবহার করতেন না। যথা সময়ে আসতেন এবং যথা সময়ে চলে যেতেন। যার কারণে আমাদের সহকারী শিক্ষকদের কেউ ফাঁকিবাজি করার সুযোগ পেতো না। স্যার দক্ষতার সাথে স্কুল পরিচালনা করতেন। ক্লাস শেষে কখনোই কোনো শ্রেণিকক্ষ খালি থাকতো না।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্যারের নিয়মানুবর্তিতা, সময়ানুবর্তিতা থেকে আমরা সহকারী শিক্ষকরা অনেক কিছু শিখেছি। এখান থেকে কোনো শিক্ষক যদি প্রমোশন নিয়ে কোথাও যান তবে স্যারকে অনুকরণ করে তিনিও দক্ষতার সাথে একজন প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।’