এনসিটিবিতে সংঘর্ষের দায় শিবিরকে দেওয়া ছাত্র ফেডারেশন নেতা আরমান একসময়ের শিবির সাথী

আরমানুল হক, আহ্বায়ক, ছাত্র ফেডারেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আরমানুল হক, আহ্বায়ক, ছাত্র ফেডারেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় © সংগৃহীত

রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ভবনের সামনে ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’ ও ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’ নামের দুটি সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার রেশ যেন কাটছেই না। ‘সংক্ষুব্ধ পাহাড়ি ছাত্র-জনতা’ সংগঠনের দাবি, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছেন দুর্বৃত্তরা। প্রশাসনের তৎপরতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাদের কেউ কেউ। আবার ‌হামলা শুরুর আগেই হামলার তথ্য দিয়ে ফেসবুকে ছাত্র ফেডারেশন নেতার স্ট্যাটাসের বিষয়টি নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। 
 
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, এনসিটিবির সামনের ওই সমাবেশের আয়োজক ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’ হলেও তাদের সঙ্গে যোগ দেন বামপন্থী সংগঠন ছাত্র ফেডারেশনের নেতাকর্মীরা। এ সময় সেখানে ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরমানুল হকও ‍উপস্থিত ছিলেন। তিনি বেলা ১২টা ৫৮ মিনিটে তিনিই প্রথম ঘটনাস্থল থেকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন, ‘শিবির ওরফে ‘Students for Sovereignty’ NCTB অভিমুখে মিছিলে স্ট্যাম্প নিয়ে এসে ‘আদিবাসী’দের মিছিলে হামলা করল। আর স্লোগান দিচ্ছে তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি। আবার তারা ভাড়া করে মানুষও আনল।’ আরমানের ওই স্ট্যাটাসটি ওই সময় বেশ ভাইরাল হয়।

পরে অবশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চাউর হয়, ‌'সংঘর্ষের ওই ঘটনায় আরমানুল হক উসকানি দিয়েছেন।' কারণ হিসেবে নেটিজেনদের একটি পক্ষ বলছেন, একাধিক গণমাধ্যমের লাইভে দেখা যায়, দুপুর ১২টা ৫৬ মিনিটের লাইভে দুই পক্ষকে আলাদাভাবে স্লোগান দিতে দেখা গেলেও তখনও কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। যদিও সে সময় বেশ উত্তেজনা চলছিল। দুপুর ১টা ৮ মিনিটে ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’র পক্ষ থেকে একজন গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলা অবস্থায় তাদের কর্মীরা ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’র ওপর হামলা চালালে শুরু হয় সংঘর্ষ। এতে বেশ কয়েকজন ‌‌'আদিবাসী' শিক্ষার্থী আহত হন। 

'হামলা শুরুর আগেই হামলার তথ্য দিয়ে স্ট্যাটাস কেন' নেটিজেনদের এমন প্রশ্নের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরমানুল হক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ১টার আগেও হামলা হয়েছিল। তারপর আমি এই স্ট্যাটাসটি দিয়েছিলাম। ফেসবুকে লাইভে হামলার শুরুর দৃশ্য রয়েছে জানালে তিনি দাবি করেন, সেখানে আগের হামলার দৃশ্য থাকা দরকার বলে তিনি মনে করেন। 

পড়ুন: শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নাম আসছে এনসিটিবিরও

এদিকে আরমানুল হক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ায় আগে এলাকায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে জড়িত ছিলেন— এমন দাবি ফেসবুকে ছড়িয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের শাখার শিবিরের তৎকালীন সভাপতি ও বর্তমান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর চকরিয়া পৌরসভার শূরা সদস্য মুহাম্মদ জুনাইদ। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, ‘আরমানুল হক আমার এলাকার ছোট ভাই। সে আমার মাদ্রাসার ছাত্র। আমরা কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী তমিজিয়া ইসলামীয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসার ছাত্র। সেখানে আমি ফাজিল পর্যন্ত পড়েছি। আমি ২০১৫ সালে এই ইউনিয়ন শিবিরের সভাপতি ছিলাম এবং ২০১৪ সালে সেক্রেটারি ছিলাম। আমি আরমানকে নিজ হাতে সাথী বানিয়েছি। আমাদের সাথে অনেকদিন কাজ করেছে সে। কিন্তু তার কর্মকাণ্ড দলের আদর্শ ও গঠনতন্ত্রের সঙ্গে মিল না হওয়ায় তার সাথী পদ স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পর আর যোগাযোগ হয়নি। আরমানের বাবাও একজন ইসলামিক মতাদর্শের মানুষ বলে জানান তিনি। 

‘আমি শিবিরের সাথে ছিলাম না। তবে কক্সবাজারের শিবিরের আলাদা দাপট আছে। আর আমি মাদ্রাসা থেকে পড়াশোনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলাম।’আরমানুল হক, আহ্বায়ক, ছাত্র ফেডারেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

তবে এসব বিষয় অস্বীকার করে আরমানুল হক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‌‌‌‘আমি শিবিরের সাথে ছিলাম না। তবে কক্সবাজারের শিবিরের আলাদা দাপট আছে। আর আমি মাদ্রাসা থেকে পড়াশোনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলাম।’

এ বিষয়ে ঢাবি শাখা শিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেন, আরমানুল হক এলাকায় ছাত্রশিবিরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে শুনেছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর সে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। সংগঠনের সঙ্গেও জড়িত নন। সুতরাং তার বিষয়ে শিবিরের কোনো বক্তব্য নেই এবং এর দায়ভারও শিবির নেবে না। 

ছাত্রশিবির ঢাবি শাখার সাবেক সভাপতি সাদিক কায়েম বলেন, এ হামলার ঘটনার পর্যাপ্ত ভিডিও ফুটেজ রয়েছে, কারা ইন্ধন যুগিয়েছে সেটাও দৃশ্যমান।  কিন্তু একটি মহল ঘটনাকে ফ্যাসিবাদী বয়ানে উপস্থাপন করতে চাচ্ছে। স্পষ্ট ফুটেজ থাকা স্বত্বেও প্রমাণের ভিত্তিতে হামলাকারীদের বিচার করার কথা না বলে বরং চব্বিশ বিপ্লবের নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সারাদেশের সচেতন ছাত্রজনতা এই অপচেষ্টা ঘৃণা নিয়ে প্রত্যাখান করেছে। এ ঘটনায় যারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছাত্রশিবিরের নামে বেনামে গুজব, মিথ্যাচার ও অপপ্রচারে লিপ্ত তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।