এনটিআরসিএ

শিক্ষক নিয়োগের নামে শত কোটি টাকা আয়ের ফাঁদ!

এনটিআরসিএ
এনটিআরসিএ ©

শিক্ষক নিয়োগের নামে কয়েক’শ কোটি টাকা আয়ের ফাঁদ পেতেছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। দেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শূন্য পদের বিপরীতে শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে সম্প্রতি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে (এনটিআরসিএ)। বিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগপ্রত্যাশীদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি করে আবেদনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রতিটি আবেদনের বিপরীতে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮০ টাকা। এর ফলে চাকরির আবেদন করতেই লাখ টাকা ব্যয়ের ফাঁদে পড়েছে নিয়োগপ্রত্যাশীরা। যদিও বিষয়ভিত্তিক আবেদন পদ্ধতিতে মাত্র একটি আবেদনেই জাতীয় মেধা তালিকার আলোকে শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যমতে, শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে ইতোমধ্যেই ৫ লাখ প্রার্থী আবেদন করেছেন। যে সংখ্যা প্রায় ৬ লাখে পৌঁছাতে পারে। শিক্ষার্থীদের হিসাব, আবেদনকারীর প্রত্যেক চাকরিপ্রার্থী অন্তত ৫টি করে আবেদন করেছেন। ১০, ১৫ এমনকি ৩০টি পর্যন্ত আবেদন করেছেন, খোঁজ নিয়ে এমন প্রার্থীও পাওয়া গেছে। অর্থাৎ সর্বনিম্ন ৫টি ধরলেও জনপ্রতি ৯০০টাকা হিসেবে ৫ লাখ আবেদনকারীর কাছ থেকে ৪৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এনটিআরসিএস। যদিও বাস্তবে টাকার এই পরিমাণ শতকোটি ছাড়িয়ে গেছে বলে দাবি শিক্ষার্থীদের।

১৬টি আবেদনকারীর তথ্য

এনটিআরসিএর গণ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সারাদেশে স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোট ৩৯ হাজার ৫৩৫ পদ শূন্য আছে। ১ম থেকে ১৪তম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নিয়োগপ্রত্যাশীদের এসব পদের বিপরীতে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক আবেদন করতে বলা হয়। প্রাপ্ত আবেদন জাতীয় মেধার ভিত্তিতে বাছাইপূর্বক বিধি মোতাবেক প্রতিটি পদের বিপরীতে চূড়ান্তভাবে একজন করে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হবে। এরপর নির্বাচিতদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটিকে মোবাইল ফোনে এসএমএস করে নির্বাচিতদের তথ্য জানিয়ে দেয়া হবে। নিয়োগপ্রত্যাশীরা বলছেন, প্রতিষ্ঠানভিত্তিক আবেদনের এ পদ্ধতি ত্রুটিপূর্ণ। এর ফলে একদিকে আবেদনকারীদের মোটা অঙ্কের ফি পরিশোধ করতে হচ্ছে। অন্যদিকে মেধাতালিকায় এগিয়ে থেকেও শুধু আবেদনের সুযোগ না পেয়ে নিয়োগ বঞ্চিত হবেন অনেকে চাকরিপ্রার্থী।

প্রতিষ্ঠানভিত্তিক আবেদনের পদ্ধতিকে এনটিআরসিএর মোটা অঙ্কের ফি আদায়ের ফাঁদ বলে অভিযোগ তুলছেন নিবন্ধন উত্তীর্ণ নিয়োগপ্রত্যাশীরা। আতিকুর রহমান আতিক নামের এক নিয়োগপ্রত্যাশী বলেন, ‘মেধা তালিকায় পিছিয়ে থাকায় চাকরি নিশ্চিত করার জন্য আমাকে অন্তত দুই হাজার প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে হবে। সেক্ষেত্রে শুধু এনটিআরসিএকেই দিতে হবে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। আমার পক্ষে এত টাকা দেয়া দেয়া অসম্ভব। কিডনি বিক্রি করা ছাড়া কোন উপায় দেখছি না।’ কিডনি বিক্রির কথা উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও পোস্ট দিয়েছেন আতিকুর রহমান। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘কোন হাসি বা ঠাট্টা নয়। এনটিআরসিএতে এপ্লিকেশন করবার জন্য আমি আমার একটা কিডনি বিক্রি করতে চাই। কেউ উচ্চ দামে নিতে চাইলে আমার নম্বরে যোগাযোগ করুন। আমি অত্যন্ত গরীব। এছাড়া আমার আর কোন উপায় নেই। আমার দুইটি কিডনিই ভাল আছে।’

এদিকে এনটিআরসিএর এ পদ্ধতিতে মেধাতালিকার সুষ্ঠু প্রয়োগ না হওয়ার অভিযোগ করছেন নিয়োগপ্রত্যাশীরা। বিষয়টিকে মিজানুল হক নামের এক নিয়োগ প্রত্যাশী এভাবে ব্যাখ্যা করেন— ‘মনে করেন আমিনুল হক নামের একজন একটি কলেজের সমাজবিজ্ঞানের জন্য আবেদন করেছেন। তার আবেদন করা কলেজে মেধা তালিকায় এগিয়ে থাকা আবেদনকারীর সংখ্যা বেশি থাকায় আমিনুল নিয়োগ পাবেন না। অথচ আমিনুলের তুলনায় মেধা তালিকায় পিছিয়ে থেকেও তার বন্ধু রিয়াজ হোসাইন অন্য একটি কলেজে আবেদন করে নিয়োগ পেয়ে যাবে। কারণ ওই কলেজে আবেদনকারীদের মধ্যে রিয়াজের অবস্থান মেধা তালিকায় এগিয়ে ছিল। অর্থাৎ কেউ দশটি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেও নিয়োগ পাবে। আবার অন্য একজন এক হাজার কলেজে আবেদন করেও নিয়োগ পাবেন না।’

মোটা অঙ্কের ফি দিতে অপারগ নিয়োগপ্রত্যাশীরা প্রতিদিনই ভিড় করছেন এনটিআরসিএ কার্যালয়ে। অনুরোধ জানাচ্ছেন সহজ আবেদন প্রক্রিয়ার। এনটিআরসিএ কার্যালয়ের সামনে কথা হয় আবদুর রহমান নামের এক নিয়োগপ্রত্যাশীর সঙ্গে। তিনি বলেন, পদ্ধতি পরিবর্তনের অনুরোধ জানাতে আমরা কয়েকজন মিলে এখানে আসলাম। এনটিআরসিএ কর্মকর্তারা বলছেন, আপনারা আগে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে চাকরি নিতেন। এখন ২ থেকে ৩ লাখ টাকা খরচ করে দেশের সব প্রতিষ্ঠানে আবেদন করে চাকরি পেলে অসুবিধা কি?

যার যত আবেদন, চাকরির সম্ভাবনা তার তত বেশি: এনটিআরসিএ সচিব

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএ সচিব মো. আ. আউওয়াল হাওলাদার বলেন, প্রতিষ্ঠানভিত্তিক আবেদন প্রক্রিয়ায় সমস্যা ও সম্ভাবনা— দুটিই আছে। আবেদনের বিষয়ে সমস্যার কথা জানাতে অনেকেই আমাদের কাছে আসছেন। আমরা ভবিষ্যতে বিষয়টি ভেবে দেখব। বেশি আবেদন করে নিয়োগ পাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু- এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সচিব বলেন, যিনি যত বেশি আবেদন করবেন; তার নিয়োগ পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। তবে মেধাতালিকায় এগিয়ে থাকা নিয়োগপ্রত্যাশীদের খুব বেশি আবেদন না করার পরামর্শ দেন তিনি