হৃদয় ও তার মায়ের জীবন বদলে দিয়েছেন যে ফটোগ্রাফার
- ৩০ নভেম্বর -০০০১, ০০:০০
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে আজকাল অনেক কিছুই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাল হয় অনেক ছবিই। একজন মায়ের তরুণ সন্তানকে কোলে নিয়ে হেঁটে যাওয়ার ছবিটিও সামাজিক মাধ্যম থেকেই নজরে পড়ে বিবিসির। তারপর থেকে ওই সন্তান হৃদয় সরকারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং মা সীমা সরকারের নাম বিবিসি ১০০ নারীর তালিকায় আসার গল্পটা অনেকেরই জানা।
তবে এ ছবির পেছনের কারিগরকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত বিবিসির উদ্যোগেই ছবির আলোকচিত্রী আল মামুনের সাথে সাক্ষাৎ হল মা সীমা সরকার ও তার সন্তান হৃদয় সরকারের।
নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে অবশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে পেরে স্বস্তির হাসি সীমা সরকারের মুখে। হৃদয় সরকার পেয়েছেন তাঁর পছন্দের বিষয়- আন্তর্জাতিক সম্পর্ক।
বৃহস্পতিবার কলা ভবনে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে বসে তাদের সেই সংগ্রাম এবং তারপর তাদের স্বপ্ন পূরণের কথাই জানাচ্ছিলেন তারা বিবিসির ফেসবুক লাইভে এসে।
এর আগে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল ওই ছবিটি যিনি তুলেছেন সেই এম এ আল মামুনকে খুঁজে বের করে বিবিসি।
ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচারের একপর্যায়ে তাঁকেও হাজির করা হয় সেখানে। পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় সীমা সরকার ও হৃদয় সরকারের সাথে। তাদের মধ্যে এই প্রথম দেখা হলো।
এ সময় মা-ছেলে দুজনের চোখেমুখেই কৃতজ্ঞতা ফুটে উঠছিল আল মামুনের প্রতি। কারণ - ঐ একটি ছবিই যে বদলে দিয়েছে তাঁদের জীবন!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞানে ৪র্থ বর্ষে পড়ছেন ঠাকুরগাঁওয়ের আল মামুন। ছবিটি তিনি তোলেন তাঁর নিজের আবাসিক হল বিজয় একাত্তরে।
‘আমার কাজিনও ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছিল। ওর সাথে কথা বলতে বলতেই হঠাৎ চোখে পড়ে হৃদয়কে কোলে নিচ্ছে তার মা। আমার কাছে অবাক লাগে। আমি কিন্তু ছবিতে এটিই দেখাতে চেয়েছি যে সামনে একজন হেঁটে যাচ্ছে যে হাঁটতে পারে, আর আরেকজন হাঁটতে পারে না’- এভাবেই ছবিটি তোলার পেছনের গল্প বলছিলেন মামুন।
সামাজিক মাধ্যমে ছবিটি পোস্ট করার পরই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। প্রচুর লাইক, শেয়ার ও কমেন্ট পড়তে থাকে। তার পরের গল্প বলছিলেন হৃদয়।
‘আমার এক বন্ধু আমাকে ফোন করে জানায় যে আমার ছবি ভাইরাল হয়ে গেছে। এরপর আমি অনলাইনে খুঁজতে থাকি এ ছবিটি কে তুলেছে। সাতদিন পর অবশেষে ফেসবুকে তার সাথে আমার যোগাযোগ হয়। এরপর ফোনে কথা ও আজ তো সামনা সামনিই দেখা হল।’
তবে এ ছবির সঙ্গে তার আত্মিক যোগাযোগ থাকলেও পেছনের সংগ্রামের গল্পটা জানা ছিলনা তাঁরও।
‘আমিও আমার মায়ের কাছে থাকি না। একদিন মায়ের সাথে কথা না হলে ভালো লাগে না। মা বিষয়টাই আসলে অন্যরকম। আমি তাঁদের স্যালুট জানাই। আমি ছবি তুলেছি কিন্তু পেছনের গল্প যে এত বিশাল তা জানা ছিলনা। এখন একটা ছবি যদি হৃদয়ের জীবনে কোন সুযোগ তৈরি করে দেয়, সেটা দারুণ।’
বিবিসির ফেসবুক লাইভেও দর্শকরা স্যালুট জানান সীমা সরকারকে। হৃদয়ের জন্য শুভকামনা আর মামুনকে ধন্যবাদ জানিয়ে মন্তব্য এসেছে অজস্র। তবে সীমা সরকারের সমস্ত ধন্যবাদ মামুনকে ঘিরে।
‘ও আমার আরেকটা সন্তানের মতোই, ও আমার জন্য যা করেছে, আমি ওর জন্য প্রাণখুলে দোয়া করি ও যাতে অনেক বড় হয়।’ একহাতে হৃদয় আর অন্যহাতে মামুনকে জড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন অদম্য এই মা।
ভাইরাল হওয়া ছবিটি নিয়ে আরেকটা নতুন তথ্য দিলেন হৃদয়। ঐ ছবিতে সামনে থাকা মেয়েটিও তাঁর সহপাঠী, একইসাথে কোচিং ও ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন তারা।
অন্যদের জন্য তাঁর পরামর্শ-‘আমাদের জীবনটা খুবই ছোট। তাই যে কোন প্রতিবন্ধকতায় আপসেট না হয়ে, যে অবস্থায় থাকি না কেন সেখান থেকে উন্নতির চেষ্টা করা উচিত। আর চেষ্টা করলে অবশ্যই সেটা ভালো কিছু বয়ে আনবে। যারা প্রতিবন্ধী তারা হতাশ হবে না। তোমরা চেষ্টা কর, নিশ্চয় সফল হবে।’